বঙ্গোপসাগরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি থাকায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিনদ্বীপ নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর ফলে সেন্টমার্টিনে আটকা পড়া সাড়ে তিন শতাধিক পর্যটক আজ বৃহস্পতিবারও ফিরতে পারবেন না। এদিকে, নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় টেকনাফ থেকে কোনো ধরনের খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। ফলে সেন্টমার্টিনদ্বীপে নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ টেকনাফের ট্রাফিক সুপারভাইজার মো. জহির উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, গত মঙ্গলবার টেকনাফ-সেন্টমার্টিনদ্বীপ নৌপথে চলাচলকারী এমভি বার আউলিয়া জাহাজে করে বিপুল সংখ্যক পর্যটক সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে গেছেন। এর মধ্যে রাত্রি যাপনের জন্য দুই শতাধিক পর্যটক দ্বীপে অবস্থান করেন। আগের দিন সোমবার একই জাহাজ করে দ্বীপে যাওয়া দেড় শতাধিক পর্যটকও রয়েছেন। দুই দিনে সাড়ে তিন শতাধিক পর্যটক দ্বীপে অবস্থান করছেন। সতর্ক সংকেত বলবৎ থাকায় দ্বীপে অবস্থান করা পর্যটকেরা ফিরতে পারবেন না।
বুধবার (০৪ অক্টোবর) বিকেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনদ্বীপে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী সব ট্রলার চলাচল করতে পারবে। ট্রলার মাঝিমাল্লা ও সহযোগীসহ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে সংকেত জারি থাকা অবস্থায় কোনো ধরনের পর্যটক পরিবহন করা যাবে না। মো. আদনান চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, টেকনাফ সেন্টমার্টিন দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা জিয়াউল হক জিয়া জানান, বুধবার ভোরে মুষলধারে বৃষ্টি হলেও সকাল আটটার পর থেকে প্রচণ্ড রোদ ছিল। তাই পর্যটকেরা বাজার, জেটিঘাট, দোকানপাট ও হোটেল-রিসোর্টে বসে সময় কাটান।এদিকে সেন্টমার্টিনদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, দ্বীপে নিত্যপণ্য নেই বললেই চলে। ডিম ও মুরগি নেই। কিছু দোকানে আলু ও চাল রয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় মাছ ধরাও বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় সাড়ে ১০ হাজার বাসিন্দা, দ্বীপে থাকা হোটেল-রিসোর্টগুলোর কর্মচারীসহ দ্বীপে প্রায় ১২ হাজারের মতো লোক রয়েছেন। পাঁচ দিন ধরে সার্ভিস ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় টেকনাফ থেকে কোনো ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল আনা সম্ভব হয়নি। ফলে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে নিত্যপণ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
সেন্ট মার্টিন বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য হাবিব খান জানান, পাঁচদিন ধরে সেন্টমার্টিনের সার্ভিস ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় বর্তমানে দ্বীপে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বলতে কিছুই নেই। বর্তমানে এক কেজি আলু বিক্রয় হচ্ছে ৮০ টাকা করে। যাবতীয় খাদ্য টেকনাফ থেকে সরবরাহ করা হয়। এ অবস্থায় আবারও স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করায় বুধবার বিকেল থেকে এ নৌপথে যাবতীয় নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
দ্বীপটির কয়েকজন হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকরা জানান, বুধবার সকাল থেকে তরিতরকারি ও ডিম সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক পর্যটক সকালের নাশতায় রুটি ও পরোটার সঙ্গে ডিম ভাজি চাইলে তারা দিতে পারেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনদ্বীপ নৌপথে চলাচলকারী সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির এক সদস্য বলেন, গত ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে সাগর পাড়ি দেওয়ার সময় ঢেউয়ের কবলে পড়ে একটি স্পিডবোট ডুবে এক নারীর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় ১৭ জন পর্যটকসহ আরও ২৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এরপর এ নৌপথে চলাচলকারী সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির কাছ থেকে একটি লিখিত অঙ্গীকারনামা নেন কোস্টগার্ড সদস্যরা। এতে বলা হয়- কোস্টগার্ডের অনুমতি ছাড়া কোনো লোকজন ও মালামাল পরিবহন করা যাবে না। এসময় তিনজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। ওই দিনের পর থেকে এখন পর্যন্ত ট্রলার চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এসব সার্ভিস ট্রলারে করে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও যাবতীয় খাদ্যসামগ্রী আনা হয়। নৌযান বন্ধ থাকায় খাদ্যসামগ্রীর সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকার গাজীপুর থেকে সেন্টমার্টিনদ্বীপে ভ্রমণে আসা মোবারক হোসেন ভূইয়া নামের এক পর্যটক মোবাইলফোনে জানান, আনন্দ উপভোগ করতে সেন্টমার্টিনদ্বীপে ছুটে আসা। তবে সতর্ক সংকেতের কারণে মনটা খারাপ হয়ে গেল। মুন্সিগঞ্জের এক নারী পর্যটক জানান, দ্বীপে ডিমের সংকট হওয়ায় শিশুদের নিয়ে সমস্যায় আছেন। এভাবে চলতে থাকলে দ্বীপের মানুষ না খেয়ে মারা যাবে।
এব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল- বুধবার টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনদ্বীপে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী সব ট্রলার চলাচল করতে পারবে। ট্রলার মাঝিমাল্লা ও সহযোগীসহ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে সংকেত জারি থাকা অবস্থায় কোনো ধরনের পর্যটক পরিবহন করা যাবে না। মেডিকেল ইমার্জেন্সি হলে রোগী ও তার সঙ্গে দুইজন স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে চলাচল করতে পারবেন। কোনো স্পিডবোট সতর্ক সংকেত চলাকালীন সময়ে চলাচল করতে পারবে না। উপজেলা প্রশাসন থেকে যথাযথ অনুমতি নিয়ে অন্যান্য পণ্য পরিবহন করা যাবে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ