৯ মার্চ, ২০২৩ ২১:৫৫

বগুড়ায় ধান সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া:

বগুড়ায় ধান সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি

চলতি আমন সংগ্রহ মৌসুমে বগুড়ায় চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। যেসব মিলাররা চাল দেওয়ার চুক্তি করেও চাল দেয়নি তাদেরও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে খাদ্য বিভাগ। সংগ্রহ অভিযান ৭ মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়েও ধানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।

বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্র জানায়, আমন মৌসুমে ১৭ নভেম্বর থেকে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। আমন মৌসুমে ২৮ টাকা কেজি দরে ধান ও ৪২ টাকা কেজি দরে চাল কেনার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক চলতি আমন সংগ্রহ মৌসুমে জেলায় কৃষকদের কাছ থেকে ১০ হাজার ২২২ মেট্রিক টন ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর জেলায় ১ হাজার ১২০ জন মিলারের মধ্যে ৬৮৯ জন চালকল মালিক ২০ হাজার ৯৮৫ মেট্রিক টন চাল সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। চাল সরবরাহে চুক্তি করেননি ৪৩১ জন মিলার। চাল কেনার জন্য চুক্তি না করায় তাদের খাদ্য বিভাগ থেকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছে। ৭ মার্চ শেষ দিন পর্যন্ত চুক্তির প্রায় ১৯ হাজার ৫২০ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করেছেন মিলাররা। ১ হাজার ৪৬৫ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করেনি মিলাররা। বেশ কয়েকজন মিলার চুক্তি করেও চাল সরবরাহ করেনি। আর কৃষকরা কোন ধানই দেননি। তবে ধান কেনার উদ্বোধন উপলক্ষে সরাসরি একটন ধান কেনে খাদ্য বিভাগ।
বগুড়া জেলা খাদ্য বিভাগ জানায়, জেলার ১২টি উপজেলায় কৃষি অ্যাপের মাধ্যমে ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে ধান কেনার কথা। জেলায় নিবন্ধনকৃত ৬৩ হাজার ১৫১ জন কৃষকের মধ্যে অ্যাপসের মাধ্যমে ধান দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন ৭ হাজার ৪৮৫ জন। এর মধ্যে লটারি করে ২ হাজার ৬৬ জনকে বাছাই করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে (২৮ ফেব্রুয়ারী) এসব কৃষকের কেউ এক ছটাক ধান বিক্রি করেনি সরকারি খাদ্য গুদামে। এরপর সময় বাড়িয়ে ৭ মার্চ সংগ্রহ অভিযানের শেষ দিন ঘোষণা করা হয়। সেখানেও ধান সংগ্রহ হয়নি। ধান- কেনার শুরুর সময়ে জেলার হাটবাজারে মোটা ধান ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা এবং চিকন ধান ১ হাজার ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত মণ দরে বিক্রি হয়েছে। সরকারি দাম ছিল ১ হাজার ১২০ টাকা মণ। সে কারণে কৃষকরা সরকারি ঘরে ধান দিতে আগ্রহী ছিল না।

বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে খাদ্য বিভাগ সরকারি তালিকাভুক্ত ২১৪ টি হাসকিং ও ১৩ টি অটো রাইচ মিল থেকে ৫ হাজার ৮৭ মেট্রিক টন চাল এবং কৃষকদের কাছ থেকে ৬৪৯ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুপচাঁচিয়া উপজেলার দু’টি খাদ্য গুদামে কোনো ধানই ওঠেনি। আর চাল সংগ্রহ হয়েছে ৩ হাজার ২৩৯ মেট্রিক টন। এতে সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
দুপচাঁচিয়া উপজেলার কাথহালী গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, বাজারে ধান বিক্রি হয়েছে মণ প্রতি ১ হাজার ২৮০টাকা। আর সরকার নির্ধারিত মূল্য ১ হাজার ১২০ টাকা। দামের এ ফারাকের জন্য গুদামে ধান দেয়া হয়নি। তাছাড়া গুদামে ধান দিতে গেলে অনেক নিয়ম কানুন মানতে হয়। এটা কৃষকদের জন্য ঝামেলা। এ কারণে কৃষকরা সরকারি গুদামে ধান দিতে আগ্রহী ছিলো না।

বগুড়ার কাহালু উপজেলার প্রতাপপুর গ্রামের আব্দুল বাছেদ জানান, চরতি মৌসুমে হাটে বাজারে ধানের দাম বেশি ছিল। হাটে একমন ধান বিক্রি হয়েছে ১২শ’ থেকে ১৩শ’ টাকা। সরকারিভাবে সেখানে দাম কম ছিলো। গুদামে ধান বিক্রিতে ঝামেলা হয়। হাটে বাজারে ধান বিক্রিতে ঝামেলা নেই। এ জন্য গুদামে ধান বিক্রি অনেকেই করেনি। 

দুপচাঁচিয়া উপজেলা চাল কল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমন মৌসুমের শুরু থেকেই ধানের দাম বেশি হওয়ায় ধান কিনে চাতালে সিদ্ধ করে শুকিয়ে মিলে ভেঙ্গে সার্টার করে চাল গুদামে সরবরাহ করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ লোকসানের ভয়ে অনেক মিলার সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েও চাল দেয় নি। তবে মিলের লাইসেন্স টিকাতে বাধ্য হয়ে কোনো কোনো মিলার চাল দিয়েছেন। 

বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দিন জানান, চলতি আমন সংগ্রহ অভিযানে সরকারিভাবে ধানের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তার চেয়ে অনেক বেশি দামে ধান বেচাকেনা হয়েছে এবং হচ্ছে। এ কারণে খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহ করতে কৃষক আগ্রহী হননি। চুক্তিবদ্ধ চালকলের মালিকেরা সিংহভাগ চাল সরবরাহ করেছে। সামান্য কিছু চাল সংগ্রহ হয়নি। সময় থাকলে সেটি কাভার হতো। যেসব লাইসেন্সধারী মিলার চাল দেয়নি তাদের তালিকা করে জেলা খাদ্য অফিস থেকে কারণ দর্শানো নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/এএম

সর্বশেষ খবর