আমার বাবা আবদুল মালেক উকিল একজন আদর্শবান সৎ এবং আপসহীন রাজনীতিবিদ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সারা জীবন এ দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য তিনি নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেছেন। সব সময় তার একটাই লক্ষ্য ছিল, কীভাবে দেশের মঙ্গল করা যায়, যাতে সাধারণ মানুষ সুন্দরভাবে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারে। আমরা পাঁচ বোন, দুই ভাই। আমাদের সংসারের সবকিছু দেখাশোনা করতেন আমার মা। আমার বাবাকে দেখেছি সব সময় দেশ ও দশের জন্য কাজ করতে। খুব কম সময়ই বাবাকে আমরা কাছে পেয়েছি। সে জন্য আমাদের একদিকে যেমন দুঃখ ছিল, তেমনি গর্ববোধও করতাম যখন ভাবতাম আমার বাবা মানুষের ভালোর জন্য রাজনীতি করেন। তিনি সর্বদাই ভাবতেন কীভাবে এ দেশের শিক্ষিত যুবকদের একটা চাকরির ব্যবস্থা করা যায়। বাবার কথা বলতে গিয়ে মার কথা না বললেই নয়। বাবার প্রেরণায় মা অত্যন্ত সহজ-সরল এবং একজন ধর্মপরায়ণ বাঙালি নারী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি বাবা ছিলেন একজন সফল আইনজীবী। ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাস করেন। তিনি ব্রিটিশ ভারতে পাকিস্তানের এবং পরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগদান করেন। প্রথম ১৫ বছর তিনি নোয়াখালী আওয়ামী লীগের সদর কমিটি ও পরে জেলা কমিটির সভাপতি ছিলেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেছেন। স্বাধীন বাংলা বেতারের মাধ্যমে বিশ্বে জনমত গড়ে তোলার কাজেও তার বলিষ্ঠ ভ‚মিকা ছিল। সে সময় সাহায্য ও পুনর্বাসন কমিটির প্রধান হিসেবে তিনি ট্রেনিং ক্যাম্পের দেখাশোনার সার্বিক দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে সংসদীয় প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে নেপাল সফর করেন। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি দায়িত্ব পালন করেন। প্রথমে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ২৮ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার’ নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে বাঙালির ছয় দফা দাবির পক্ষে আন্দোলন করতে গিয়ে বাবাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের জন্য ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ তিনি গ্রেফতার হন। ’৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবং ’৫৫ সালের জুনে তিনি দুবার কারাবরণ করেন। ’৭৪ সালের এপ্রিলে বুখারেস্টে অনুষ্ঠিত ‘আন্তর্জাতিক পার্লামেন্ট ইউনিয়ন’ সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা ছিলেন। রাজনৈতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে তিনি ব্রিটেন, আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, লিবিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন। ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তিনি আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলকে পুনর্জীবিত করেন এবং দলের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। সে সময় আমাদের কেউ বাড়িভাড়াও দিতে চাইত না। ’৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর জরুরি আইনে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জেল থেকে বের হয়ে ’৭৮ সালের ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত ‘দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল’ অধিবেশনে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। আমার বাবাকে ’৭৫ সালের পর সামরিক শাসকরা কোনো দুর্নীতি মামলায় জড়াতে পারেনি। ক্ষমতার জন্য তিনি কখনো নীতি বা দল পরিবর্তন করেননি। ৭৫ সালের পর কেউ তাকে ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে দলে টানতে পারেনন। বর্তমান আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে রাজনীতিতে আনার ব্যাপারে আমার বাবার একনিষ্ঠ ভ‚মিকা ছিল। তিনি সব সময়ই বলতেন, বঙ্গবন্ধু এ দেশকে নিয়ে একটি সুন্দর স্বপ্ন দেখেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর সে আদর্শ বাস্তবায়ন করার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্ব অত্যন্ত জরুরি, যা আওয়ামী লীগকে অখণ্ডিতও রাখবে। আমার বাবা সত্যিকার অর্থেই বিশ্বাস করতেন : ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ এবং এ নীতি নিয়েই তিনি রাজনীতি করতেন। কোনো লোভ, লালসা, দুর্নীতি তাকে ছুঁতে পারেনি। তিনি অত্যন্ত সাধারণ জীবন যাপন করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি রাজনীতি করে গেছেন। ৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নোয়াখালী-৪ আসন থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন এবং জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা পদে অধিষ্ঠিত হন। সে বছরই বাবা হƒদরোগে আক্রান্ত হয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। সেখান থেকে ফিরে আসার পর ’৮৬ সালের ১৭ অক্টোবর তিনি ইন্তেকাল করেন। বাবাকে ভীষণ মনে পড়ে। বাবা এখন আমার কাছে কেবলই স্মৃতি হয়ে আছেন। সারা দিন বাইরে পরিশ্রম শেষে বাসায় এসে আমাদের সবার সঙ্গে বসে পারিবারিক অনেক গল্পও করতেন তিনি। বাবার অনেক মূল্যবান উপদেশ কানে বাজে এবং সেগুলো সামনে রেখেই চলার চেষ্টা করি। বাবা নেই ভাবতে বড় কষ্ট হয়! বাবাকে মনে করতে বড় ভালো লাগে। ভুলতে পারি না বাবাকে।
শিরোনাম
- যৌথ বাহিনীর অভিযানে সারা দেশে আটক ২৯ জন
- জয়ের পরই বাবার মৃত্যুর খবর পেলেন লঙ্কান ক্রিকেটার
- বাংলাদেশ ও চীন হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাবে : প্রধান উপদেষ্টা
- বাংলাদেশকে নিয়ে শেষ চারে শ্রীলঙ্কা
- সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ ভাতা পুনর্নির্ধারণ
- রাবিতে পোষ্য কোটা পুনর্বহাল, উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও
- নেপালকে ৪ গোলে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ
- ইসলামি দলগুলোর ঐক্য নিয়ে যে বার্তা দিলেন হেফাজত আমির
- সিলেটে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে না : পুলিশ কমিশনার
- যে সকল ভারতীয়দের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র
- ৯১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে চাপে আফগানিস্তান
- জুলাই বিপ্লব পরবর্তীতে র্যাবের কার্যক্রম প্রশংসিত হয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
- সার সংকটে ঝিনাইদহের কৃষক, উৎপাদন খরচ বাড়ার শঙ্কা
- ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক মতভিন্নতার শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে : প্রেস সচিব
- লিবিয়ায় মাফিয়াদের গুলিতে নিহত মাদারীপুরের যুবক
- ট্রাম্পের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই: ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট
- ফিকি লিডারশিপ একাডেমি চালুর উদ্যোগ
- জাপানের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন তাকাইচি
- শেরপুরে পাহাড়ি ঢলে ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর
- বগুড়ায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ৩টি পরিবারের পাশে তারেক রহমান
স্মরণ
আমার বাবা আবদুল মালেক উকিল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট ভার্সন
