সরলতার আরবি প্রতিশব্দ ‘আল বাজাজা’। অর্থ লৌকিকতা ও কৃত্রিমতাবিবর্জিত সাদাসিধা জীবন। উত্তম পোশাক পরিধান ও সৌন্দর্যপ্রিয়তায় ইসলাম বাধা দেয় না। তবে তা সীমা অতিক্রম করে গেলে হয়ে দাঁড়ায় অপচয় ও অহংকার। এভাবে মানুষ নিজের সব সম্পদ নিঃশেষ করে দেয়। তাই ইসলাম ভোগবিলাসিতা ও বৈরাগ্যের মাঝখানে মধ্যম পন্থা অবলম্বনের শিক্ষা দেয়। হাদিসে এ বিষয়টি ‘আল বাজাজাহ’ শব্দের মাধ্যমে ব্যক্ত করা হয়েছে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের খাদেমকে সঙ্গে নিয়ে আহার করে, গাধার পিঠে আরোহণ করে বাজারে যায় এবং বাঁধে ও তার দুধ দোহন করে সে অহংকারী নয়।’
সালেহ (রহ.)-এর দাদি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দেখলাম আলী (রা.) এক দিরহামের বিনিময়ে কিছু খেজুর কিনলেন এবং তা চাদরে পেঁচিয়ে নিজেই বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন। সালেহর দাদি তাকে বললেন অথবা অন্য কেউ তাকে বলল, হে আমিরুল মুমিনিন! বোঝাটি আমাকে বহন করতে দিন। তিনি বলেন, না, সন্তানদের পিতাই বোঝা বহনের অধিক উপযুক্ত। আদাবুল মুফরাদ।
মহিলা তাবেয়ি আমরাহ (রহ.) থেকে বর্ণিত। আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাড়িতে কী কী কাজ করতেন? তিনি বললেন, তিনিও একজন মানুষ ছিলেন। তিনি তাঁর কাপড়ে আটকে যাওয়া চোরকাঁটা বাছতেন ও বকরির দুধ দোহন করতেন। আদাবুল মুফরাদ।
ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা বিষয়-সম্পত্তি ও জমিদারি গড়ে তুলো না, তাহলে দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে।’ তিরমিজি।
অন্য বর্ণনা থেকে জানা যায়, বৈধ সীমার মধ্যে অবস্থান করে বাড়িঘর নির্মাণ করা, বিষয়-সম্পত্তি গড়ে তোলা গুনাহর কাজ নয়। এখানে বাড়াবাড়ির পথে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে, যাতে দুনিয়াটাই মানুষের উদ্দেশ্যে পরিণত না হয় এবং মানুষ যেন জীবনের মূল উদ্দেশ্য ভুলে না যায়।
আবদে রুমি (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তালক (রা.)-এর মায়ের কাছে গিয়ে বললাম, আপনার ঘরের ছাদ কত ছোট! তিনি বলেন, হে বৎস! আমিরুল মুমিনিন উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) তার কর্মচারীদের লিখে পাঠিয়েছিলেন : নিজেদের ঘর ও দালানকোঠা বৃহদাকারে নির্মাণ করো না। কেননা তা তোমাদের নিকৃষ্ট যুগের নিদর্শন। আদাবুল মুফরাদ।
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কি শুনছ না, তোমরা কি শুনছ না? নিঃসন্দেহে সরলতা ইমানের অংশ। নিশ্চয়ই সরলতা ইমানের অংশ।’ আবু দাউদ থেকে মিশকাতে।
কোরআন ও হাদিস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে অনুভব করা যায় যে, আল্লাহর অনুগ্রহ পেতে হলে সহজ-সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে হবে। ভালোবাসতে হবে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে। সুখে-দুঃখে পরস্পর পরস্পরের সমঅংশীদার হতে হবে। নিজেদের সদাচরণের মাধ্যমে অন্যের মন জয় করতে হবে।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।