২৭ মে, ২০২৩ ২২:৩১

নরসিংদীতে জোড়া খুনের ঘটনায় স্ত্রীসহ খোকনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার ৩

সঞ্জিত সাহা, নরসিংদী

নরসিংদীতে জোড়া খুনের ঘটনায় স্ত্রীসহ খোকনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার ৩

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী শিরিন সুলতানা

নরসিংদীতে সংঘর্ষে দুই ছাত্রদল নেতা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী শিরিন সুলতানাসহ ৩০ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত ছাত্রনেতা সাদেকুর রহমানের ভাই আলতাফ হোসেন বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় এই হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

এই মামলায় যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুর ৩টার দিকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর মডেল থানার ওসি আবুল কাশেম।

এদিকে জোড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হলেও মামলায় কোনো আসামির নাম উল্লেখ করেননি বলে জানিয়েছেন বাদী আলতাফ হোসেন। থানা পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে মামলায় নাম উল্লেখ করেছেন বলে তিনি জানান। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। 

গ্রেফতারকৃতরা হলেন জেলা যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ, বিএনপি নেতা কামাল হোসের ও রাসেল। 
মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন। অন্যান্য আসামিরা হলেন খোকনের স্ত্রী বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদ, বিএনপির নেতা জায়দুল ইসলাম জাহিদ, ইলিয়াস আলী ভূইয়া, আল-আমিন, তানভির, রবিউল ইসলাম রবি, সোহেল, সাদ্দাম হোসেন ভূইয়া, মো: ওয়ালিদ হোসেন, রিফাত, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রউফ সরকার রনি, সাইফুল ইসলাম ভূইয়া, শামিম সরকার, শহর যুবদলের আহ্বায়ক চৌধুরী সুমন, যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ, রুবেল হাসান, চিনিশপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আওলাদ হোসেন মোল্লা, সজিব, নাজমুল ভূইয়া, গোলজার হোসেন, শহিদুজ্জামান, শাকিল চৌধুরী, হানফ সরকার, আল আমিন ওরফে হাদি, ইমাম মেম্বার, বাবুল খন্দকার, রাসেল মিয়া এবং কামাল হোসেন ভূইয়া। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ৩৫ থেকে ৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বাদী আলতাফ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মামলায় আমি কারো নাম দেয়নি। কারণ আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। ঘটনা আমার বাড়ির সামনে ঘটেনি। আমি ওসি স্যারের সাথে কথা বলছি। বলেছি আপনার তদন্তে যারা পড়ে তাদের নাম দেন। বিনা অপরাধে যেন কেউ মামলায় না পড়ে এই কথা বলে আমি এজহারে সই দিয়ে এসেছি। আমি প্রশাসনের উপর দায়ভার ছেড়ে দিয়েছি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির নেতারা জানায়, বিএনপির অন্তঃকোন্দলের কারণে এই জোড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পর পরই জেলা বিএনপির সর্বোচ্চ পর্যায়ের গুটি কয়েক নেতার স্বার্থ হাসিলের জন্য পদবঞ্চিত নেতাদের উসকিয়ে দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকনের উপর হামলা করার জন্য পদবঞ্চিত নেতাদের লেলিয়ে দেয়া হয়। একই সাথে রাস্তা ঘাট, কোর্ট কাচারিতে হাজিরা দিতে এলে একাধিক খোকন পন্থিদের উপর হামলা  মারপিট করেন পদবঞ্চিতরা। আর এসব করতে পদবঞ্চিত নেতাদের অর্থনৈতিক ও প্রাশাসনিক সহায়তা দিয়েছেন বিএনপির শিল্পপতি এক নেতা। দলে বিবাজন ও অন্তঃকোন্দলে দল ক্ষতিগ্রস্থ হলেও এই নেতা রয়েছেন বহাল তবিয়তে। এমনকি তার নামে মামলাও হয়নি। কারণ তিনি পুলিশের সাথে আতাত করে চলেন।

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন বলেন, বিএনপিকে দমন করতেই এমন মামলা করা হয়েছে। জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি হওয়ার পর থেকে পুলিশের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ও দলীয় কিছু নেতাদের মদদে তারা আমাদের ওপর একের পর এক হামলা চালিয়ে আসছে। এখন তারা নিজেরা নিজেরাই এসব ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে বলছে। 

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আবুল কাশেম জানান, জোড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী বিএনপির কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরো ৩৫-৪০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন নিহত সাদেকুরের ভাই আলতাফ হোসেন। এঘটনায় যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর