চলতি বছরে যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়েছে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি ও চৌহালী উপজেলার নয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন। এতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়ে পড়েছে। ঝড়ে পড়ছে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা জীবন। তবে শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়ারোধে খোলা আকাশের নিচে টিনের ছাউনি ও মানুষের বসতবাড়ির আঙিনায় কোনো রকমে ছাপড়া তুলে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাঠদান চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে শিক্ষা অফিস।
কিন্তু সেখানেও প্রয়োজনীয় চেয়ার-টেবিল বেঞ্চ ও আসবাসপত্র না থাকায় ঠিকমতো পাঠদান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। রোদ-বৃষ্টি ও ঝড়ে কোমলমতি শিশু-শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় দ্রুত ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
জানা যায়, যমুনার কোল ঘেঁষে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি ও চৌহালী উপজেলা অবস্থিত। প্রতি বছর যমুনার ভাঙনে শতশত বসতভিটা ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে যায়। সেই সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বিলীন হয়ে যায়। এ বছর চৌহালী উপজেলার চর মুরাদপুর, পশ্চিম শৈলজানা, ধুকুলিয়া, চান্দৈর, চরসলিমাবাদ, পয়লাপুর্বপাড়া চর সলিমাবাদ দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বেলকুচি উপজেলার মেহেরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ দুটি ভবন বিলীন হয়ে গেছে। ভবন বিলীন হওয়ায় খোলা আকাশে টিনের ছাউনি তুলে পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই পাঠদান বন্ধ করা হচ্ছে। বই খাতা ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ছাত্রছাত্রীরা বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে। রোদ-বৃষ্টির মধ্যে দুর্ভোগে মধ্যে পড়াশোনা করতে হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থী।
বেলকুচির মেহেরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, বিদ্যালয়ের ভবনটি সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর ২০০ মিটার অদূরে একটি খোলা মাঠে টিন দিয়ে একটি ছাউনি তুলে আমাদের পড়াশোনা করানো হচ্ছে। এভাবে পড়াশোনা করা খুব কষ্ট হচ্ছে। বৃষ্টি আসলেই বই খাতা ভিজে যায়, আমরাও ভিজে যাই। একটু জোরে বৃষ্টি হলে অন্যের বাড়িতে চলে যেতে হয়।
শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা যেন ঝড়ে না যায়, সে জন্য ছাউনি তুলে শিক্ষাকার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। ব্লাকবোর্ড রাখার জায়গা নেই। খাতাপত্র রাখার জায়গা নেই। পড়াশোনা ঠিকমতো করানো যাচ্ছে না।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমে বেলকুচি উপজেলার বড়ধূল ইউনিয়নের দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে চলে গেছে। আমরা দুটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা যেন ঝরে না পড়ে, সেজন্য অস্থায়ীভাবে ছাউনি তুলে শিক্ষকদের শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে বলেছি। পাশাপাশি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে স্কুল সম্পর্কে জানিয়েছি। একটি ফান্ডের আশা করছি। ফান্ডটি পেলে খুব দ্রুত আমরা ওই স্কুল দুটিতে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারব।
চৌহালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহজাহান সেখ জানান, সাতটি স্কুল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এর মধ্যে তিনটি স্কুলে টিনের ছাউনি তুলে পাঠদান এবং চারটি স্কুল লোকের বসতবাড়িতে ছাপড়া তুলে কোনোরকমে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। স্কুলের তথ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় ভবন নির্মাণ করা হলে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই