শিক্ষক সংকটে পাবনার ঈশ্বরদীর রেলওয়ে সরকারি নাজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম প্রকট আকারে ব্যাহত হচ্ছে। প্রায় ৭২ বছরের পুরাতন বিদ্যালয়টিতে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকট থাকলেও শিক্ষক নিয়োগে উদ্যোগ নিচ্ছে না রেল কর্তৃপক্ষ।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বিদ্যালয়ে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ মাত্র পাঁচজন শিক্ষক। এর বাইরে নেই লাইব্রেরিয়ান, বিজ্ঞানাগারের সহকারী, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরও সংকট।
স্বাধীনতার আগে ঈশ্বরদীতে জংশন স্টেশন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পাকশীতে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় অফিস স্থাপিত হয়। ঈশ্বরদীতেও গড়ে ওঠে অনেক অফিস। রেল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় রেলওয়ে নাজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়। সে সময় প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালিত হলেও পরে প্রাথমিক শ্রেণিগুলো বাদ দেওয়া হয়।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠাকালীন মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ছিল ২৮টি। এর মধ্যে প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষক ছাড়াও সহকারী ও জুনিয়র শিক্ষকের সংখ্যা ১৭টি। এসব পদে এখন শিক্ষকসহ মাত্র সাতজন রয়েছেন। প্রধান শিক্ষক সম্প্রতি অবসরে যাওয়ায় সহকারী শিক্ষক অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। দুটি সেকশনে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৯৩ জন। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ মাত্র দু’জন বিজ্ঞানের শিক্ষক অংক, রসায়ন, পদার্থ, জীববিদ্যা ও বিভিন্ন শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিষয় পড়াচ্ছেন। লাইব্রেরি থাকলেও নেই লাইব্রেরিয়ান। বিজ্ঞানাগারের অবস্থাও একই রকম। অফিস কর্মচারীর দুটি পদই শূন্য। চতুর্থ শ্রেণির ৫টি পদের মধ্যে রয়েছে শুধু নৈশপ্রহরী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী। এখানে বর্তমানে শিক্ষকরাই কেরানি ও পিয়নের কাজ করছেন।
দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, জোড়াতালি দিয়ে বিদ্যালয়টি চলছে। আগে খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হলে এখন নেই। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য বারবার রেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছেন, সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলা থাকায় নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ম্যানেজার (ডিআরএম) শাহ সূফি নূর মোহাম্মদ জানান, রেলওয়ের সব স্কুলেই শিক্ষক সংকট রয়েছে। মাঝে মধ্যে পাকশী রেলওয়ে কলেজের শিক্ষকদের দিয়ে ক্লাস নেওয়া হয়। শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া কেন্দ্র থেকে পিএসসি’র মাধ্যমে হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ শিক্ষক স্বল্পতার বিষয়টি জানে। শিক্ষকের ডিমান্ড দেওয়া আছে। কয়েকদিন আগে মহাপরিচালক স্যার এসেছিলেন, তিনিও জানেন। কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি দেখছে। সহসাই শিক্ষক পাওয়া না গেলেও ২০২৫ সালের মধ্যেই নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই