নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘আমার বাবা ১৯৭৯ সালে জাতীয় নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু ব্যালট বাক্স দিনের বেলায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল থানাগুলোতে। এখন অনেকে বলে রাতের ভোট। কিসের রাতের ভোট। দিনের বেলাইতো আপনারা ছিনতাই করেছিলেন ভোট।’
‘দিনের বেলাইতো ভোট নিয়ে আপনারা থানা থেকে ঘোষণা দিয়েছেন। কে আপনাদের নির্বাচিত হবে ধানের শীষে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এখন আবার এ সমস্ত কথা কেন বলেন। আওয়ামী লীগ এখন অনেক জনপ্রিয়। হাজারো কাজ করেছে। যদি এত কাজ দেখে মা-বোনেরা ভোট না দেন। কী জবাব দেবেন জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে। কী জবাব দেবেন আল্লাহর কাছে।’
শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের উপজেলা পাবলিক হল চত্বরে লোক সাংস্কৃতিক উৎসব উদযাপন ২০২৩ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মেয়র আইভী বলেন, ‘আমরা যারা দল করি আমরা সবাই শেখ হাসিনার উন্নয়নের কথা জানি। কিন্ত আমরা অনেক সময় বলি না। এই বলার কাজটা আপনাদের দায়িত্ব নিতে হবে। এত কিছু করার পরও আমাদের বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশে যে ষড়যন্ত্র, সে ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে আপনাকে-আমাকে সকলকে। এই ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার বড় একটি হাতিয়ার হলো সাংস্কৃতিক অঙ্গন। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে গানটি গাইলে শরীর এখনো শিউরে ওঠে। সাংস্কৃতিক রেভুলেশন আমাদের অনেকটা কমে গেছে। সাংস্কৃতির বিকল্প আমাদের নেই।’
তিনি বলেন, ‘এই গ্রামবাংলায় একতারা বাজাইওনা দোতারা বাজাইও না গানটা শুনুন। হিন্দু, বোদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলমান আমরা সবাই গান গাইতাম। এই জিনিসগুলোকে আমাদের ফিরিয়ে আনতে হলে ছাত্রলীগ, যুবলীগকে প্রচণ্ডভাবে কাজ করতে হবে। টাকা টাকা চিন্তা করলে কিছুই দিতে পারবেন না, না দলকে না দেশকে না কাউকে। রুখে যেমন দাঁড়াতে হবে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে তদ্রুপভাবে অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে, তদ্রুপ আওয়ামী লীগের অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে। নৌকার বিরুদ্ধে যারা কথা বলে, এই নৌকাতো আজকের নৌকা না। এই নৌকাকে ডোবানো এত সহজ নয়।’
সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘অনেকে জয় বাংলা বলতে চায় না? কেন বলতে চায় না। কারণ, তারা স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না, বিশ্বাস করে না মুক্তিযুদ্ধকে, বিশ্বাস করে না বঙ্গবন্ধুকে। এখনো তারা পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখে। পাকিস্তানের দোসররাই জয় বাংলা স্লোগান বলতে চায় না। কারণ, জয় বাংলা স্লোগান আপনার ভেতর যে স্পিরিট আসবে, যে সাহস আসবে, যে অনুভূতি আসবে, সেটা অন্য কোনো স্লোগানে আসে না। সুতারাং এই স্লোগান দিয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এমন কোনো ডিস্ট্রিক নেই যেখানে এমপি মহোদয়রা কাজ করেননাই। এমন কোনো উপজেলা নেই যেখানে উপজেলা চেয়ারম্যানরা কাজ করেননাই। তাহলে কেন এই এন্টি সেন্টিমেন্ট, এন্টি আওয়ামী লীগ সেন্টিমেন্ট। কারণ, আমাদের বিরুদ্ধে সব সময়ই ছিল ইন্ট্রারন্যাশনাল ষড়যন্ত্র।’
মেয়র আইভী বলেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে গর্ববোধ করি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা,বিশ্বাস নিয়েই রাজনীতিতে এসেছি। আমরা কেন জানি বাঙালির আবহমান ঐতিহ্য থেকে দূরে যাচ্ছি। আমরা মনে করি পাশ কাটিয়ে অল্প কিছু করেই যেন আল্লাহ কে পেয়ে যাব। আল্লাহ কে পাওয়া এত সোজা কথা নয়। আল্লাহ কে পেতে হলে মানুষকে ভালোবাসতে হবে,মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। আর যে মানুষের কল্যাণে কাজ করে সেই তার আল্লাহ কে পায়, সে তার খোদাকে পায়। মানুষকে সেবা করার মাধ্যম হলো রাজনীতি। রাজনীতি এমন একটা জিনিস যেখানে আপনি আপনার দেশের জন্য কাজ করতে পারেন, মানুষের জন্য কাজ করতে পারেন, আপনার এলাকার জন্য কাজ করতে পারেন। সেই রাজনীতি হতে হবে সঠিক রাজনীতি।’
এর আগে, একই দিন লোক সাংস্কৃতিক উৎসব উদযাপন পরিষদ বেগমগঞ্জ শাখার উদ্যোগে উপজেলার পাবলিক হল চত্বরে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ।
চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নোয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়রম্যান এবিএম জাফর উল্যাহ, বেগমগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহনাজ বেগম, বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়াসীর আরাফাত প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ