মাদারীপুরে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলার ১৯ বছর পরে ৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। মাদারীপুরের চাঞ্চল্যকর আব্দুর রাজ্জাক হত্যা মামলায় বুধবার বিকেলে মাদারীপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক লায়লাতুল ফেরদৌস এই আদেশ দেন। এসময় অপরাধ প্রমানিত না হওয়ায় হত্যা মামলায় ৫ জন আসামিকে খালাস প্রদান করা হয়েছে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬ আসামিকে ৫০ হাজার করে অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়। এই মামলা চলকালেই প্রধান অভিযুক্ত আসামিসহ ৫ আসামি র্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে মারা গেছে। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হলো, মাজারুল ইসলাম মজনু (৫০), মাছিম শেখ (৪৮), জসিম শেখ (৪৫)। যাবজ্জীবনপ্রাপ্তরা হলো, হোসেন হাওলাদার (৬০), মনজুর আলী (৫৬), সাইদুর হোসেন হাওলাদার (৫২), সূর্য মাতুব্বর (৫৫), ফয়েজ শেখ (৫৮), সুজাল মাতুব্বর (৬০)।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, রাজ্জাক হাওলাদারের ভাই মজিবুর রহমান হাওলাদারের সাথে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিরখাড়া ইউনিয়নের সর্বহারা পার্টির নেতা লুৎফর রহমান খালাসির সাথে দ্বন্দ্ব ছিলো। এর জের ধরেই ২০০৩ সালের ১৯ অক্টোবর মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের পুরাতন রাজার হাট বাজারে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় একই এলাকার রাজ্জাক হাওলাদারকে। সর্বহারা পার্টির নেতা লুৎফর খালাসী ও তার সমর্থকরা পরে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পরের দিন ২০ অক্টোবর নিহতের স্ত্রী সেলিনা খানম বাদী হয়ে ২০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে এ ঘটনায় গত ২০০৫ সালের ৩ নভেম্বর মাদারীপুর সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিজানুর রহমান ১৯ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করে। পরে বাদীপক্ষ মামলায় নারাজি দিলে আরো ৩ জনকে আসামি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এসময় বিচারকাজ চলাকালেই সর্বহারা পার্টির নেতা লুৎফর খালসি ও তার আপন দুই ভাই খায়রুল খালাসি ও ওবায়দুর খালাসি এবং ছায়াত মাতুব্বর ও মহাসিন হাওলাদা র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় এবং আরো ৩ আসামি স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করে। ১৯ বছর বিচারিক কার্যক্রম শেষে বুধবার বিকেলে রাজ্জাক হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করে আদালত।
মামলার বাদী সেলিনা খানম বলেন, আজকের রায়ে আমরা খুশি। এই রায় যেন উচ্চ আদালত বলবৎ রাখে এবং দ্রুত এই রায় কার্যকর করে।
মাদারীপুর জজ কোর্টে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. সিদ্দিকুর রহমান সিংহ বলেন, রাজ্জাক হাওলাদার হত্যা মামলায় দীর্ঘ ১৯ বছর যুক্তিতর্ক শেষে আদালত এই মামলার ৩ জনের ফাঁসি, ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেন। তিনি আরও জানান, মামলা চলাকালেই প্রতিপক্ষ সর্বহারা পার্টির নেতা লুৎফর খালাসি এবং তার আপন দুই ভাইসহ মোট ৫ আসামী র্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে মারা যায়। তাই এরা শাস্তির আওতায় আসেনি। তবে এদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ে সন্তুষ্ট। তবে আসামী পক্ষের আইনজীবি জাফর আলি মিয়া দাবী করেন আসামীরা ন্যায় বিচার পায়নি। তাই তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
বিডি প্রতিদিন/এএ