২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ২০:১৯

গাজীপুরে রবিউল হত্যায় গ্রেফতার ৩

গাজীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুরে রবিউল হত্যায় গ্রেফতার ৩

গাজীপুরে প্রতিবেশীর বিবাহিত মেয়েকে উত্যক্ত করায় গলায় রশি পেঁচিয়ে ও মারধর করে এক গার্মেন্ট কর্মীকে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রাখে ওই নারীর বাবা ও তার সহযোগীরা। প্রায় আড়াই বছর পর ক্লুলেস এ ঘটনায় ওই নারীর বাবাসহ ৩ জনকে গ্রেফতার এবং রহস্য উন্মোচন করেছে গাজীপুরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বুধবার বিকেলে গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন। 

গ্রেফতারকৃতরা হলো পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার চাকামহিয়া এলাকার আ: বারেক হাওলাদারের ছেলে সোহেল হাওলাদার (২৭), বগুড়ার সোনাতলা থানার পাঠানপাড়া এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে এবং সোহেলের ভাগ্নে রতন মিয়া (২৫) ও একই এলাকার মৃত ছামেদ আলী প্ররামানিকের ছেলে ইস্রাফিল (৪০)। এদের মধ্যে ইস্রাফিল ওই নারী টিয়ার বাবা এবং রতনের চাচাতো ভাই। 

পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর থানাধীন এনায়েতপুর এলাকার জনৈক দুলালের বাড়ীতে ভাড়া থেকে স্থানীয় পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন হামিদুল ইসলাম ওরফে রবিউল (২০) ও তার মা হামিদা। রবিউল বগুড়ার সোনাতলা থানার দিগদাইড় এলাকার ইমদাদুল হকের ছেলে। ২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে ঘুমন্ত মাকে বাসায় রেখে মোবাইলে গেম খেলার জন্য পার্শ্ববর্তী অটোরিক্সার গ্যারেজে যায় রবিউল। রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঘুম ভেঙে গেলে ছেলেকে দেখতে না পেয়ে তার খোঁজে ওই গ্যারেজে যান হামিদা। এসময় তিনি গ্যারেজের বাঁশের আড়ার সঙ্গে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় রবিউলের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় কাশিমপুর থানায় অপমৃত্যু মামলা করেন হামিদা। পরবর্তীতে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে এটি একটি হত্যাকাণ্ড বলে মতামত প্রদান করেন ডাক্তার। এর প্রেক্ষিতে ক্ললেস এ ঘটনায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করেন এস আই মোশারফ হোসেন। প্রায় ১০ মাস তদন্ত শেষে মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করতে না পেরে কাশিমপুর থানায় চূড়ান্ত রিপোর্ট ‘সত্য’ আদালতে দাখিল করেন। আদালত চূড়ান্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি পিবিআই গাজীপুর জেলাকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। 

পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা দীর্ঘ সময় তদন্তের পর রবিউল হত্যায় জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সোহেল, রতন ও ইস্রাফিলকে গ্রেফতার করেন। তারা হত্যার কথা স্বীকার করে ঘটনার সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে গাজীপুর আদালতে ১৬৪ ধারায় বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এর প্রেক্ষিতে ঘটনার প্রায় আড়াই বছর পর গার্মেন্ট কর্মী হামিদুল ইসলাম ওরফে রবিউল হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই।
 
তিনি গ্রেফতারকৃতদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, গাজীপুরের কাশিমপুর থানাধীন পূর্ব এনায়েতপুর এলাকায় একই বাড়িতে পাশাপাশি কক্ষে সপরিবারে বসবাস করতো আসামি ইস্রাফিল, রতন, সোহেল ও ভিকটিম রবিউল। ইস্রাফিলের বিবাহিত কন্যা টিয়াকে বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করতো ভিকটিম রবিউল। বিষয়টি জানাজানি হলে দুই পরিবারের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। নিষেধ করলেও টিয়াকে উত্যক্ত করা থেকে নিবৃত হয়নি রবিউল। এতে কন্যার সংসারে অশান্তির কথা ভেবে প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয় ইস্রাফিল। একপর্যায়ে রবিউলকে হত্যা না করলে টিয়ার সংসার টিকবেনা ভেবে তাকে (রবিউল) হত্যার পরিকল্পনা করে ইস্রাফিল ও তার সহযোগী সোহেল, রতনসহ অন্যান্যরা। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা স্থানীয় সবুজ কানন কাঁচা বাজারের একটি দোকান থেকে রশি কিনে আনে। ঘটনার রাত ১২টার দিকে তারা ওই গ্যারেজে ঢুকে রবিউলকে গেম খেলতে দেখেন। এসময় তারা রবিউলের গলায় রশি পেঁচিয়ে ও গলা টিপে শ্বাসরোধ করে মারপিট করতে থাকে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। পরে রবিউলের লাশ গ্যারেজের আঁড়ার সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এবং ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে প্রচার চালায় বলে গ্রেফতারকৃতরা স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/এএ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর