২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৩:৪৯

বগুড়ায় প্রস্তুত ৬৭৯ মণ্ডপ, মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষ শুরু

আাবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় প্রস্তুত ৬৭৯ মণ্ডপ, মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষ শুরু

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা। প্রকৃতিতে শরৎ আসার সঙ্গে সঙ্গেই বাঙালির জীবনে বেজে উঠে উৎসবের ডাক। মহালয়ার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে দেবীপক্ষ। শ্রী শ্রী চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। আর এই চণ্ডীতেই আছে দেবী দুর্গার সৃষ্টির বর্ণনা। শারদীয় দুর্গা পূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো এই মহালয়া। 

পুরাণমতে, এদিনই দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। এ দিন থেকেই দুর্গা পূজার দিন গণনা শুরু হয়। মহালয়া মানেই আর ৬ দিনের প্রতীক্ষা মায়ের পূজার। আর এই দিনেই দেবীর চক্ষুদান করা হয়। ১ অক্টোবর থেকে ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে দুর্গা পূজা শুরু হলেও মূলত আজ থেকেই পূজার্থীরা দুর্গা পূজার আগমণ ধ্বনি শুনতে পাবেন। দুর্গা পূজার এই সূচনার দিনটি সারাদেশে বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপন হবে। 

মহালয়া উপলক্ষে বগুড়ায় মন্দিরে মন্দিরে চলছে নানা আয়োজন। যার মাধ্যমে বাঙালির আবহমানকালের উৎসবের আমেজ রূপ নিতে শুরু করেছে। মৃৎশিল্পীদের হাতের জাদুতে রঙ-তুলিতে ফুটে উঠছে প্রতিমার সৌন্দর্য। মৃৎশিল্পীদের পাশাপাশি ডেকোরেটর মিস্ত্রিরাও পূজা মণ্ডপের গেইট, প্যানেল ও লাইটিংয়ের কাজে ভীষণ ব্যস্ত। পূজা মণ্ডপে ভক্ত এবং দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় থাকছে পুলিশের কঠোর নজরদারি।

বগুড়া দত্তবাড়ি মন্দিরে কাজ করছেন ফরিদপুরের প্রতিমা শিল্পী শ্রী জগা পাল। তিনি জানান, তার বাবার কাছেই প্রতিমা তৈরির কাজ শেখা। সেই থেকে গত ৩৫ বছর ধরে এই মন্দিরে প্রতিমা বানানোর কাজ করছেন তিনি। 

তিনি বলেন, মায়ের কাজ করতে খুব ভালো লাগে। এখানে টাকা-পয়সার হিসেব মূখ্য না। মায়ের রুপ অন্তরে ধারণ করে কাজ করি। পূজার এ সময়টাতে হাজার পরিশ্রমেও ক্লান্তি নেই। এ বছর বগুড়ায় ১২টি উপজেলায় ৬৭৯ মণ্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ১৫০টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ, ২৪০টি গুরুত্বপূর্ণ ও ২৮৯টি সাধারণ। শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে দুর্গোৎসব সম্পন্ন করতে পুলিশের পক্ষ ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আগামী পহেলা অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে এবারের দুর্গা পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। সে হিসাবে ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে শেষ হবে এবাবের দুর্গোৎসব। এ বছর দেবী দুর্গা আসছেন গজে (হাতি) চড়ে, যাবেন নৌকায় চড়ে।

বগুড়া পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তরুন কুমার চক্রবর্তী জানান, দুর্গা পূজা উপলক্ষে তার ওয়ার্ডে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রতিটি মন্দিরে নিরাপত্তা জোরদার করতে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবীরাও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে। 

বগুড়া পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, দুর্গা পূজায় যে কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা প্রতিরোধে বগুড়ায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ মন্দিরের তালিকা করে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও পূজা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে পালন করতে মাঠে সবাই মিলে একত্রে কাজ করবে বলে তিনি জানান।

বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক জানান, সম্প্রতির দেশ বাংলাদেশ। এখানে সকল ধর্মের মানুষ সহবস্থান করেন। সকলেই আমরা সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। শারদীয় উৎসব যেন বগুড়ায় শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয় সে বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। একাধিক বৈঠক করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। টহল পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হবে। যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর