ফেনীর পরশুরামের বাঁশপদুয়া সীমান্ত এলাকা বিএসএফের গুলিতে নিহত মেজবাহ উদ্দিনের মরদেহ সাতদিন পরও ফেরত দেয়নি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। মেজবাহ উদ্দিনের মরদেহ ফেরত পেতে সাতদিন ধরে ভারতের কাঁটাতারের বেড়ার দিকে চেয়ে আছে মেজবাহর স্ত্রী সন্তানসহ স্বজনরা।
গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে গ্রামবাসী, বিজিবি, পুলিশ, গণ-মাধ্যম কর্মীসহ অসংখ্য লোকজন শনিবার বিকেল পর্যন্ত অধীর আগ্রহে বসে ছিলেন সীমান্তবর্তী বাঁশপদুয়া গ্রামে। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে লাশ ফেরত দেয়ার ব্যাপারে পাওয়া যায়নি কোন ধরনের সাড়া।
গত বুধবার ফেনীর পরশুরামের মেজবাহ উদ্দিনের অর্ধ-গলিত লাশ ভারতীয় সীমান্ত রেখার কাঁটাতারের পাশে একশগজ ভিতরে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। ১৬ ঘণ্টা পর বিজিবি-বিএসএফের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বুধবার রাত তিনটার দিকে লাশটি তাদের দেশে নিয়ে যান। পরদিন সকালে লাশ হস্তান্তর করবে বলে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তারা।
এর আগে নিহতের স্ত্রী ও স্থানীয়রা লাশটিকে পরশুরাম উপজেলার উত্তর গুথুমা গ্রামের মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন (৪৭) এর বলে শনাক্ত করেন। তিনি পরশুরাম পৌর এলাকার উত্তর গুথুমা গ্রামের মৃত মফিজুর রহমানের ছেলে। পেশায় একজন কৃষক। লাশ দেখার চারদিন আগে বিএসএফ তাকে বাংলাদেশ থেকে ধরে নিয়ে যায় বলে তার পরিবার পুলিশ ও বিজিবিকে অবহিত করেছিলেন।
ফেনীর ৪ বিজিবির অধীন পরশুরামের গুথুমা সীমান্ত ফাঁড়ি সূত্র জানায়, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী (বিএসএফ) কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ ও পতাকা বৈঠক শেষে বুধবার দিবাগত রাত ৩ টার দিকে বিজিবি ও বিএসএফের সমাঝোতার পর ভারতের সীমারেখার মধ্যে থাকা লাশটি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নিয়ে যায়। পরদিন বৃহস্পতিবার লাশ হস্তান্তর করবে বলে বৈঠকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো তারা। তবে এখনো লাশ ফেরত দেয়নি। পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে গুথুমা সীমান্ত ফাঁড়ির কমান্ডার সুবেদার ওমর ফারুক ও ভারতের পক্ষে ত্রিপুরার শাড়াসিয়া সীমান্ত ফাঁড়ির কমান্ডার সত্য পাল উপস্থিত ছিলেন।
বিজিবি জানায়, ভারতের সীমানার অংশে থাকা লাশটি তারা নিয়ে গেলেও ওই দেশের আইন অনুযায়ী ময়নাতদন্তের পর আনুষ্ঠিকতা শেষে মেসবাহ উদ্দিনের লাশটি ফেরত দেওয়ার কথাও হয়েছে। বৈঠকে বিজিবি-বিএসএফ ছাড়াও স্থানীয় পুলিশ উপস্থিত ছিলেন।
পরশুরাম পৌরসভার স্থানীয় কাউন্সিলর নিজাম উদ্দিন সুমন বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সারারাত এবং শুক্রবার, শনিবারও সারাদিন অসংখ্য লোকজন সীমান্ত এলাকায় বসে আছে মেজবাহ উদ্দিনের মরদেহ ফেরত পেতে। ভারতীয় বিএসএফের পক্ষ থেকে কোন তৎপরতা এখনও দেখা যাচ্ছেনা। মেজবাহ উদ্দিনের অবুঝ তিন কন্যা সন্তান, স্ত্রী ও স্বজনদের কান্নায় এলাকায় এক আবেগ ঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
ফেনীর ৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল এ কে এম আরিফুল ইসলাম জানান, ময়নাতদন্ত শেষে আনুষ্ঠানিকতা শেষে লাশ হস্তান্তরের কথা রয়েছে। সম্ভবত তারা আইনী পক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে পারেনি। বুধবার রাতে দুই পক্ষের পতাকা বৈঠক শেষে সমঝোতার মাধ্যমে বিএসএফ লাশ নিয়ে গেছে। তবে আনুষ্ঠানিকতা শেষে আবার ফেরত দেওয়ার কথাও হয়েছে। তিনি জানান, একজন বাংলাদেশির লাশ সীমান্তের শূন্য রেখার ভারতীয় অংশে পড়ে থাকতে দেখে তাদের সাথে যোগাযোগের পর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
অপর দিকে স্থানীয় লোকজনের উদ্ধৃতি দিয়ে নিহত মোহাম্মদ মেজবাহারের স্ত্রী রহিমা বেগম অভিযোগ করেন, গত ১৩ নভেম্বর রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিনের বাঁশপদুয়া গ্রামের ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় ধান কাটতে যায়। এ সময় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী (বিএসএফ) বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। বিষয়টি এলাকার লোকজন স্থানীয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সীমান্ত ফাঁড়ি ও পরশুরাম থানা পুলিশকে মৌখিক ভাবে অবহিত করা হলেও কোন কাজ হয়নি।
পরশুরাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) পার্থ প্রতিম দেব বলেন, হয়তো তারা এখনো আইনি পক্রিয়া শেষ করতে পারেনি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল