স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতসহ নয়নাভিরাম দৃশ্যে দেশসেরার তালিকায় বগুড়ার শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সারাদেশের ৪৯২টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮৯.৪৪ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রথম স্থান অর্জন করেছে।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিল এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩ কোটি ৮৮ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত অত্যাধুনিক চারতলা বিশিষ্ট ওপিডি ভবনসহ আরও ৪টি ভবন উদ্বোধন করা হয়। এমন অবকাঠামোগত সুবিধা থাকলেও হাসপাতালটিতে নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা ছিল খুবই কম। পরে ডা. সাজিদ হাসান সিদ্দিকী লিংকনের হাত ধরে স্বাভাবিক প্রসব কার্যক্রমের উদ্যোগ ও ব্যাপক প্রচার চালানো হয়। তার নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে মানুষের আস্থা ফিরছে স্বাভাবিক প্রসবে। ইতিমধ্যে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসবে উপজেলায় সাড়া ফেলেছে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
এ ছাড়া দীর্ঘ ৩৬ বছর পর অপারেশন থিয়েটার চালু করা হয়েছে। যেখানে নিয়মিত সিজারিয়ান অপারেশন হয়। পাশাপাশি এই হাসপাতালে প্রতি মাসে গড়ে অর্ধশতাধিক নরমাল ডেলিভারি হয়ে থাকে। নবজাতকের জন্য উপহারের ব্যবস্থাও চালু রয়েছে। প্রায় ২২ বছর পর এই হাসপাতালে অত্যাধুনিক ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন চালু করা হয়েছে। প্যাথলজির সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাম, যক্ষা রোগীদের জিন এক্সপার্ট পরীক্ষা, ইসিজি, এএনসি এবং পিএনসি সেবা, সুসজ্জিত ডেন্টাল সার্ভিস, কৈশোর বান্ধবস্বাস্থ্য সেবা, টেলিমেডিসিন চিকিৎসা সেবা, হারবাল চিকিৎসা সেবা, ডায়াবেটিস ও ব্লাড প্রেশার রোগীদের জন্য এনসিডি কর্নার, শিশুদের জন্য আইএমসিআই কর্নার ও কেএমসি কর্নারসহ রোগীদের জন্য অন্যান্য সকল ধরনের স্বাস্থ্যসেবা চালু রয়েছে।
রোগী ও তাদের স্বজনদের খাবারের জন্য আছে ডাইনিং রুমের ব্যবস্থা। যানবাহনের জন্য রয়েছে নিরাপদ গ্যারেজ। এই উপজেলাসহ আশপাশের প্রায় ৬ থেকে ৭টি উপজেলার মানুষ একসময় দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বগুড়া থেকে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন নিয়ে আসতো। তাদের কষ্ট লাঘব করার জন্য ২০২১ সাল থেকে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা হয়। এক সময় এই হাসপাতাল থেকে দৈনিক গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ জন রোগী স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতেন। বর্তমানে পরিবেশ ও সেবার মান উন্নয়নের ফলে দৈনিক গড়ে প্রায় ৯০০ থেকে এক হাজার মানুষ এখান থেকে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করে থাকেন।
এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ছাদে সারি সারি টবে সবুজের সমারোহ। গাছে গাছে ঝুলছে ফুল ও ফল। পুরো হাসপাতাল চত্বরে গড়ে উঠেছে মিনি ফুলবাগান। সেইসাথে শোভা পাচ্ছে ছোট ছোট সবজি ক্ষেত ও ভেষজ বাগান। পুরো চত্বর ঝকঝকে। একসময় যেখানে সন্ধ্যার পরই ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করতো। বর্তমানে সেই উপজেলা কমপ্লেক্সজুড়ে আলো ঝলমলে পরিবেশ।
শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজিদ হাসান সিদ্দিকী লিংকন জানান, তিনি ২০২১ সালের ১২ আগস্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে যোগদান করেন। এরপর থেকেই পাল্টে গেছে হাসপাতালের দৃশ্যপট। হাসপাতাল প্রাঙ্গণ দালালমুক্ত হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি রোগীদের সঠিক সেবা নিশ্চিতে বদলে ফেলা হয়েছে ভেতরের পরিবেশ।
তিনি আরও জানান, হাসপাতালে সেবা নিতে আসা প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। সকলের প্রচেষ্টায় দেশসেরার তালিকায় রয়েছে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানকার সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন।
বগুড়া সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শফিউল আজম জানান, সেবা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা এই হাসপাতালে বেশি। সিরাজগঞ্জসহ আশপাশের অন্যান্য উপজেলা থেকেও এখানে সেবা নিতে আসেন অনেক রোগী। ফলে স্বাস্থ্য বিভাগের র্যাংকিংয়ে সারাদেশের ৪৯২টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮৯.৪৪ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এটা বগুড়াবাসীর জন্য গর্ব। এ ছাড়াও র্যাংকিংয়ে এগিয়ে আছে গাবতলী ও শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। জেলার প্রতিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা অনেক ভালো।
বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মজিবর রহমান মজনু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। একমাত্র তিনিই সফল প্রধানমন্ত্রী, যিনি রাতদিন কাজ করছেন মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য।
বিডি প্রতিদিন/এমআই
