ময়মনসিংহের তারাকান্দা থেকে শ্যামগঞ্জের ডেঙ্গার মোড় পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার পাকা সড়কের মধ্যে প্রায় ৯ কিলোমিটারই খানাখন্দে ভরা ও ভেঙে গুঁড়া গুঁড়া অবস্থা। সড়কের পিচ উঠে ইট, সুরকি এবং খোয়াগুলো সরে গেছে। জায়গায় জায়গায় বড় বড় খাদের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও বুঝার উপায় নেই যে, এটা পাকা নাকি কাঁচা সড়ক। তারাকান্দা নতুন বাজার থেকে শ্যামগঞ্জ সড়কে নামতেই চোখে পড়ে একটি বড় গর্ত। যেখানে রিকশা বা অটোরিকশা জাতীয় ছোট গাড়িগুলো মোচড় খেয়ে প্রায়ই রিকশার রিং বেঁকে যায়, শিক ছিঁড়ে যায় বা কখনো কখনো অটোরিকশা উল্টে ঘটে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। শ্যামগঞ্জের দিকে আরেকটু আগ বাড়িয়ে খাটাশিয়া জামে মসজিদের সামনে গেলে ওখানে এত ভাঙা যে ঝাঁকিতে যে কারো কোমড় ব্যথা বা বুকের হাঁড় নড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।
এছাড়া বামণীকোনায়, মূলাবাড়ির সামনে, মূলাবাড়ি বাজার, চিনাপাড়া বাজার, ব্রিজের সামনে, মানিকদী, চারিয়া সড়ক সংলগ্ন খালের পাড়, উসমান আলী ওরফে খেতা শাহ পীরের মাজারের সামনে, কাকুরা বাটি গুছি আয়নল পাগলার মাজারের সামনে, শেখ হাসিনা মহিলা কলেজের সামনে, কাকুরা ফাযিল মাদরাসা, সীমান্তলী বাজার ও রামপুর এলাকায় বহু ভাঙন রয়েছে। কাকুরা পূর্বপাড়ায় পাড় না রেখে ফিশারী দেওয়ায় ভেঙে যাচ্ছে পাকা সড়ক। আরেকটু সামনে সিদ্ধান্তের বাট্টা, খানকায়ে জাহিদিয়া দরবার শরীফ সংলগ্ন, ফরিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে, বাট্টা মিলন বহুমুখী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে, বাট্টা নতুন বাজারে, বাহেলা আল জামিয়া শামছুল উলূম মাদরাসা ও এতিমখানা ও আল জামিয়াতুস সাদিয়া মহিলা মাদরাসার সামনে এবং মনাটি ও ডেঙ্গার মোড়সহ কমপক্ষে ২৫টি স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে সড়কটি বিশেষ করে রোগী, বৃদ্ধ, শিশু ও গর্ভবতী মাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এলাকাবাসী জানান, গত ৪-৫ বছর আগে থেকে এ অবস্থা বিরাজ করছে। সড়কটি সংস্কারের কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় না। বাট্টা মিলন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এত বড় গর্ত হয়েছে যে, অল্প বৃষ্টি হলেই সড়কের মধ্যে ছোটখাটো ডোবার মত মনে হয়। স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদেরকে ওই পথ দিয়ে যাতায়াতের সময় মোটরসাইকেল বা যানবাহন থেকে ছিটকে আসা কাদা পানিতে নাজেহাল হতে হয়। সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে এসব দৃশ্য নজরে পড়ে। এছাড়া ওই সড়কে ছোট বা মাঝারি ধরনের প্রায় ৮-১০টি ব্রিজ রয়েছে। এসব ব্রিজের সামনে বড় বড় খাদের সৃষ্টি হয়েছে। এগুলোতে গাড়ি উঠানামার সময় মোচড় খায়। তখন যাত্রীদের মাথায় রডের আঘাত লাগে। শরীরে বা মাথায় ধাক্কা খেয়ে ব্যথা পান তারা। এমনটিই জানালেন মরিয়ম নামে একজন অটোরিকশার যাত্রী।
সায়েদুর রহমান ও আনিস নামে দুজন সিএনজি চালকের সাথে কথা হলে তারা বলেন, ওই সড়কে যাতায়াতের সময় শরীরে এত ঝাঁকি লাগে যে শরীর ব্যথা হয়ে যায়। বুকের হাড্ডি নড়ে যায়। কয়দিন পর পর গাড়ি ঠিক করতেই যায়গা দেড়-দুই হাজার টাকা করে। বাট্টা মিলন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র জুলহাস বলেন, অটো দিয়ে যাতায়াতের সময় অটো এত কাত হয়ে পড়ে যে, ভয় লাগে। আব্দুর রশিদ মন্ডল নামে কাকুরা গ্রামের একজন মুরুব্বি বলেন, আজ ৪-৫ বছর ধরে রাস্তাডা ভাইঙা রইছে। এইডা মেরামতের কোন উদ্যোগ নাই। মেম্বার-চেয়ারম্যানরারে জানাইয়াও কোন কাজ অয় নাই। একটু বৃষ্টি অইলে ভোগান্তির আর সীমা থাহে না। এসময় সড়কটি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারাকান্দা উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ জোবায়ের হোসেন বলেন, ওই রোডে বিভিন্ন ভাঙনে কিছু কিছু ইট দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তিনি বলেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি এ সড়কটি সংস্কারের জন্য তদবির করছেন। প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আগামী মাসেই টেন্ডার হবে বলে আশা করছি।
বিডি প্রতিদিন/এএ