সোমবার, ২০ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রশ্নবিদ্ধ বন্দুকযুদ্ধ

প্রহসনের পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়

পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধ এক বিতর্কিত বিষয়। কোনো সভ্য দেশ কিংবা সভ্য সমাজে এ ধরনের বন্দুকযুদ্ধ এবং তার অনিবার্য পরিণতিতে পুলিশি হেফাজতে থাকা আসামির মৃত্যু গ্রহণযোগ্য নয়। নিজেদের সভ্য দেশের অধিবাসী এবং সভ্য সমাজের অংশ হিসেবে দাবি করলেও সে বিষয়টি যে সংশয়ের ঊর্ধ্বে নয়, একের পর এক বন্দুকযুদ্ধে পুলিশ হেফাজতে থাকা আসামির মৃত্যু সে বিষয়টিই যেন স্পষ্ট করেছে। মাদারীপুরের কলেজ শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীর ওপর হামলা চালিয়েছিল যে ঘাতক দল তার এক সদস্যকে হাতেনাতে আটক করতে সক্ষম হয় এলাকাবাসী। সন্ত্রাসের সে বরপুত্রকে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। ফাইজুল্লাহ ফাহিম নামের ওই জঙ্গি সন্ত্রাসী হয়ে ওঠে রাষ্ট্রের কাছে যক্ষের ধনের মতোই মূল্যবান। কারণ গত তিন বছর ধরে একের  পর এক কতলের ঘটনা ঘটলেও এর হোতারা থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আমাদের অতি দক্ষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টার্গেট কিলিংয়ের কোনো অপরাধীকে ধরার ক্ষেত্রে চোখে পড়ার মতো কোনো সাফল্যই দেখাতে পারেনি। মাদারীপুরের মানুষ কলেজ শিক্ষককে কতল করতে আসা দুর্বৃৃত্তদের একজনকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। আশা করা হয়েছিল পুলিশ আটক জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য-উপাত্ত আদায় করবে। কিন্তু তার বদলে তারা যেভাবে বন্দুকযুদ্ধের অবতারণা ঘটিয়ে তার জীবনাবসান ঘটিয়েছে তা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। দেশ ও জাতির অজানা শত্রুদের পরাজিত করতে হলে তাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি খুবই জরুরি। ফাঁকা মাঠে তরবারি ঘুরিয়ে যে শত্রুকে ঘায়েল করা যায় না তা এক প্রতিষ্ঠিত সত্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিদের পাকড়াওয়ে নিজেরা তো ব্যর্থ, সাধারণ মানুষ অপরাধীদের ধরিয়ে দিলেও বন্দুকযুদ্ধের অবতারণা ঘটিয়ে আসলে কাদের লাভবান করা হচ্ছে তা একটি বিবেচ্য বিষয়। যারা সুরক্ষিত আদালত প্রাঙ্গণে জঙ্গিদের হাজির করার সময় বুলেটপ্রুফ পোশাক পরিয়ে আনেন, তারা আটক জঙ্গিদের নিয়ে অভিযানের সময় তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি কেন উহ্য রাখেন, তা যথাযথ ব্যাখ্যার দাবি রাখে। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই এ ধরনের প্রহসনের পুনরাবৃত্তি আর কাম্য নয়।

সর্বশেষ খবর