হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে আন্দোলনকারী-জনতার সাথে পুলিশের সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ ৭ জন নিহত হয়েছে। এছাড়াও উত্তেজিত জনতার গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে বানিয়াচং থানার এসআই সন্তোষ। এসআই সন্তোষকে হত্যার পর তার মরদেহ ঝুলিয়ে রাখা হয় গাছের সাথে।
সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত ৭ জনের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বানিয়াচং এলআর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক সারিতে ৭ জনের জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়। এসময় সৃষ্টি হয় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের। জানাজার নামাজ শেষে নিহতের স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠে ওই এলাকার আকাশ বাতাস। যেন কিছুতেই থামছে না তাদের কান্না। এদিকে, বেলা দুইটায়ও নিহত এসআইয়ের মরদেহ থানার সামনে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বিক্ষুদ্ধ জনতার দেয়া আগুণে জ্বলছে পুরো থানা চত্বর।
জানা যায়, সোমবার দুপুরে বানিয়াচং সদরের এলআর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সমবেত হয়ে একটি মিছিল নিয়ে উপজেলার নতুন বাজার হয়ে বড় বাজার যায়। সেখানে উপস্থিত শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা থানার সামন দিয়ে মিছিল নিয়ে যেতে চাইলে স্থানীয় ঈদগা এলাকায় পুলিশ বাধা দেয়। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয় বিক্ষুব্ধদের। এক পর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকলে পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে থাকে। পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলে তিনজনসহ ৭ জন নিহত হন। আহত হন পুলিশসহ শতাধিক মানুষ।
আন্দোলনকারি শিক্ষার্থী ও জনতার ওপর পুলিশের হামলা, গুলি ও নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের পাড়া মহল্লা ও কয়েকটি গ্রাম থেকে কয়েক হাজার মানুষ দলবদ্ধ হয়ে থানায় ও ডাক বাংলোয় হামলা চালিয়ে ও আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে পুড়ে ছাই হয়ে যায় পুরো থানা চত্বর। আগুনে পুড়ে যায় অন্তত ১০ থেকে ১৫টি যানবাহন। থানার ভিতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন পুলিশ সদস্যরা। একপর্যায়ে সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ সদস্যসহ থানায় আটকে পড়াদের উদ্ধার করে। কিন্তু তার আগেই এসআই সন্তোষকে পিটিয়ে হত্যা করে বিক্ষুদ্ধ জনতা। সকালে তার মরদেহ ঝুলিয়ে দেয় থানা একটি গাছের সাথে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর পর্যন্ত থানা থেকে আগুনে ধোঁয়া বের হচ্ছে। থানার সামনে দাড়িয়ে আছে হাজার হাজার উৎসুক জনতা। এছাড়াও থানার ভেরত থেকে অনেককে নানা ধরনের জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যেতেও দেখা গেছে।
সংঘর্ষে নিহতরা হল, বানিয়াচং সদরের সাগরদীঘি পূর্ব পাড়ের মোশাহিদ আখঞ্জীর ছেলে স্থানীয় লোকালয় বার্তা পত্রিকার সাংবাদিক সোহেল আখঞ্জী (৩০), উপজেলার যাত্রাপাশা মহল্লার সানু মিয়ার ছেলে হাসান মিয়া (১২), মাঝের মহল্লার আবদুর নূরের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (১৭), পাড়াগাঁও মহল্লার শমশের মিয়ার ছেলে মোজাক্কির মিয়া (৪০), কামালহানি মহল্লার নয়ন মিয়া (১৮), যাতুকর্নপাড়া মহল্লার আবদুর রউফের ছেলে তোফাজ্জল (১৮) ও পূর্বঘর গ্রামের দলাই মিয়ার ছেলে সাদিকুর (৩০)। হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ নুরুল হক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল