কিছুতেই থামছে না পাহাড়ে ঝুঁকিতে বসবাস। নতুন করে গড়ে উঠেছে আরও শতাধিক বসতঘর। আসন্ন বর্ষায় পাহাড় ধসের নতুন করে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। কিন্তু তবুও নিরব প্রশাসন। অভিযোগ রয়েছে, উল্ট পাহাড়বাসীর জন্য পানি, বিদ্যুৎ ও সড়কসহ দেওয়া হচ্ছে নানা সুযোগ সুবিধা। এতে ক্ষোভ বাড়ছে সচেতন মহলের।
রাঙামাটি পৌরসভার তথ্য মতে, শুধু রাঙামাটি শহর এলাকায় এক লাখ ২৫ হাজারের অধিক মানুষ পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো হচ্ছে- শহরের শিমুলতলী, নতুন পাড়া, মনতলা, রাঙ্গাপানি, রির্জাভ, এসপি অফিস সংলগ্ন এলাকা, শহীদ আবদুুল আলী একাডেমী সংলগ্ন ঢাল, পুলিশ লাইন সংলগ্ন ঢাল, স্বর্ণটিলা পাহাড়ের ঢাল, রাজমণিপাড়া পাহাড়ের ঢাল, রেডিও স্টেশনের পাশে শিমুলতলী পাহাড়ের ঢাল, লোকনাথ মন্দির পাহাড়ের ঢাল, আনসার ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ের ঢাল, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সংলগ্ন পাহাড়ের ঢাল, চম্পক নগর পাহাড়ের ঢাল, পাবলিক হেলথ পাহাড়ের ঢাল, আমানতবাগ পাহাড়ের ঢাল, মুজিবনগর পাহাড়ের ঢাল এলাকায়।
সরজমিনে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে ১৩ জুন ওই সব পাহাড়ে ভয়াবহ ধসে প্রাণ হারায় ১২০ জন। তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে শহীদ হয় ৫ জন সেনা সদস্য। সে সময় মাটির সাথে বিলিন হয়ে যায় প্রায় ১৭টি পরিবার। প্রতি বছর এ দিনটিকে আতংকের সাথে স্মরণ করে রাঙামাটিবাসী। কিন্তু যে পাহাড় এক সময় মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়েছিল। সে পাহাড় এখন জনবসতিতে ভরপুর।
রাঙামাটি পৌর মেয়র মো. আকবর হোসেন চৌধূরী বলেন, আষাঢ় মাসের মাত্র দুইদিন বাকি। এর আগে শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। যে কোন মুহূতে ঘটতে পারে পাহাড় ধসের ঘটনা। তাই যারা এখনো পাহাড়ের নিচে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে তাদেরকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পৌরসভার পক্ষ থেকে বার বার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।
এরই মধ্যে পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, রাঙামাটি পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে ২৯টি আশ্রয় কেন্দ্র সব সময় প্রস্তুত। পাহাড়ের বাসিন্দাদের সর্তক করতে অব্যাহত আছে মাইকিংও। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো পরিদর্শন করে ৩১টি স্থানে সর্তকতামূলক সাইনবোর্ড আগে থেকে স্থাপন করা আছে। এ বিষয়ে প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। কিন্তু পাহাড়ে যারা বসবাস করে তারা কোন সহযোগিতা করতে চায় না। তারা যেতে চায় না আশ্রয়কেন্দ্রে।
প্রসঙ্গত, রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে সবচেয়ে বড় ধরনের জানমালে ক্ষয়ক্ষতি হয় ২০১৭ সালে ১৩ জুন। সে সময় পাহাড় ধসের ঘটনায় প্রাণ হারায় ১২৮ জন। জেলা প্রশাসনের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়া- রাঙামাটির ১০টি উপজেলা মিলে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৮ হাজার ৫৫৮টি পরিবার। তার মধ্যে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ঘর-বাড়ি হচ্ছে এক হাজার ২৩১টি। আর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৫৩৭টি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে-বন, বিদ্যুৎ, শিল্প কারখানা, মৎস্য খামার, গবাদি পশু. হাঁস মুরগি। এছাড়া ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমিও। যার পরিমাণ ১৮হাজার ৯৯.৩১ হেক্টর। এছাড়া শহর এলাকায় ১৪৫টি স্থানে পাহাড় ধসে মারাত্ম ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিভিন্ন সড়ক। দেশের সব জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রাঙামাটি। মাটির নিচে বিলিন হয়ে যায় ১৭টি পরিবার।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল