বাংলাদেশ ও ভারতসহ বাঘের বসবাস এমন দেশগুলোতে বাঘের বংশ বৃদ্ধির অংঙ্গিকারের মধ্য দিয়ে শুক্রবার বিশ্ব বাঘ দিবস পালিত হয়েছে। বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশে ২০১৯ সালের ২২ মে সর্বশেষ ক্যামেরা ট্রাকিং জরিপে সুন্দরবনে ১১৪টি বাঘ রয়েছে। এর আগের বাঘ জরিপে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘ ছিল ১০৬টি। এ নিয়ে সুন্দরবনে ১০ বছরে বাঘ বেড়েছে ৮টি। জলবায়ু পরিবর্তন ও চোরা শিকারীদের দৌরাত্বে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাঘ এখনো সুন্দরবনে নিরাপদ নয়। সুন্দরবনে চোরা শিকারি পাশাপাশি বাঘের আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হবার কারনে হুমকির মুখে রয়েছে বাঘ। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বাড়ছে সমদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। এ অবস্থায় হারিয়ে যেতে পারে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ২০৭০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বাঘের জন্য কোনো উপযুক্ত জায়গা থাকবে না। কেননা, বিশ্বের তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধিসহ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সুন্দরবনে টিকে থাকা কয়েক শত বাঘ বিলীন হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এই অবস্থায় সুন্দরবনে বাঘের আবাসভূমি এখন চরম হুমকির মুখে পড়েছে। এই অবস্থার মধ্যে ‘বাঘ আমাদের অহঙ্কার, রক্ষার দায়িত্ব সবার’ এই প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে শুক্রবার বিশ্ব বাঘ দিবস পালন করেছে সুন্দরবন বিভাগ।
ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবনের বাংলাদেশের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার অংশে ২০০১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৫২টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্বাভাবিক ভাবে মারা গেছে মাত্র ১২টি। লোকালয়ে ঢুকে পড়া ১৪টি বাঘকে পিটিয়ে মেরেছে স্থানীয় জনতা, একটি মারা গেছে ২০০৭ সালের সুপার সাইক্লোন সিডরে ও বাকী ২৫ বাঘ হত্যা করেছে চোরা শিকারীরা। অধিক মুনাফার আশায় বাঘের অঙ্গ-প্রতঙ্গ, চামড়া, হাড়, দাত, নখ পাচার ছিল নিত্য দিনের ঘটনা। আর এটি দেশ ও দেশের বাইরে চলে যেত চোরকারবারী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত সুন্দরবন ও লোকালয়ে বাঘের হামলায় ২ শতাধিক মানুষ মারা যায় ও প্রায় এক শত জেলে-বনজীবী আহত হয়েছে বলে বন বিভাগ সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তবে, সুন্দরবন বিভাগ বলছে, বর্তমানে সুন্দরবন সুরক্ষাসহ বাঘের প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ অবাধ চলাচলের জন্য গোটা সুন্দরবনের আয়তনের ২৩ ভাগ থেকে ৫১ ভাগ এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। বাঘের সংখ্যা বাড়াতে তাদের বিচরন ও প্রজনন নিবিঘ্ন করতে প্রজনন মৌসুমের ৩ মাস পর্যটনসহ সব ধরনের বনজীবী সুন্দরবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ। বর্তমানে সুন্দরবন পাহারায় স্মার্ট প্রেট্রোলিং টিম কাজ করছে । এতে করে বাঘের প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ বাঘ অবাধ চলাচলের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বাঘ দিবসে বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোংলায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিশ্ব বাঘ দিবস পালিত হয়েছে। মোংলায় বাঘ ও বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবন রক্ষার দাবীতে র্যালী, আলোচনা সভা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। সকালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মিলনায়তনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা হয়।
অন্যদিকে দিবসটি উপলক্ষ্যে শুক্রবার সকালে সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলা বাজারের র্যালী ও আলোচনা সভা করেছে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ। স্থানীয় ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নুর ই আলম সিদ্দিকী, শরনখোলা থানার অফিসার ইন চার্জ মোঃ ইকরাম হোসেন, সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো, মোজাম্মেল হোসেন, শরনখোলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ইসমাইল হোসেন লিটন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিলন, সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সহসভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ আকন, শরণখোলা ষ্টেশন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে সুন্দরবন সুরক্ষা সহ-ব্যাবস্থাপনা কমিটি, বাঘ বন্ধু, ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম (ভিটিআরটি), কমিউনিটি পেট্রোরালিং গ্রুপ (সিপিজি), স্থানীয় পিপলস ফোরাম ও সুন্দরবনের উপর নির্ভশীল বনজীবিরা উপস্থিত ছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/এএ