৪২ বছর বয়সে বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ নলুয়া গ্রামের মোসাম্মত শাহিদা ২০২২ সালের ২২ জুন মারা যান। তার স্বামী হাবিব মল্লিক এখনও জীবিত। অথচ শাহিদা বেঁচে থাকাকালিন তার স্বামীকে মৃত দেখিয়ে আড়াই বছর বিধবা ভাতা তুলে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় চেয়ারম্যানের ভাতিজার বিরুদ্ধে। এমনকি শাহিদা মারা যাওয়ার পরও ৬ মাস তার নামে বিধবা ভাতা তুলে আত্মসাত করা হয়। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন মৃত শাহিদার ছেলে শাওন মল্লিক। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।
লিখিত অভিযোগে জানা যায়, দক্ষিণ নলুয়া গ্রামের মোসাম্মত শাহিদার স্বামীকে মৃত দেখিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ভাতিজা রাহাদ খান তার (শাহিদা) নামে বিধবা ভাতা উত্তোলন করে আত্মসাত করে। ২০২২ সালের ২২ জুন শাহিদা মারা যাওয়ার আগে আড়াই বছর এবং মারা যাওয়ার পরও ৬ মাস বিধবা ভাতা (বই নম্বর ৫০) উত্তোলন করে আত্মসাত করেন রাহাদ। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় শাহিদার পরিবার সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়। এ ঘটনা তদন্ত করে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানানো হয় আবেদনে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নলুয়া ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আলম খানের ভাতিজা রাহাদ খান শাহিদার স্বামীকে মৃত দেখিয়ে তার (শাহিদা) নামে বিধবা ভাতা নিজের মোবাইল নম্বরে এনে উত্তোলন করেন।শাহিদার নামে বিধবা ভাতা উত্তোলনের কথা স্বীকার করে রাহাদ খান বলেন, শাহিদার ভাই শওকতের পরামর্শে তার নামে বিধবা ভাতার কার্ড করা হয়। এ পর্যন্ত যে ভাতা উত্তোলন করা হয়েছে তা ৩ বারে শাহিদার ভাই শওকত তার (রাহাদ) কাছ থেকে নিয়ে গেছে। অন্যের বিধবা ভাতা কেনো তার মুঠোঠোনে আসবে সে ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি রাহাদ।
নলুয়া ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার ও বাকেরগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের ফিল্ড সুপারভাইজার ইলিয়াস হোসেন জানান, শাহিদার স্বামীকে মৃত দেখিয়ে শাহিদার নামে বিধবা ভাতা উত্তোলনের বিষয়টি জানার পর গত ৫ মাস আগে ওই কার্ডের ভাতা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
প্রতি ৩ মাস পর একটি বিধবা ভাতা কার্ডে দেড় হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হয় বলে জানান সমাজসেবার ট্যাগ অফিসার ইলিয়াস হোসেন।
ভুয়া বিধবা ভাতার বিষয়টি জানার পর ওই কার্ডটি স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নলুয়া ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আলম খান। তবে ভাতিজার মুঠেফোনে বিধবা ভাতা প্রদানের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
ভুয়া ভাতা উত্তোলন করে আত্মসাতের প্রতিকার এবং অভিযুক্তদের বিচার চেয়ে গত ১১ জানুয়ারী শাহিদার ছেলে শাওন মল্লিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি আবেদন করেন। ওই আবেদনের বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জানতে বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরল চন্দ্র শীলের সরকারি মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও ফোন সিরিভ করেননি তিনি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল