শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঋণ জান্নাতের প্রতিবন্ধক

যুবায়ের আহমাদ

ঋণ জান্নাতের প্রতিবন্ধক

পারস্পরিক সাহায্যে পূর্ণ হয়ে ওঠে মানুষের সামাজিক জীবন। সুখে-দুঃখে বন্ধু হয়ে একে অন্যের পাশে দাঁড়ায় মানুষ। অভাবে ঋণ আদান-প্রদানও করে একে অন্যের সঙ্গে। কখনো সেই ঋণই এ দুয়ের ভালোবাসার ফাটল ধরায়। তাই তো আরবিতে একটি প্রবাদ আছে, ‘ঋণ হলো ভালোবাসার কাঁচিস্বরূপ’। ইসলামে ঋণ গ্রহণ বৈধ। মুসলমানের প্রয়োজনে ঋণ দেওয়াও সওয়াবের কাজ। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপবাস থাকলেও দুনিয়াবি কারণে ঋণ করেননি। তবে ইসলামের কাজে ধারকর্য করেছেন বলে হাদিসে পাওয়া যায়। হজরত আবু রাফে (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তি থেকে একটি উষ্ট্রী ধার নেন। অতঃপর তাঁর কাছে উট এলে আবু রাফেকে আদেশ দেওয়া হয় যেন সেই ব্যক্তির উট ফেরত দেন। মুসলিম। ইসলাম ঋণ গ্রহণকে সীমিত আকারে বৈধতা দিয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ঋণ করে আভিজাত্য প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা আজ আমাদের নিত্যদিনের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। যশ-খ্যাতি অর্জনের জন্য অতিরিক্ত খরচের বোঝা গিয়ে পড়ে ঋণের ওপর। পকেটে টাকা না থাকলেও সুন্দর কোনো জিনিস পেলে তা ঘরে আনার লোভ সামলাতে পারে না অনেকে। বিলাসিতার জন্য ঋণ করা কিছুতেই ইসলামসম্মত নয়। হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কারও ঘরে একটি বিছানা তার জন্য, অন্যটি তার স্ত্রীর জন্য, তৃতীয়টি মেহমানদের জন্য এবং চতুর্থটি শয়তানের জন্য।’ মুসলিম।

বিপদে আপদে বিভিন্ন প্রয়োজনে কারও কাছ থেকে ঋণ গ্রহণের অনুমতি দিলেও তা পরিশোধের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে কঠোরভাবে। এমনকি মুমূর্ষু ব্যক্তির ঋণজনিত কোনো হক অনাদায়ী থাকলে তার কর্তব্য হলো তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে পরিশোধের অসিয়ত করা। সূরা নিসার ১১ নম্বর আয়াতে মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধের পর তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঋণ করার আগে প্রত্যেকেরই ভাবা উচিত, ঋণ পরিশোধের মতো হায়াতের নিশ্চয়তা তো নেই। ঋণ পরিশোধের আগেই জীবনপ্রদীপের জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে আমার ঋণ পরিশোধ করবে কে? ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের মতো ইবাদত করে থাকলেও মৃত্যুর পর ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত তার আত্মা জান্নাতের দিকে ঝুলে থাকবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘অন্য সব দিকে ভালো মানুষ হওয়া সত্ত্বেও ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির মৃত্যুর পর ঋণের কারণে তার আত্মা বেহেশতের পথে লটকে থাকবে। যতক্ষণ না তার পক্ষ থেকে কেউ সেই ঋণ পরিশোধ করে না দেয়।’ ইবনে মাজাহ। আর একটু কষ্ট করে হলেও ঋণমুক্ত অবস্থায় পরকালের যাত্রী হলে ক্ষমার পুরস্কারের কথা বলেছেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। হজরত সাউবান (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তির প্রাণ তার দেহ ত্যাগ করে এ অবস্থায় যে সে অহংকার, ঋণ ও খিয়ানত এ তিনটি জিনিস থেকে মুক্ত, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ ইবনে মাজাহ।

লেখক : জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কারি ও খতিব

বাইতুশ শফিক মসজিদ

বোর্ড বাজার (আবদুল গনি রোড), গাজীপুর।

 

সর্বশেষ খবর