বগুড়ায় আবারো চোখ রাঙ্গাচ্ছে ডেঙ্গু। রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত ৭৯১ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। চলতি মাসেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আগামী মাসে আরও বাড়তে পারে ডেঙ্গু সংক্রমণ।
জানা যায়, সারা দেশে ডেঙ্গু রোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কোননা কোন এলাকায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। মশার উপদ্রবে জেলাবাসীর জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বাসা-বাড়ি থেকে অফিস আদালত সব জায়গায় মশা বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের অবস্থা একেবারেই নাজেহাল। শুধু সন্ধ্যায় বা রাতে নয়, দিনের বেলায়ও মশার উৎপাত চলছে সমান তালে। এরসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আক্রান্ত রোগী নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন রোগীর স্বজনরাও। সেইসঙ্গে স্কুল-মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেনে পড়ুয়া শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকরা। মশা নিয়ন্ত্রণে বা বংশ বিস্তারে কার্যকর ভূমিকা না থাকায় জেলা উপজেলায় মশার উপদ্রব বেড়েই চলছে। মশাবাহিত রোগের কারণে অক্রান্ত সংখ্যা বেশি হলেও সে তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন কম। চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারেও রোগীরা চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। হাসপাতাল পর্যায়ে যারা অতিমাত্রার অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন তারাই ভর্তি হচ্ছেন। বগুড়া শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পানি নিষ্কাশনের ড্রেন, নালা-নর্দমায় মশার লার্ভা কিলবিল করছে। এসব স্থান যেন এডিস মশার প্রজননস্থল হয়ে উঠেছে।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২০১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৮২ জন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৯ রোগী। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীগের জন্য বেড রয়েছে ১৮টি। শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ পর্যন্ত ৫৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪জন। বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য একজনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ পর্যন্ত ২৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। ২৯ জনই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হয়েছেন।
ডেঙ্গুর চোখ রাঙ্গানিতে রোগীরা আতঙ্কিত হলেও বগুড়ার চিকিৎসকরা বলছেন, এ পর্যন্ত যারাই আক্রান্ত হয়েছেন তাদের চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ্য করা হয়েছে। আবারো আক্রান্ত হলে রোগীদেরকে সুস্থ্য করতে সকল প্রকার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
বগুড়া জেলা ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ শাহনাজ পারভিন জানান, ১১ নভেম্বর সোমবার পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছে ১০ জন। এপর্যন্ত জেলায় ৭৯১ জন ভর্তি হয় চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে ভর্তি আছে ৩৪ জন। জেলায় মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়নি।
বগুড়া শহরের বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, বর্ষা মৌসুম শেষ হলেও মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। মশারি, কয়েল ও ইলেকট্রিক ব্যাট ব্যবহার করেও এই প্রাণঘাতী পতঙ্গের কামড় থেকে নিজেদের রক্ষা করা যাচ্ছে না। মশার উৎপাত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মশার কারণে রাতে বাসায় সন্তানদের লেখাপড়া করাতে ঝামেলায় পড়তে হয়। আর দিনের বেলার বিড়ম্বনা হলো রাস্তায় ফেলে রাখা বর্জ্যরে উৎকট গন্ধ। পৌরসভার কোন কোনো ডাস্টবিনের এমন অবস্থা যে সেটা যেন এডির মশার আবাস্থল হয়ে উঠেছে। পৌরসভা থেকে মশা নিধনে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, শজিমেকে হাসপাতালে ১৮টি বেড রয়েছে। চলতি বছরের ২০১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৮২ জন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৯জন রোগী। এছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম