শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

স্বাধীন বিচারের জন্য চাই স্বাধীন মন-মানসিকতা

মইনুল হোসেন

স্বাধীন বিচারের জন্য চাই স্বাধীন মন-মানসিকতা

বিচার বিভাগের স্বাধীন সত্তা বজায় রাখার জন্য স্বাধীন মন-মানসিকতার শক্তি ও সাহস থাকতে হবে। কোনো স্বাধীনতাই সাহস ভিন্ন রক্ষা পায় না। সেনাবাহিনী সমর্থিত ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিচার বিভাগকে তার স্বাধীনতার শাসনতান্ত্রিক সুরক্ষা পুরোপুরি নিশ্চিত করেছিল। সে সময়ে সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা মেনে শাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে কাঠামোগতভাবে পৃথককরণের স্মরণীয় প্রক্রিয়া সমাপ্ত করা হয়েছিল।  তখনো একশ্রেণির আমলা দুঃসাহস দেখিয়েছিল এই বলে যে, বাইশ বছরেও বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করা যাবে না। অর্থাৎ স্বাধীন বিচার বিভাগ সম্পর্কিত শাসনতান্ত্রিক বিধান অকার্যকরই থেকে যাবে।  

আইনজীবী ও বিচারকদের সম্মিলিত শক্তিই হচ্ছে বিচার বিভাগের শক্তি এবং এর মধ্য দিয়েই স্বাধীন বিচার বিভাগের বিচারিক স্বাধীনতা নিশ্চিত হতে হয়। বিচার করার ক্ষেত্রে আদালতসমূহ যদি দৃঢ়তা দেখাতে পারে তাহলে প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতা তেমন কঠিন সমস্যা হতে পারে না। স্বাধীন বিচারের পথে প্রশাসনিক বাধা অতিক্রম করার ক্ষমতা শাসনতন্ত্রই বিচার বিভাগকে দিয়েছে।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য শাসনতান্ত্রিক ও আইনি কাঠামো এখন বেশ শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে। আদালতসমূহের কাজ হচ্ছে স্বাধীন বিচার বিভাগের মূল ক্ষমতা প্রয়োগ করা। কোনো স্বাধীন ব্যবস্থায়ই ব্যক্তির চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সাহস ভিন্ন অর্থবহ হয় না। স্বাধীনতা পাওয়া আর স্বাধীনতা ভোগ করার মধ্যে যে বিরাট ব্যবধান তা তো আমরা পদে পদে উপলব্ধি করছি। 

আজব ব্যাপার হচ্ছে, শুরু থেকেই আমাদের গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র অগণতান্ত্রিক শক্তির দ্বারা ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে চতুর্থ সংশোধনী পাস করা হয় এবং মূল শাসনতন্ত্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র সম্পূর্ণ বদলে দিয়ে একদলীয় স্বৈরতান্ত্রিক রূপ দেওয়া হয়। সর্বময় ক্ষমতা অর্পিত হয় প্রেসিডেন্টের হাতে। যে কারণে স্বাধীন বিচার বিভাগের অপমৃত্যু ঘটে।

একদলীয় শাসনতন্ত্রের গণতান্ত্রিক রূপ ধাপে ধাপে ফিরতে থাকে একের পর এক সামরিক শাসনের মাধ্যমে কিন্তু তা এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। আবারও শাসনতন্ত্রের অবশিষ্ট গণতান্ত্রিক চরিত্র হরণ করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকলেই স্বাধীন বিচার বিভাগের ব্যবস্থা রক্ষা পায়। গণতন্ত্র সংকটে থাকলে স্বাধীন বিচার বিভাগও সংকটে থাকবে। বর্তমান সরকার এই মর্মে আইন পাস করেছে যে, এক কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের সাজা দিতে পারবে, যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের বিচার করবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি তাদের চাকরিচ্যুত করতে পারবেন। সুপ্রিমকোর্ট এই মুহূর্তে আইনটি শাসনতান্ত্রিক সংঘাত নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।

কিন্তু এ কথা ঠিক যে, শাসনতান্ত্রিকভাবে বিচারিক দায়িত্ব পালনে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। প্রশাসনিক বাধা-প্রতিবন্ধকতা যা কিছু আছে তার মোকাবিলা করতে হবে ভিন্নভাবে। বিচারিক স্বাধীনতায় দুর্বলতা দেখিয়ে নয়, সরকারের অনুগ্রহ প্রার্থী হয়েও নয়। স্বাধীন বিচারের নিশ্চয়তার ভিত্তিতে প্রশাসনিক বাধা সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান বিচার বিভাগের হাতেই রয়েছে। কোনটি শাসনতান্ত্রিকভাবে অবৈধ ও অকার্যকর সে ঘোষণা দেওয়ার ক্ষমতা তো সুপ্রিমকোর্টের। তবে শাসনতন্ত্র অনুসরণের দায়িত্বটি সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে বিরোধ-বিবাদের বিষয় হতে পারে না। সমস্যার মূল কারণ অন্যত্র। স্বাধীন বিচার বিভাগও সরকারের বিচার বিভাগ। 

 

 

এটা তো অস্বীকার করা যাবে না যে, বাংলাদেশে এখনো গণতন্ত্র ও একনায়কত্ববাদের মধ্যকার সংঘাত শেষ হয়ে যায়নি। আর যায়নি বলেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হারানোর হুমকিও রয়ে গেছে। সমস্যা হচ্ছে, স্বাধীন বিচার বিভাগ ও কর্তৃত্ববাদ একসঙ্গে অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারে না। গণতন্ত্রের অবসান ঘটাতে হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সরকার মানতে পারে না। এটাই মূল সমস্যা।

তাই বিচার বিভাগের সঙ্গে সরকারের যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হচ্ছে তা আসলে সরকার ও বিচার বিভাগের সংঘাত নয়, গণতন্ত্র ও গণতন্ত্রহীনতার সংঘাত। গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র রক্ষা পাবে কিনা তার চ্যালেঞ্জই আমাদের কাছে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।  

বিচার বিভাগের বিচারিক স্বাধীনতা এবং বিচার বিভাগীয় প্রশাসন পরিচালনা— এ দুটি বিষয় আলাদা করে দেখতে হবে। জজ-বিচারকদের বিচার করার স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। তাই জনগণের পক্ষে সুবিচার নিশ্চিত করতে তো বিচার বিভাগের বাধা নেই। 

সাচিবিক দায়িত্ব পালন করার ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভরশীল থাকতে গিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে তা দূর করতে সুপ্রিমকোর্টের একটি নিজস্ব সেক্রেটারিয়েট থাকা দরকার। তদানীন্তন কেয়ারটেকার সরকার এ ব্যাপারে কাজ শুরু করেছিল কিন্তু এ কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব বর্তায় নির্বাচিত পরবর্তী সরকারের ওপর। অর্থাৎ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর।

প্রধান বিচারপতি নিজেই যেখানে সবাইকে আশ্বস্ত করে বলছেন যে, বিচার বিভাগের ওপর সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই তখন স্বাধীনভাবে বিচার করতে কোনো আইনি বাধা বা শাসনতান্ত্রিক বাধা থাকার প্রশ্ন ওঠে না।

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আমাদের ঐকমত্য পোষণ করে স্বীকার করতে হবে যে, প্রশাসনিক দ্বৈতনীতির কারণে বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার সমূহ কারণ রয়েছে। নিম্ন আদালতের বিচারকদের যে রাজনৈতিক চাপের মধ্যে রাখা সম্ভব তা অস্বীকার করা যাবে না। তারা চাপের মধ্যে আছেন। জামিন না দিয়ে জেলে আটক রাখার সরকারি ইচ্ছা উপেক্ষা করার মতো নয়। বদলি, পদোন্নতি এবং সাজা প্রদানের ক্ষমতা সুপ্রিমকোর্টের হাতে ন্যস্ত থাকতে হবে। যাতে অধস্তন আদালতসমূহকে সরকারের চাপের মধ্যে না থাকতে হয়। কিন্তু সুপ্রিমকোর্ট থেকে সাহস পেলে সরকারের চাপ সৃষ্টির সুযোগকে বড় করে না দেখা সম্ভব। বিচার বিভাগ যে ক্ষমতাহীন তা তো নয়।

দ্বৈত শাসনের প্রশ্নে প্রধান বিচারপতি শাসনতন্ত্রের ১১৬ অনুচ্ছেদের অবতারণা করেছেন। ১৯৭২ সালের মূল গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্রে বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের বদলি, পোস্টিং সম্পর্কিত সব ক্ষমতা সুপ্রিমকোর্টের ওপর ন্যস্ত ছিল। এসব কাজ এখন করেন প্রেসিডেন্ট। তবে তাকে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হয়। সংশোধনীর পর নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা এককভাবে প্রধান বিচারপতির হাতে থাকে না। প্রেসিডেন্টের উদ্যোগেই নিম্ন আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রেসিডেন্টকে তো প্রধান বিচারপতির উপদেশ মতো কাজ করতে হবে। প্রধান বিচারপতির নিজস্ব দায়িত্বে নিম্ন আদালতের বিচারকদের ওপর কোনো প্রশাসনিক ক্ষমতা খাটাতে পারবেন না। তার হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছে। মুখে কিছু বলার প্রয়োজন নেই।

তাই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সম্পর্কিত শাসনতান্ত্রিক বিধানের সঙ্গে সংশোধিত ১১৬ অনুচ্ছেদটি সাংঘর্ষিক। সুপ্রিমকোর্টকেই ১১৬ অনুচ্ছেদের শাসনতান্ত্রিক বৈধতা নির্ধারণ করতে হবে। স্বাধীন বিচার ব্যবস্থায় বাধা সৃষ্টি না করার জন্য যখন সরকারের আইনমন্ত্রী প্রকাশ্যেই বক্তব্য দিচ্ছেন তখন সরকারি সহযোগিতা পেতে অসুবিধার কোনো কারণ নেই।

রাষ্ট্রের মধ্যে বিচার বিভাগ আলাদা কোনো রাষ্ট্র নয়। কিন্তু বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের অপরিহার্য দুটি কাজের দায়িত্ব বহন করে। যেমন— আইনের শাসনের সুশাসন নিশ্চিত করা এবং জনস্বার্থ রক্ষায় সুবিচার করা। ক্ষমতার অন্ধত্ব দিয়ে এটা বোঝা সহজ নয় যে, কীভাবে বিচার বিভাগ সুশাসন নিশ্চিত করতে সরকারকে নানাভাবে সাহায্য করে থাকে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ব্যতীত কোথাও জনস্বার্থ রক্ষার সুশাসন সম্ভব নয়। শাসনের নামে ক্ষমতায় থেকে অত্যাচার-অনাচার ভালোভাবেই চালানো যায়। এভাবে চলাকেই পুলিশি শাসন বলা হয়।

স্বাধীন বিচার বিভাগের দায়িত্ব জনগণকে বিচার ব্যবস্থার আইনি প্রক্রিয়ায় আস্থা অর্জনে সাহায্য করা। সরকারের দিকে তাকিয়ে নয়, দুর্বল জনগণের পক্ষ হয়ে আইনের প্রোটেকশন দেওয়া বিচার বিভাগের পবিত্র দায়িত্ব। বিচারের সম্মুখীন হওয়ার জন্য কোর্টে যাওয়ার পথে পুলিশ যাতে হয়রানি করতে না পারে সে ব্যাপারে কোনো নির্দেশ দিতেও অনেক দুর্বলতা। পুলিশের হাতে গুম, খুন ও নির্যাতিত হওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে না। পরাধীন আমলের মতো সরকারের মুখাপেক্ষী থেকে চাকরি করার মানসিকতা বিচার বিভাগের মানসিকতা হতে পারে না। ব্রিটিশ আমলেও জজ-বিচারকরা স্বাধীনতা ভোগ করেছেন। কোর্টের বিচারিক ব্যবস্থাকে রাজনীতির জন্য ব্যবহার করা হতো না। রাজনীতিবিদদের জন্য রাজবন্দীর আইন ছিল। 

সাংবিধানিকভাবে ব্যক্তির অধিকার রক্ষা করার ব্যাপারে যে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে তা রক্ষায় বিচার বিভাগের সচেতনতায় ঘাটতি থাকতে পারে না। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করাটাই বিচারের লক্ষ্য হতে পারে না। মামলার সংখ্যা কতটা বিনা কারণে বা পুলিশি ক্ষমতার অপপ্রয়োগের জন্য বেড়ে চলছে তাও বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে। জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যানকে একটি সহজ বিষয় হিসেবে দেখা সমীচীন নয়। দ্রুত বিচার হচ্ছে না বলে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে কারাভোগ করা ন্যায়বিচার নয়। জামিন পাওয়া যাবে না, বিচারের আগেই কাউকে মামলা দিয়ে জেল খাটানো সম্ভব বিধায় মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুলিশদের ব্যবহার করে কোর্টে মামলা দিয়ে এখন রাজনীতিও করা হচ্ছে। তাই রাজনৈতিক মামলার সংখ্যাও হু হু করে বেড়ে চলছে। পুলিশি শক্তির বিপরীতে কোর্ট-আদালতে বিচারিক শক্তিকে বড় করে দেখতে হবে। 

পুলিশি শক্তির অপব্যবহার এবং মামলা দিয়ে রাজনীতি করা বন্ধ হলে মামলার সংখ্যা বহুলাংশে কমে যাবে। জামিন সহজ করলেই দেখা যাবে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দিতে আগ্রহ থাকবে না। পুলিশ এবং বিচারকদের সংখ্যা বাড়িয়ে সরকারি খরচ বাড়ানোর ব্যাপারে উৎসাহ কম দেখালেও চলবে।

মামলা হলে জামিন পাবে না, এটা বাস্তবে জনগণের ব্যক্তিস্বাধীনতা অস্বীকার করার সহজ পথ হতে পারে না। পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে সম্পূর্ণ অসহায় অবস্থায় ব্যক্তিবিশেষের প্রতি নির্মম আচরণ করা মোটেও কাম্য নয়।

পুলিশ রিমান্ড অসাংবিধানিক এবং আইনের শাসনবহির্ভূত। পুলিশের হাতে সম্পূর্ণ অসহায় থাকাটা আইনের শাসনের সুরক্ষা নয়। পুলিশের দায়িত্ব যে জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষা করা এ কথা পুলিশকে ভুলে যেতে হচ্ছে। পুলিশকে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে তারা সরকারের কত বড় শক্তি। এভাবে পুলিশকে জনবিচ্ছিন্ন করা কিছুতেই কাম্য নয়। 

অধিকাংশ অভিযুক্ত ব্যক্তি ফৌজদারি মামলা মোকাবিলায় ভীত নয়। কিন্তু তাদের ভয়ের উৎস হচ্ছে জামিন না পাওয়া এবং পুলিশ রিমান্ডের নির্যাতন। পুলিশি আতঙ্ক থেকে রক্ষা করতেও যেন কোর্ট-আদালত অসহায়। জনগণকে পুলিশের কাছে অসহায় রাখার জন্য যে বিচার বিভাগ নয়, এটা বুঝতেও কষ্ট হচ্ছে কারও কারও। দুর্বল চিত্তের লোক বিচার বিভাগের জন্য নয়। যুগে যুগে বিচারকদের নির্ভীকতার মাধ্যমে ব্যক্তির স্বাধীনতা সম্প্রসারিত হয়েছে— পুলিশি ক্ষমতার কাছে অসহায় থেকে নয়।

মৌলিক অধিকার সম্পর্কে শাসনতন্ত্রের ৩১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “আইনের আশ্রয় এবং আইন অনুযায়ী ও কেবল আইন অনুযায়ী ব্যবহার লাভ যে কোনো স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং বিশেষত আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না, যাতে কোনো ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, শরীর, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে।” অথচ পুলিশি দাপটের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় পেতে সাধারণ মানুষকে কত অসহায়ভাবে দেখা হচ্ছে তা কোর্ট-আদালতের অজানা নয়।

পুলিশ কাউকে হত্যা করে যদি বলে সে ডাকাত বা জঙ্গি, তবে তাতে তার অপরাধ প্রমাণ হয় না। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ফলে বিচার প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে জনগণের আস্থা হারাচ্ছে।

বেঁচে থাকার শাসনতান্ত্রিক অধিকার বা স্বাধীনতা রক্ষার কাজে বিচার বিভাগ অসহায় হতে পারে না। প্রতিটি হত্যা যার হাতে যেভাবেই হোক না কেন, তার বিচার হতে হবে। আইনপ্রয়োগকারী পুলিশকে আইনের ঊর্ধ্বে রাখা অসম্ভব।

মানসিক চিন্তা-চেতনায় বিচার বিভাগের কঠিন দায়িত্বের প্রতিফলন অবশ্যই থাকতে হবে। সুবিচারের মূল কথা মানুষের অধিকার রক্ষার শক্তি, মানুষকে অসহায় করার আগ্রহ নয়। বিচারপ্রার্থীকে কোর্টে যেতে সাহায্য করতে ক্ষমতার ঘাটতি দেখানো বিচার বিভাগের কথা হতে পারে না। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী যে কাউকে খুনি, সন্ত্রাসী বা ডাকাত হিসেবে দেখা বিচার বিভাগের মানসিকতা হতে পারে না। বিচারে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তি একজন নির্দোষ ব্যক্তি এবং তিনি তার মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার দাবি অবশ্যই করতে পারেন।  আমাদের পুলিশকে কীভাবে রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছে তা আমরা জানব না, বুঝব না তা তো হতে পারে না।

     লেখক : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা।

সর্বশেষ খবর