বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বান্দার জন্য পরীক্ষা

মাওলানা হাফেজ কাজী মারুফ বিল্লাহ

ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বান্দার জন্য পরীক্ষা

আল্লাহ বলেন, ‘জেনে রাখ! তোমাদের অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পরীক্ষার বিষয় মাত্র। আল্লাহর কাছে এর চেয়েও মহান প্রতিদান আছে।’ (সূরা আনফাল : ২৮)। একজন মানুষের জন্য দীন পালন এবং আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে যে বিষয়গুলো বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার মধ্যে অর্থলোভ এবং সন্তানদের প্রতি মায়া-মমতা-ভালোবাসা অন্যতম। এ দুটোকে কেন্দ্র করেই মানুষ যত ধরনের অপরাধ করে বসে। তাই আল্লাহতায়ালা বান্দাকে সতর্ক করে বলছেন, বান্দা! এসব বিষয় তো তোমার জন্য পরীক্ষার একেকটি বিষয় মাত্র। এ ধরনের প্রতিটি বিষয়ে তোমাকে কৃতিত্বের সঙ্গে সাফল্য লাভ করতে হবে। তবেই তুমি আল্লাহর কাছে থাকা প্রতিদান ভাণ্ডার থেকে বেহিসাব নেয়ামত লাভ করতে পারবে। ইবনে কাসির বলেন, সন্তান-সন্ততি আমাদের জন্য পরীক্ষার বিষয়। আল্লাহপাক মানুষকে সন্তান দিয়ে পরীক্ষা করেন সে কি আমার শোকরিয়া আদায় করে নাকি সন্তান পেয়ে আমার নাফরমানি করে। সন্তানকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করতে পারলেই বান্দা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হিসেবে পরিগণিত হবে। (তাফসিরে ইবনে কাসির)। আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতি বলেন, সন্তান ও অর্থ-সম্পদ মানুষকে আখিরাতের কর্ম থেকে বিরত রাখে। তাই আল্লাহতায়ালা জানিয়ে দিচ্ছেন দুনিয়ার এ অর্থ-সম্পদ ও সন্তানকে রক্ষা করতে গিয়ে আল্লাহকে ভুলে যেয়ো না। আখিরাতে অনন্তপথের যাত্রাকে অমঙ্গল কর না। (তাফসিরে জালালাইন)।

অর্থ-সম্পদ যদি দীন পালনে সহায়ক হয় তবে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামত। কিন্তু তারা যদি আল্লাহর পথে চলতে বাধা প্রদান করে তবে বুঝতে হবে তারা আপনবেশি শত্রু। তাদের সম্পর্কেই আল্লাহতায়ালা বলেছেন, হে বিশ্বাসীগণ! কখনো কখনো তোমাদের স্ত্রী এবং সন্তান তোমাদের শত্রু হয়ে দাঁড়াতে পারে। অতএব, সাবধান থেক। তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে অনুশোচনা করলে তোমরা যদি তাদের ক্ষমা কর তবে জেনে রেখ, আল্লাহতায়ালাও অতীব ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাগাবুন : ১৪)। অর্থ-সম্পদের লোভ এবং সন্তান-পরিজনের মায়া-ভালোবাসা যেন মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল করে না দেয় সে বিষয়ে সতর্ক করে আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের প্রতিপত্তি, ধন-সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না রাখে। যদি তোমরা গাফেল বা উদাসীন হও তবে অবশ্যই তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা মুনাফিকুন : ৯)।

একজন মুমিনের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় হবে আল্লাহ এবং নবী (সা.)। হাদিস শরিফ থেকে জানা যায়, যে ব্যক্তি এমন গুণের অধিকারী হতে পারবে সে ব্যক্তি ইমানের প্রকৃত স্বাদ উপলব্ধি করতে পারবে। তাকে যখন তার প্রিয়জন এবং অর্থ-সম্পদ আল্লাহর নাফরমানি করতে বলবে তখন সে তা করবে না। এতে তার যত ক্ষতিই হোক আর প্রিয়জনরা যত অসন্তোষই হোক না কেন। এসবের পরওয়া সে করবে না। সে দেখবে এ কাজে আমার আল্লাহ খুশি আছেন কিনা? ব্যস! এ একটি প্রশ্নই তার কোনো কাজ করা না করার জন্য মৌলিক বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। আর এমন বান্দার জন্যই আল্লাহ রেখেছেন আজরুন আজিম বা মহাপুরস্কার।

লেখক : খতিব, বৃহত্তর জাজিরা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

সর্বশেষ খবর