বুধবার, ১২ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

আকাশছোঁয়া খেলাপি ঋণ

এই সংস্কৃতির অবসান কাম্য

দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবেই লাখ কোটি টাকার অঙ্ক ছাড়িয়েছে। ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নমনীয় নীতির কারণে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করার সংস্কৃতি আকাশ ছুঁতে চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা; এর ফলে প্রথমবারের মতো অবলোপনের হিসাব বাদে খেলাপি ঋণ লাখ কোটি টাকা ছাড়াল। গত মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি। ২০১৮ সাল শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে এ বছর জানুয়ারি থেকে মার্চÑ এ তিন মাসে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় ২০০৯ সালের শুরুতে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। আর এখন তা বেড়ে প্রায় ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে অর্থাৎ ১০ বছর তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪ গুণ। খেলাপি ঋণের হালহকিকত সম্পর্কে এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক তথ্য। তবে ধারণা করা হয়, প্রকৃত খেলাপি ঋণ আরও অনেক বেশি। অনেক ব্যাংক বড় অঙ্কের ঋণ আদায় করতে পারছে না, আবার তা খেলাপি হিসেবেও চিহ্নিত করছে না। এ ছাড়া শেয়ারবাজারের অজুহাতে প্রতি বছরই ব্যাংকগুলো নানা ছাড় নিচ্ছে। এর ফলে খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসছে না। খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি দেশের অর্থনীতিকে কার্যত গিলে খাচ্ছে। বিশাল অঙ্কের ঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো প্রকৃত ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। ফলে দেশে কাক্সিক্ষতভাবে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। খাতা-কলমে উচ্চ প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও তার সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশবাসী। এ অকাম্য অবস্থার অবসানে ঋণখেলাপিদের কঠোরভাবে দমনের উদ্যোগ নেওয়ার যৌক্তিকতা থাকলেও সরকার ও ব্যাংকগুলো সে পথে হাঁটছে না। ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকারের হুমকি-ধমকি থাকলেও কার্যত তাদের জামাই আদরে পোষা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতির স্বার্থেই এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে নিতে হবে উদ্যোগ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর