বৃক্ষ বিশ্বমানবের জীবন রক্ষার জন্য একটি বড় উপাদান। মহান আল্লাহর নেয়ামতগুলোর মধ্যে গাছপালা, বৃক্ষরাজি এবং এদের ফলমূল ও অন্যান্য অংশ অন্যতম নেয়ামত। মানুষ প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করার ফলে বিশ্বে উষ্ণায়ন ঘটছে। প্রাণী ও উদ্ভিদ এই নতুন পরিবেশ মানিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের জীবনচক্রে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। ফলে তাদের অনেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে আর অনেকে বিলুপ্ত হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা বিশ্বে উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের এক-তৃতীয়াংশই বদলে যাবে। পৃথিবীর উষ্ণতা বর্তমানে যতটা দ্রুত বেড়েছে তেমনটি কখনো দেখা যায়নি। অথচ মহান আল্লাহতায়ালা এসব বন-জঙ্গল ও গাছবৃক্ষের মাধ্যমেই বায়ু সঞ্চালন করে, পৃথিবীর তাপমাত্রা কমানোর জন্য ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন এবং জীবজগৎকে বাঁচিয়ে রাখেন। পৃথিবীর মানুষকে গাছপালা ও পাহাড়-পর্বতকে ধ্বংস না করার জন্য সতর্ক বাণী দিয়ে, আল-কোরআনে মহান আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন যে, 'তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর তা (বায়ু) মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। অতঃপর তিনি (আল্লাহ) মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে (মেঘমালাকে) স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও যে, তার মধ্য থেকে বৃষ্টিধারা নির্গত হয়। তিনি (আল্লাহ) তার বান্দাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা তা (বৃষ্টি) পৌঁছান; তখন তারা আনন্দিত হয়। (সূরা রুম- ৩৮ আয়াত)। গাছপালা রোপণ না করে কেবল কেটে কাজে ব্যবহার করার ফলে পৃথিবীতে বৃষ্টির অভাব হচ্ছে, যে কারণে পৃথিবীর দাবদাহ বেড়েই চলছে। রাসূল (সা.) দেড় হাজার বছর আগেই পরিবেশ সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিয়ে বলেছেন যে, সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহর পরিজন, সুতরাং সব সৃষ্টির মধ্যে সে ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়, যে তার সৃষ্টির প্রতি বেশি অনুগ্রহশীল। (বায়হাকী)। পশুপাখি, গাছপালা, নদীনালা, সাগর-মহাসাগর, পাহাড়-পর্বত, বন-জঙ্গল, আগুন, পানি ও বায়ু এসবই মানুষের উপকারী ও পরিবেশবান্ধব। এদের মহান আল্লাহ যথাস্থানে স্থাপন করে রেখেছেন। মানুষ যখন এই সৃষ্টিসমূহকে তাদের কার্যকর স্থান থেকে স্থানচ্যুত করে বা কোনো কাজে ব্যবহার করে, তখনই পৃথিবীতে বিপর্যয় নেমে আসে। পৃথিবীর সব অঞ্চলেই খরা, বন্যা ও পশুপাখির বিলুপ্তি রক্ষা করতে হলে যে গাছ রোদে পুড়ে আমাদের ছায়া দেয়, যে গাছে রয়েছে বহু প্রাণিকুলের সংসার সমূলে সে গাছ কাটা রোধ করতে হবে।
[বরিশালের বানাড়ীপাড়া বাইশারী বাজারে গত ২৭ এপ্রিল ২০১৪ কিশোর-যুবক ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে আয়োজিত এক বার্ষিক তাফসিরুল কোরআন ওয়াজ মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যের অংশবিশেষ]