ক্রিকেট মাঠটা ভীষণ ব্যস্ত। প্রায়ই নানা টুর্নামেন্ট হচ্ছে। বসুন্ধরা ক্রিকেট নেটওয়ার্কের কার্যক্রম তো আছেই। সবুজ মাঠের এক পাশে দুদিকে খোলা গ্যালারি নিয়ে দোতলা প্যাভিলিয়ন।
আরেকদিকে সুবিশাল ইনডোর। সেটির পাশে আরো বেশ কিছু আউটডোর পিচ। বসুন্ধরা স্পোর্টস সিটির এমন ক্রিকেট অবকাঠামো গোটা দেশেই খুব বেশি নেই। অথচ স্পোর্টস সিটির এটি একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র।
ক্রিকেট মাঠের পরেই ফুটবল স্টেডিয়াম, এরপর দুটি সুইমিংপুলসহ ‘গোল্ড’স জিম,’ ইয়োগা সেন্টার; তার পাশে স্কুল। সাউথ জোনে ২৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট স্টেডিয়াম। পাশে অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক, হকি মাঠসহ আরো বেশ কিছু মাঠ। স্পোর্টস সিটির মূল গেট দিয়ে ঢোকার আগেই বসুন্ধরা কিংসের অনুশীলন মাঠ চোখে পড়বে, এর সঙ্গে আরো একটি কমপ্লেক্স।
যেখানে বেশ কিছু ফুটসাল মাঠ, প্যাডেল টেনিস কোর্টসহ এক লাখ স্কয়ার ফিটের আরো একটি ইনডোর। ক্রীড়া শহর তো বলতেই হবে একে। প্রায় ৩০০ বিঘা জায়গাজুড়ে ১৭টি খেলার ২৪টি স্থাপনা। বাংলাদেশে তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়াতেই সর্ববৃহৎ স্পোর্টস সিটি এটি। ২০২১ সালে নির্মাণকাজ শুরুর পর স্পোর্টস সিটি এখন অনেকটাই দৃশ্যমান।
ক্রিকেট মাঠে নিয়মিত খেলা হচ্ছে। ঘরোয়া আসরের পাশাপাশি বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচও হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিন, মালদ্বীপ, আফগানিস্তান এসে খেলে গেছে; মেয়েদের সাফ টুর্নামেন্ট হয়েছে। জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার চলাকালে বাংলাদেশ ফুটবলের হোম ভেন্যু হয়ে উঠেছিল এ মাঠ।
কিংস অ্যারেনা লাগোয়া আমেরিকান বিখ্যাত গোল্ডস জিম এখন স্বাস্থ্য সচেতন ও ক্রীড়াপ্রেমীদের নতুন। ৫০ ও ২৫ মিটারের দুটি সাঁতার পুলসহ এই জিমের আরেক পাশে মাল্টিস্পোর্টস জোন। এই অংশে স্কোয়াশ, মার্শাল আর্ট ও বক্সিংয়ের ইভেন্ট হবে নিয়মিত। ইয়োগা সেন্টারের কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এই কমপ্লেক্সটি পেরোলেই নান্দনিক বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। সেরা মানের পড়াশুনার পাশাপাশি সমান গুরুত্ব সেখানে খেলাধুলায়। এই স্কুলটি স্পোর্টস সিটিকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি হচ্ছে তার পাশেই। এই মুহূর্তে মাঠ ও গ্যালারি নির্মাণের কাজ চলছে। এই স্টেডিয়ামের পাশে ক্রিকেটের আরো একটি অনুশীলন মাঠও আছে। সেই মাঠে এর মধ্যেই ঘাস রোপণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সাবেক চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্স এখানে অনুশীলন করে। এর পাশে ইনডোরে নেট প্র্যাকটিসের ব্যবস্থা। এই ক্রিকেট কমপ্লেক্স পেরিয়ে সাউথ জোনে আরো একটি কমপেক্স গড়ে উঠেছে। সেখানে দুটি ফুটবল মাঠ, একটিকে ঘিরে ৪০০ মিটারের অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক; দুটি হকি মাঠ, একটি ম্যাচ খেলার জন্য, অন্যটি অনুশীলনের। মাঠ তৈরির কাজ প্রায় শেষ, শুধু অ্যাস্ট্রো টার্ফ বসানোর কাজ বাকি। ফুটবল মাঠ দুটিও পুরো তৈরি। এখানে আরো দুটি ফুটসাল মাঠ আছে, সঙ্গে রোলার স্কেটিং জোন, তিনটি বাস্কেটবল কোর্ট, দুটি করে কাবাডি ও ভলিবল কোর্ট। তায়কোয়ানদো, জুডো খেলার ব্যবস্থাসহ একটি সুইমিং কমপ্লেক্সও হচ্ছে বসুন্ধরা স্পোর্টস সিটিতে।
স্পোর্টস সিটির মূল গেটে ঢোকার আগে বাঁদিকে বসুন্ধরা কিংসের অনুশীলন মাঠ সমেত কমপ্লেক্সটিও সুবিশাল, যেখানে এক লাখ স্কয়ার ফিটের বিশেষ ইনডোরটির কাজ পুরো শেষ। সেটা ইনডোর না বিস্তীর্ণ খোলা মাঠ, ভেতরে ঢুকে ঠিক বুঝে ওঠা কঠিন! ভাবা যায়, এক ছাদের নিচে ২৪টা ব্যাডমিন্টন কোর্ট। চারটি ব্যাডমিন্টন কোর্ট একত্র করে তা আবার মিনি ক্রিকেট জোন বানিয়ে ফেলার ব্যবস্থা। অর্থাৎ সেই ইনডোর একসঙ্গে আটটা মিনি ক্রিকেট ম্যাচ চলতে পারে। তেমন টুর্নামেন্ট এখানে হয়ে গেছে এর মধ্যে।
বিশাল এই ইনডোরের সামনে প্যাডেল টেনিসের অভিনব আয়োজন। টেনিস আর স্কোয়াশের সংমিশ্রণের এই প্যাডেল টেনিস খেলতে যেমন রোমাঞ্চকর, তেমনি দৃষ্টিনন্দন কোর্টগুলো। রঙিন টার্ফের ১৬টি প্যাডেল টেনিস কোর্টে এখন নিয়মিত খেলা হচ্ছে। পাশে তিনটি ফুটসাল মাঠ। এখানেও সুইমিং পুল আছে। সামনে দৃষ্টিনন্দন ক্যাফেটেরিয়া, যার দোতলায় বাচ্চাদের খেলার জায়গা, তৃতীয় তলায় সিনেমা হল, ফুড কোর্ট।
কল্পনায় খেলাধুলার আনন্দময় যে মঞ্চের ছবি আঁকা যায়, বসুন্ধরা স্পোর্টস সিটি যেন তার চেয়েও বেশি কিছু।