দেশের রাজশাহী, ময়মনসিংহ, খুলনা, চট্টগ্রাম বিভাগসহ অন্য জেলাগুলোতে হাজার হাজার টন মাছ উদ্বৃত্ত থাকলেও রংপুরে রয়েছে মাছের ঘাটতি। বিভাগে এখনও ঘাটতি ৩১ হাজার মেট্রিক টন। এই অবস্থায় বিলুপ্ত প্রায় দেশি মাছ আশা জাগাচ্ছে।
পানি স্বাদু হওয়ায় রংপুর অঞ্চলের নদী-নদী, খাল-বিলে একসময় ২০০ প্রজাতির মাছের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল। কালের বিবর্তনে জলবায়ুর পরিবর্তন ও পরিবেশগত কারণে কিছু কিছু প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে যেতে বসেছিল। মৎস্য চাষিদের এবং মৎস্য বিভাগের মাঠ পর্যায়ের প্রচেষ্টায় বিলুপ্ত প্রায় দেশি কৈ, শিং, মাগুর, পাবদা, মুলসা জাতীয় মাছে সুদিন ফিরে আসতে শুরু করেছে। দেশি প্রজাতির এসব মাছ চাষ করে গত এক বছরে চাষিরা ১৫০ কোটি টাকার বেশি ঘরে তুলেছেন। এমনটা জানিয়েছে রংপুর মৎস্য বিভাগ।
রংপুর মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় গত বছরের জুন থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন দেশি প্রজাতির মাছ উৎপাদন হয়েছে। এসব মাছ উৎপাদনের সাথে জড়িত প্রায় ১০ হাজার মৎস্য চাষি। প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে হিসেব করলে সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন মাছে চাষিদের ঘরে এসেছে ১৫০ কোটি টাকার বেশি।
মৎস্য বিভাগ বলছে, মাছের ঘাটতি পূরণে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলায় গড়ে তোলা হয়েছে মাছের জন্য একাধিক অভয়াশ্রম। বিশেষ করে দেশি মাছ চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আগামী দু-এক বছরের মধ্যে এই অঞ্চলে মাছের ঘাটতি থাকবে না।
মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের সৃষ্টি পরিবেশগত পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রকৃতিতে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ায় জলাশয়গুলোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দারি, টিলা, কালা বাটা, ঘোড়া, পুটি, বোল, চিতল, গজার, রিটা, বট শিং, ঘাউড়া, সালবাইম, কাচকি, ফলি, শিল বাইলা ইত্যাদি দেশি প্রজাতির মাছ হারিয়ে যেতে বসলেও বিলুপ্তির পথে থাকা অনেক মাছ পাওয়া যাচ্ছে।
রংপুর মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, এই অঞ্চলে মাছের ঘাটতি পূরণে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে দেশি কৈ, পাবদা, টেংরা, শিং, মাগুর ইত্যাদি মাছের উৎপাদন বাড়াতে সরকারিভাবে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে এই অঞ্চলে বিলুপ্ত প্রায় দেশি মাছ চাষ করে চাষিরা ১৫০ কোটি টাকার বেশি আয় করেছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল