বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। গত কয়েক দিনে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় খেটে খাওয়া মানুষগুলো কষ্টে দিনযাপন করছেন। বগুড়ায় শৈত্য প্রবাহে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলছে। এতে জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। সেই সাথে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঘনকুয়াশার কারণে সড়কে দূরপাল্লার যান চলাচলে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। যানবাহনগুলো দিনের বেলায় আলো জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। সারাদিনই প্রায় সূর্যের দেখা মিলছে না। এর ফলে দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষগুলো জুবুথুবু হয়ে পড়েছেন। দিনের বেলাও থাকছে প্রচন্ডশীত। শীতের প্রকোপে সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে শহরের মানুষ বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। বগুড়াসহ জেলার অন্যান্য উপজেলাগুলোতে দুপুর পর্যন্ত থাকছে কুয়াশায় আচ্ছন্ন। ঘনকুয়াশা থাকায় প্রতিদিন তাপমাত্রা নেমে যাচ্ছে নিচের দিকে।
বগুড়া স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে জেলা মিলিয়ে শীতজনিত কারণে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ জন করে রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
বগুড়া জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, বগুড়ায় শীতের প্রকোপ সবে মাত্র বেড়েছে। শীত এতদিন কম ছিল। যে কারণে শীতজনতি রোগীর সংখ্যা খুবই কম। শীত বেড়ে যাওযার কারণে জেলার সকল হাসপাতাল মিলিয়ে ৩০ থেকে ৫৫ জন করে রোগী পাওয়া যাচ্ছে। চিকিৎসা পাওয়ার কারণে ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে রোগী আবার সুস্থ হয়ে বাড়ি যাচ্ছে।
জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৫ জন ডায়রিয়ায় এবং ৭ জন শিশু ও বৃদ্ধ শ্বাস কষ্টজনিত রোগে হাসপতালে ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে আরো প্রায় অর্ধশত ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, হঠাৎ করেই বগুড়ায় তীব্র শী দেখা দিয়েছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা প্রদানের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া আছে। রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ। তবে এখনো সে হারে রোগী আসছে না। প্রতিদিন গড়ে বর্হিবিভাগ মিলিয়ে ১২ থেকে ১৫ জন রোগী আসছেন চিকিৎসা নিতে। এদের কেউ কেউ আবার প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছে।
এদিকে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় বগুড়া জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে প্রায় ২ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম সপ্তাহ জুড়ে এসব কম্বল বিতরণ করেন। শহরের রেলস্টেশন, বিভিন্ন পার্ক ও রাস্তার ধারে বসবাসরত ছিন্নমূল মানুষদের মাঝে এই কম্বলগুলো বিতরণ করা হয়। কম্বল বিতরণে উপস্থিত ছিলেন জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাবৃন্দ।
বগুড়া রেলস্টেশনে থাকা জমির মিয়া জানান, গত কয়েক দিন হলো বগুড়ায় প্রচন্ড ঠান্ড পড়েছে। আমরা কখনও রেস্টেশনে আবার কখনো ফুটপাতে রাত্রিযাপন করি। শীত বেড়ে যাওয়ায় অনেক কষ্টে আছি। রাতে ঠান্ডা বাতাসে ঘুমানো যায় না। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কম্বল পেয়েছি। সেটা গায়ে দিনে কোন রকম থাকছি। তবে শীত যদি আরো বেড়ে যায় তাহলে আমরা যারা রেলস্টেশনে থাকি তাদের কষ্টও বেড়ে যাবে।
বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সামির হোসেন মিশু জানান, শীতের কারণে মানুষের নিউমোনিয়া, সর্দ্দি, জ্বর, কাশি, আমাশয় রোগ দেখা দিতে পারে। এজন্য সাধারণ নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এসব রোগে ইতিমধ্যে ঠান্ডা রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসছেন। সাধ্যানুযায়ি তাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল