মানিকগঞ্জে পদ্মা, যমুনা, ধলেশ্বরী, কালীগঙ্গা, ইছামতিসহ বিভিন্ন নদনদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। পানি বাড়ার সাথে বাড়ছে নৌকার চাহিদা। হাটগুলিতেও বেড়েছে নৌকার ক্রেতা বিক্রেতা।
গত কয়েক বছর বর্ষা না হওয়ায় নৌকা ব্যবসায়ীরা অলস সময় কাটিয়েছে। ক্রেতাদের আগমনে ঝিটকা ও ঘিওর হাট এখন জমজমাট । শত বছরের ঐতিহ্য ঘিওর হাটে দেখা যায়- ক্রেতারা নৌকা কিনে ভ্যান অথবা গরুর গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছেন। নৌকা তৈরির কারিগররা বাড়িতে বসে অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়ে নৌকা তৈরি করছেন। অনেকে হাঠে বসেই নৌকা বানাচ্ছেন। প্রতি বুধবার বসে ঘিওয় হাট। তবে প্রতিদিনই নৌকা বেচাকেনা হয়ে থাকে।
এ শিল্পের সাথে জড়িত লোকজন শত-শত ডিঙ্গি নৌকাসহ বিভিন্ন রকমের নৌকা বিক্রির জন্য সাজিয়ে রেখেছেন হটে। অনেকেই এ মৌসুমে নৌকা বিক্রি করে সারা বছরের খরচ জুগিয়ে থাকেন। চরাঞ্চলের লোকজনের চলাচলের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নৌকা। তাই সকলের বাড়ির ঘাটেই নৌকা দেখা যায়।
অন্যান্য বছরের মতো এবারও বর্ষার শুরুতেই ঘিওর উপজেলার বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় ঈদগা মাঠ এবং ঘিওর ডি, এন হাই স্কুলের মাঠের এক পাশে নৌকা বিক্রির হাট জমে উঠেছে। ঘিওর হাটে কাজের ফাঁকে কাঠ মিস্ত্রিরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই তারা তাদের কর্মচারিদের নিয়ে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চারটি নৌকা তৈরী করা হয়। ঘিওর, দৌলতপুর, হরিরামপুর, মহদেবপুর এবং তরা হাটে তারা নৌকা বিক্রি করে থাকেন।
বর্তমানে লৌহা ও কাঠের দাম বেড়ে যাওয়ায় নৌকা তৈরির খরচ বেড়ে গেছে। নৌকা প্রকার ভেদে প্রতিটি ডিঙ্গি নৌকা ৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রয় করা হয়। তবে লাভের অংশ আগের থেকে কমে গেছে।
কাঠ মিস্ত্রি সুবল সুত্রধর জানান, আমাদের বাপ দাদাদের আমল থেকেই আমরা নৌকা তৈরি করে বিক্রি করি। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে আদাদের বাড়িতে নৌকা তৈরির ধুম পরে যায়। আমরা জৈষ্ঠ মাস থেকে নৌকা তৈরি শুরু করে ভাদ্র মাস পর্যন্ত বিক্রি করে থাকেন। বর্তমানে এলাকায় ছোট ডিঙ্গি ও কোষা নৌকা বেশি চলে। নৌকায় ব্যবহার করা হয় কড়ই, জাম্বল,আম ও কদম কাঠ। জাতি কাঠের তৈরি নৌকায় অনেক খরচ হয়।
নৌকা কিনেতে আসা আজমত বেপারী (৭২) বলেন নৌকা হাটের সাথে ঘিওরের সুনাম এবং ঐতিহ্য জড়িত । দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ঘিওর হাটে নৌকা কিনতে আসে। হাটে বিভিন্ন ধরনের নৌকা বিক্রিয় হয়। অতিরিক্ত কোনও ধরনের খরচ না থাকায় ক্রেতা বিক্রেতারা নিরাপদে নৌকার ব্যবসা করে থাকেন।
ঘিওর ডি এন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান শিকদার জানান, বাংলাদেশের মধ্যে সব চেয়ে বড় হাট ঘিওর। শত বছরের এই ঐতিহ্যবাহী হাটটির জৌলস আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। শুধু নৌকা নয়, আমাদের এই হাটে বাঁশ, বেত ও মাটির তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীর প্রচুর কেনাবেচা হয়। শত বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রেখেছে ঘিওর হাট।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ