সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তাঁরই প্রশংসা করছি ও তাঁর কাছেই সাহায্য ও ক্ষমা চাচ্ছি। আমরা আমাদের অন্তরের অনিষ্টতা ও মন্দ কর্ম থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইছি। মহান আল্লাহ বলেন, হে ইমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সঠিক কথা বল। তাহলে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ সংশোধন করবেন এবং পাপ ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে (সুরা আল-আহযাব : ৭০-৭১)।
নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা এই উম্মতের ওপর অগণিত অনুগ্রহ করেছেন, তাদের অপরিসীম নিয়ামত দান করেছেন। তিনি তাদের জন্য তাদের দীনকে পূর্ণ করেছেন, তাঁর নিয়ামত তাদের ওপর সম্পূর্ণ করেছেন এবং ইসলামকে তাদের জন্য দীন হিসেবে মনোনীত করেছেন। বস্তুত যে বান্দা আল্লাহর দীনের ওপর অবিচল থাকবে এবং রসুল (সা.)-এর সুন্নতকে আঁকড়ে ধরবে- মৃত্যুর সময় তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সম্মানের সুসংবাদ দেওয়া হবে। আল্লাহর শপথ, এটি হলো সেই মহান মর্যাদা, যা দ্বারা আল্লাহ তাঁর ইমানদার বান্দাদের সম্মানিত করেন এবং এমন উচ্চস্তর যার দ্বারা তিনি অনুগ্রহ করেন তাঁর সেসব ওলিদের ওপর, যারা তাঁর কাছে হিদায়াত কামনা করেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন, যারা ইমান এনেছে, আল্লাহ তাদের সুদৃঢ় বাক্যের দ্বারা দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন (সুরা ইবরাহিম-২৭)।
এ ছাড়া হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই পথভ্রষ্ট, তবে যাকে আমি হেদায়াত দিই সে ছাড়া। সুতরাং তোমরা আমার কাছে হেদায়াত চাও, আমি তোমাদের হেদায়াত দেব। যেহেতু বিবেচ্য বিষয় হলো শেষ অবস্থা, তাই আল্লাহর মুত্তাকি ও সৎ বান্দারা হেদায়াতের পর পথভ্রষ্ট হওয়াকে সবচেয়ে বেশি ভয় করতেন। তাদের কৃত আমল অথবা নবায়নকৃত তওবা যাতে তাদের আর ধোঁকায় ফেলতে না পারে। তাই আমরা আমাদের কোনো গুনাহকে যেন তুচ্ছ মনে না করি, আবার কোনো বড় অপরাধ করলেও আল্লাহর রহমত প্রাপ্তি থেকে যেন নিরাশ না হই।
সাহল ইবনে সাদ আস-সায়েদি (রা.) বলেন : নবী (সা.) মুশরিকদের সঙ্গে যুদ্ধরত এক ব্যক্তির দিকে তাকালেন, যিনি মুসলিমদের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিলেন। তিনি বললেন : কেউ যদি জাহান্নামি লোক দেখতে চায়, সে যেন এই লোকটিকে দেখে। এ কথা শুনে এক ব্যক্তি তার পেছনে যেতে লাগল। সে যুদ্ধ করতে করতে অবশেষে আহত হয়ে গেল। সে দ্রুত মৃত্যু কামনা করল, সে তারই তরবারির অগ্রভাগ বুকে লাগিয়ে উপুড় হয়ে সজোরে এমনভাবে চাপ দিল, তালোয়ারটি তার বক্ষস্থল ভেদ করে পার্শ্বদেশ অতিক্রম করে গেল। এরপর নবী (সা.) বললেন : কোনো বান্দা এমন কাজ করে যায়, যা দেখে লোকেরা একে জান্নাতি লোকের কাজ মনে করে। কিন্তু বাস্তবে সে জাহান্নামিদের অন্তর্ভুক্ত। আর কোনো বান্দা এমন কাজ করে যায়, যা মানুষের চোখে জাহান্নামিদের কাজ বলে মনে হয়, অথচ সে জান্নাতি লোকদের অন্তর্ভুক্ত। নিশ্চয়ই মানুষের যাবতীয় আমল শেষ অবস্থার ওপর নির্ভরশীল। আহ! এই হাদিসটি কত মহান এবং যে এটি নিয়ে চিন্তা করেও এর মর্মার্থ গ্রহণ করে তার জন্য এর বরকত কত বিশাল!
রসুল (সা.) আমাদের জানাচ্ছেন, শুধু নেক আমল করাই মূল বিষয় নয়, বরং বান্দা তার রবের সঙ্গে মিলিত হওয়া পর্যন্ত সৎ আমলের ওপর অবিচল থাকাই ধর্তব্য বিষয়। কেননা, আয়ুর মূল্যায়ন হয় তার শেষ অংশ দ্বারা, আর আমলের মূল্যায়ন হয় তার সমাপ্তি দ্বারা। যেমনটি জাবির (রা.)-এর হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে। রসুল (সা.) বলেছেন : প্রত্যেক বান্দা কিয়ামতের দিন ওই অবস্থায় উত্থিত হবে, যে অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করেছে।
বিশ্বজগতের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত রসুল (সা.) তাঁর উম্মতকে যা-ই শিক্ষা দিয়েছেন এগুলোর মধ্যে বান্দার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাধিক কল্যাণকর হলো অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির করা। কারণ আল্লাহর স্মরণেই মন প্রশান্ত হয় (সুরা : রাদ-২৮) আল্লাহর শরিয়ত, তাঁর এখতিয়ার ও ফয়সালা এর ওপর স্থির হয়, আর তা থেকে সংশয়, সন্দেহ ও কুমন্ত্রণা দূরীভূত হয়। দিতীয়ত আল্লাহর কিতাবের প্রতি মনোযোগ দেওয়া তা তিলাওয়াত ও গভীরভাবে অনুসরণ করা। তৃতীয়ত গোপন ইবাদত করা, যা কেবল আল্লাহই জানেন এটি ইখলাসের নিদর্শন ও সত্যিকার ইমানের প্রমাণ। চতুর্থত মৃত্যুকে স্মরণ করে কবর জীবনের দিকে দৃষ্টি দেওয়া। কেননা এটা আশা- আকাঙ্খা সংক্ষিপ্ত করে এবং সৎ কর্মে উৎসাহিত করে। অগণিত সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক নবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর পরিবার ও সাহাবিদের ওপর। আল্লাহ সুবহানুতায়ালা আমাদের সবাইকে এখলাসের সঙ্গে তার নবীর সুন্নত অনুসরণে আমল করার তওফিক দান করুন; আমিন।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক