প্রতিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে ওঠে। দশম সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দল বর্জনের পথ বেছে নেওয়ায় ভোটের অর্থনীতিতে মন্দাভাব সৃষ্টি হয়। একাদশ সংসদ নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই ফেপে ফুলে স্ফীত হচ্ছে ভোটের অর্থনীতি। ভোটকে কেন্দ্র করে চায়ের পেয়ালায় ঝড় উঠছে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুটি ঈদের কথা বাদ দিলে ‘সংসদ নির্বাচনী উৎসব’ই সবচেয়ে বড় উৎসব, যদিও তা পাঁচ বছর পরপর আসে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও চাঙ্গা হয়ে ওঠে ভোটের অর্থনীতি। দশম সংসদ নির্বাচনে ভোটের অর্থনীতি মার খাওয়ার প্রধান কারণ অর্ধেকেরও বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিল না। ফলে টাকাও সেভাবে গ্রামাঞ্চলে যায়নি। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। এ বছর যেন ঘরে ঘরে প্রার্থী। অন্তত দুই শতাধিক ব্যবসায়ীও এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ফলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে নগদ অর্থের সরবরাহ বাড়বে আগের চেয়ে কয়েক গুণ। অক্টোবরের শুরুতে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত বাংলাদেশের অর্থনীতির হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেগুলো মোকাবিলা করতে পারলে বছর শেষে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের কথা মনে রেখে নির্বাচন কমিশনের জন্য সরকার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ১ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। এ বরাদ্দ আগের বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন ৭০০ কোটি টাকা চেয়েছে নির্বাচনকে নিরপেক্ষ করার জন্য। স্থানীয় নির্বাচন ও অন্যান্য নির্বাচনের জন্য আরও ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে কমিশন। ইতিমধ্যে ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে শহর ও গ্রামের নানা জায়গা। চায়ের দোকান, মুদি দোকান, বিলাসবহুল শপিং মলে চলছে নির্বাচনী আড্ডা ও প্রচার-প্রচারণা; যার একটা শক্ত প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। নির্বাচনে প্রতিটি প্রার্থী ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন নির্বাচনী প্রচারণায়। তবে কোনো কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় যে কোটি টাকার অঙ্কও ছাড়াবে এটি একটি ওপেন সিক্রেট। অনুমিত হিসেবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ব্যয় সার্থক হবে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হলে, নির্বাচনে জনরায়ের সত্যিকারের প্রতিফলন ঘটলে।