রবিবার, ১৬ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

শেরে খাজা, সাইদাবাদী ও চিশতির পাওয়ার হাউস কাহিনি

নঈম নিজাম

শেরে খাজা, সাইদাবাদী ও চিশতির পাওয়ার হাউস কাহিনি

মানুষটা আমার দিকে তাকালেন। বললেন, ‘আমি পীর-ফকির নই। খাজা বাবার অনুসারী। পীর-ফকির দাবি করে সাইদাবাদী আর মুজিবুর রহমান। দুটোই খারাপ। পানি পড়া দিয়া ব্যবসা এই যুগে ওরা কী করে করে? দুলাল তোমাকে কী বলেছে জানি না। আমি খাজাবাবার একজন অনুসারী। নামাজ-কলমা করি। একসময় সালমান আমার ব্যবসায়িক পার্টনার ছিল। এখন আল্লাবিল্লা করে সময় কাটাই। অন্য কোনো কাজ করি না। ব্যবসাও না। আমার এখানে সাংবাদিক আহমেদ নুরে আলম আসে। সৎ মানুষ, আমি তাকে পছন্দ করি। দেশে এমন সৎ সাংবাদিক আরও দরকার।’ আমি কথা বলি না। শুনছি। এরপর তিনি ভারতের বিভিন্ন প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তার ছবি বের করে দেখালেন আমাকে। ভালো ভালো খাবার আসতে থাকে অন্দরমহল থেকে। আমি বিস্ময় নিয়ে সব দেখছি। আলাপ শুরু করলাম বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। তিনি বললেন, বাংলাদেশের অনেক প্রভাবশালী লোক তার বাড়িতে আসেন। বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ নেন। ভারতের অনেক রাজনীতিবিদও তার পরামর্শ নেন। তিনি আরও জানালেন, তার বাবা পুলিশ অফিসার ছিলেন। পুরান ঢাকায় পারিবারিকভাবে বেড়ে ওঠা। এভাবেই আমার প্রথম পরিচয় আনোয়ার চৌধুরী ওরফে শেরে খাজার সঙ্গে। তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন জিল্লুর রহিম দুলাল। তিনি প্রয়াত রাজনীতিবিদ মহিউদ্দিন আহমদের জামাতা। একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা। নেশনটুডে নামে একটি পাক্ষিক ইংরেজি পত্রিকা বের করেন। দুলাল ভাই আমাকে নিয়ে যান। এরপর আমি শেরে খাজার বাড়িতে অনেকবার গিয়েছি। কখনো সংবাদের সন্ধানে, কখনো আড্ডা দিতে। ঘনিষ্ঠতার পর তিনি তার পুত্র রুবেল, মেয়ে সাদিয়া ও স্ত্রীর সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দেন। শেরে খাজার সন্তানরা ইংরেজি শিক্ষা মাধ্যমে পড়তেন। সবাই খুবই আধুনিক চিন্তার অধিকারী। ধানমন্ডির লেকের তীরে জাহাজ ডিজাইনের বাড়ি নিয়ে তখন অনেক মানুষের মাঝে কৌতূহল। সেই কৌতূহলের অংশ হিসেবে আমারও যাওয়া। সময়টা ১৯৯৪-৯৫। এর মাঝে ’৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সরকার-বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। ‘জনতার মঞ্চ’ গঠনের পর মাঝে মাঝে দেখতাম ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে এই বাড়ি থেকে বের হতে। যাতায়াত বেড়ে যায় মিজানুর রহমান চৌধুরী, আবদুস সামাদ আজাদসহ আরও অনেকের। এর মাঝে ছিলেন একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আলীও। ভোটের আগে শেরে খাজা সাংবাদিকদের বললেন, ক্ষমতায় আসবে আওয়ামী লীগ। সমর্থন লাগবে জাতীয় পার্টির। তাই হলো। শেরে খাজা তখন ব্যস্ত। তিনি হঠাৎ করে লাইমলাইটে চলে আসেন। সরকার গঠন নিয়ে অনেককে দেখেছি শেরে খাজার বাড়িতে। ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, আবদুস সামাদ আজাদকে নিয়মিত দেখতাম। জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা নিয়মিত যেতেন। একদিন শুনলাম আ স ম আবদুর রব শেরে খাজার সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেন এবং মন্ত্রী হন।

ইতিহাসের অনেক অজানা অধ্যায় সব সময় আড়ালে থেকে যায়। বঙ্গবন্ধুর ভক্ত ছিলেন শেরে খাজা। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতের অনেক রাজনীতিবিদ তাকে পছন্দ করতেন। কংগ্রেস নেতাদের পাশাপাশি আই কে গুজরাল, দেবগৌড়ার সঙ্গেও তার সম্পর্ক ছিল। তিনি পছন্দ করতেন শেখ কামালকে। বলতেন, একজন মেধাবী সম্ভাবনাময় নেতা ছিলেন শেখ কামাল। শিল্প, সংস্কৃতি, রাজনীতিতে বড় দক্ষতা ছিল শেখ কামালের। আমি একবার বললাম, শেখ কামালকে এত পছন্দ করেন, একটি লেখা লিখে ফেলেন। তিনি বললেন, অবশ্যই লিখব। সেই লেখা আর হয়নি। শেরে খাজা একদিন আমাকে বলেছিলেন, এরশাদ মুক্ত, মঞ্জু মন্ত্রী হচ্ছেন। কিন্তু মিজান চৌধুরীকে কিছু করা যাচ্ছে না আপাতত। মিজান চৌধুরীর শেষ স্বপ্নের সঙ্গে জাতীয় পার্টিই একমত নয়। এরশাদও চান না। আমি বললাম, আওয়ামী লীগের ভিতরে আগ্রহীদের তালিকায় আবদুস সামাদ আজাদের নাম শুনছি। শেরে খাজা বললেন, মনে হয় তা হবে না। বেছে নেওয়া হয় তখনকার জনপ্রিয় অবস্থানে থাকা বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে। দেশবাসীর কাছে পুরো বিষয়টি ছিল এক ধরনের চমক। এরপর শেরে খাজা একদিন ফোন করলেন আমাকে। বললেন, জরুরি কথা আছে। গেলাম তার বাড়িতে। তিনি বললেন, ‘দেখো, সরকার গঠনে আওয়ামী লীগের পাশে ছিলাম। এখন পূর্তমন্ত্রী আমার বাড়ি ভেঙে দিচ্ছে।’ আমি বললাম কী সমস্যা? আপনি ড. আলমগীরকে জানান। তিনি বললেন, ‘ড. আলমগীরকে সবাই সাইড করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রতিমন্ত্রী করে প্ল্যানিং মিনিস্ট্রিতে পাঠিয়েছে।’ আমি হতাশ। বললাম কী জন্য ভাঙবে? জবাবে তিনি বললেন, ‘লেকের পাশ দিয়ে সড়ক নেবে আমার সুন্দর বাড়িটা ভেঙে।’ আমি বললাম, লেকের তীরে হাঁটা পথ হলে তো ভালো। আপনার বাড়ি দেখে দেখে মানুষ হাঁটবে। ছবি তুলবে। খারাপ কী! তিনি আমার এ বক্তব্য শুনে মন খারাপ করলেন।

শেরে খাজা বাড়ি থেকে বের হতেন না। মাঝে মাঝে ভারত যেতেন। আজমির শরিফে থাকতেন অনেক দিন। খাজাবাবার দরবারে গিলাফ তুলতেন। ভারতীয় কিছু রাজনীতিবিদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। তাদের সঙ্গেও দেখাসাক্ষাৎ করতেন। শেরে খাজার মেয়ের বিয়েতে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়া, ত্রিপুরার গভর্নরসহ অনেকে যোগ দিয়েছিলেন ঢাকায়। আমার সঙ্গে তিনি দেবগৌড়াকে পরিচয় করিয়ে দেন। শেরে খাজা ছিলেন আড্ডাপ্রিয়। একবার তার বাড়িতে গিয়ে দেখি তিনি বাঘের বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছেন। আমি বললাম, বাঘের বাচ্চা কি পোষ মানবে? তিনি বললেন, ‘মানবে। বাঘই পোষ মানাই আমি। বাচ্চা মানবে না কেন?’ শেষ পর্যন্ত বাচ্চাগুলোকে আর দেখিনি। আমি একদিন এ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘বাড়িতে থাকা জিনগুলো এই বাঘের বাচ্চাগুলো পছন্দ করে না।’ আমি অবিশ্বাস্য দৃষ্টি নিয়ে তাকাতেই তিনি বললেন, ‘কী বিশ্বাস হচ্ছে না? আচ্ছা এসো।’ ভিতরে নিয়ে গেলেন আমাকে। বললেন, ‘জিনেরা বাচ্চাগুলোকে মেরে ফেলেছে।’ তিনি আমাকে বললেন, ‘বাজান জিনগুলো আমাকেও জ্বালায় রাতে। কবে যে মেরে ফেলবে জানি না।’ বলেই হাসলেন। আমার অবাক বিস্ময় দৃষ্টি দেখে তারপর বললেন, ‘ওরা আমাকে নিয়ে যেতে চায় তাদের দেশে।’ এই বক্তব্যের কিছুদিন পরই শুনলাম শেরে খাজা আর নেই। তিনি হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

বাংলাদেশে আলোচিত আরেকজন ছিলেন জয়পুরহাটের পীর মুজিবুর রহমান চিশতি। তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। বেনজিরের ক্ষমতায় আসার প্রথম ইঙ্গিত দেন এই পীর। তবে বেনজিরকে অনুরোধ করেছিলেন ক্ষমতায় এসে যেন ভুলে না যান। প্রধানমন্ত্রী হয়ে জয়পুরহাট যেতে হবে। বেনজির কথা রাখলেন। প্রধানমন্ত্রী হয়ে প্রথম বাংলাদেশ সফরে আসেন। বেনজির ভুট্টো চলে যান জয়পুরহাটে। বেনজিরের সঙ্গে কীভাবে সাক্ষাৎ হয়েছিল মুজিবুর রহমান চিশতির তা এক অপার রহস্য। মিথ আছে, একটি আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে চিশতির সম্পর্ক ছিল। তারাই লন্ডনে বেনজিরের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করেন। সময়টা আশির দশকের শেষ ভাগ। পাকিস্তানে জিয়াউল হকের তখন একচ্ছত্র অবস্থান। ভুট্টো পরিবারের তখন বড় দুঃসময়। বেনজির লড়ছিলেন পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে। এ লড়াই ছিল কঠিনতম। বেনজির লড়তে লড়তে ক্লান্তি নিয়ে একবার গেলেন তার প্রিয় শহর লন্ডনে। সেখানেই কারও মধ্যস্থতায় মুজিবুর রহমান চিশতির সাক্ষাৎ বেনজিরের সঙ্গে। দীর্ঘ আলাপ, দোয়া সবই হয়। একপর্যায়ে চিশতি বলেছিলেন বেনজিরকে, ‘আপনি ক্ষমতায় আসবেন পাকিস্তানে। প্রধানমন্ত্রীর পদ আপনার কপালে লেখা রয়েছে। জিয়াউল হক থাকবে না। আম খাওয়া হবে না জিয়াউল হকের। তিনি বিদায় হবেন। কেউ রক্ষা করতে পারবে না।’ বেনজির বলেছিলেন, ‘আপনার কথা কি আসলে সত্য হবে?’ জবাবে চিশতি বললেন, ‘সত্য হলে কী দেবেন?’ অক্সফোর্ড-পড়–য়া বেনজির বললেন, ‘কী চান?’ চিশতি বললেন, ‘প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হয়ে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসতে হবে জয়পুরহাটে।’ বেনজির জানতে চাইলেন, ‘জয়পুরহাটটা কোথায়?’ জবাবে চিশতি বললেন, ‘বাংলাদেশের একটি জেলা শহর।’ বেনজির বললেন, ‘আপনার কথা সত্য হলে আমি তাই করব।’ হেলিকপ্টারে বোমা বিস্ফোরণে মারা গেলেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউল হক। বেনজির তার কথা রাখলেন। ক্ষমতায় এসেই জয়পুরহাট যাওয়ার ঘোষণা দেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। তিনি বিস্মিত হলেন জয়পুরহাটে মুজিবুর রহমান চিশতির দরবারে পাকিস্তানের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর আসার ঘোষণায়। রাষ্ট্রপতি এরশাদ তখন আটরশি-ভক্ত। তার মন্ত্রীরা যেতেন সাইদাবাদীর দরবারে। তারা সাইদাবাদীর ট্যালকম পাউডারের মডেল হয়েছিলেন। সবাই বিস্ময় নিয়ে দেখলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে এসেছেন মুজিবুর রহমান চিশতির সঙ্গে দেখা করতে।

এবার আসি হুজুর সাইদাবাদী প্রসঙ্গে। তার পুরো নাম সাইদুর রহমান। রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের পাশে তার দরবার বলেই নামের শেষে যোগ হয়েছে হুজুর সাইদাবাদী টাইটেল। একবার তিনি ধরা পড়লেন কলকাতায়। মুজিবুর রহমান চিশতি ও সাইদাবাদীকে একবার নিজের বাড়িতে ডাকলেন শেরে খাজা। তাদের না জানিয়ে পুরো বৈঠকের দৃশ্য ভিডিওতে ধারণ করলেন তিনি। পরে সেই ভিডিওচিত্র আমি দেখেছি। দুই পীরকে তওবা করার অনুরোধ জানান শেরে খাজা। জবাবে তারা হাসিমুখ নিয়ে বলছেন, ‘আমাদের এক হওয়া দরকার।’ মুজিবুর রহমান চিশতির সঙ্গে সাক্ষাতের অনেক ইচ্ছা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের ব্যস্ততার কারণে হয়ে ওঠেনি। তবে হুজুর সাইদাবাদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে এটিএন বাংলার সিনিয়র সহকর্মী কবি সাইফুল বারীর কারণে। আমি তখন এটিএন বাংলার বার্তা সম্পাদক। সাইফুল বারী ভাই ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। আধুুনিক চিন্তার বারী ভাই ভীষণ স্মার্ট ছিলেন পোশাকে, চালচলনে। পারফিউম ব্র্যান্ড ছাড়া দিতেন না। তিনি অফিসে এলেই বোঝা যেত পারফিউমের ঘ্রাণ শুনে। বারী ভাই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় ছিলেন। এরশাদের প্রেস সচিব ছাড়াও রেডিও-টিভির দায়িত্বও পালন করেছেন। সর্বশেষ ছিলেন জাতীয় সম্প্রচার কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। বারী ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি চমৎকার একজন মানুষ। কবিতা লিখতেন। কিন্তু তিনি কী কারণে হুজুর সাইদাবাদীর ভক্ত ছিলেন তা এক অপার রহস্য। বারী ভাইয়ের অন্যতম ভিন্নমাত্রার অনুরোধ ছিল সাইদাবাদীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ক্যামেরা পাঠানো। আমি ক্যামেরা পাঠিয়ে দিতাম। নির্বাহী সম্পাদক শফিউল হক ভাই বলতেন, তিনি একজন সিনিয়র মানুষ। এসব স্থানে টিভি ক্যামেরা পাঠালে কেমনে হয়? বারী ভাইয়ের কাছে একদিন এটিএন বাংলা অফিসে এলেন হুজুর সাইদাবাদী। আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। এরপর আরেকদিন তার সঙ্গে দেখা শেখ নজরুল সাহেবের অফিসের এক মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে। এই নজরুল সাহেব একসময় লালসবুজ পত্রিকা বের করতেন। সাইদাবাদীর দরবারে অনেক মন্ত্রী, এমপি, মেয়র যেতেন। দোয়ায় অংশ নিতেন।

সেই সাইদাবাদী আওয়ামী লীগের ’৯৬ সালের আমলে একবার আটক হন কলকাতায়। তখন কলকাতা পুলিশে নজরুল নামে একজন ডাকসাইটে কর্মকর্তা ছিলেন। এই কর্মকর্তা সাইদাবাদীর ডিমতত্ত্ব আবিষ্কার করেন। সাইদাবাদী কলকাতায় গিয়ে যেসব নারীর সন্তান হয় না তাদের নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। কলকাতা পুলিশ বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। সন্তানহীন বিধবারা ডিম নিয়ে আসতেন সাইদবাদীর কাছে। সেই ডিমে ফুঁ দিতেন হুজুর। কাঁচা ডিম সিদ্ধ হয়ে যেত। পুলিশ এই আজগুবি গল্প বিশ্বাস করল না। পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল ফাঁদ পাতেন। মহিলা পুলিশের একজনকে পাঠানো হলো ডিম দিয়ে। সেই ডিমে আলাদা গোপন মার্ক রাখা হলো। হুজুর ডিম নিলেন, ফুঁ দিয়ে ফেরত দিলেন। পুলিশ তখনই তল্লাশি চালিয়ে দেখল তাদের ডিম আলাদা পড়ে আছে। ফেরত দেওয়া ডিম সিদ্ধ। পুলিশের ডিম বিশেষ কায়দায় সরিয়ে পাশে আড়াল করে রেখেছেন হুজুর। পুলিশ পরে জানায়, এক ধরনের জাদুর মাধ্যমে ডিম বদলে ফেলা হতো; যা সাধারণ নারীরা ধরতে পারতেন না। পুলিশ আটক করে হুজুর সাইদাবাদীকে। লালসবুজের শেখ নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, এই আটকের পেছনে শেরে খাজার হাত রয়েছে। আমি এ বিষয়ে শেরে খাজাকে প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি হ্যাঁ-না কিছু বলেননি। তবে তিনি কলকাতার পুলিশ কর্মকর্তা নজরুলের তদন্তের প্রশংসা করেন। হুজুর সাইদাবাদীর মুক্তির জন্য আওয়ামী লীগের দুজন প্রভাবশালী মন্ত্রী ভূমিকা রেখেছিলেন। দুজনই এখন প্রয়াত। তারা সরাসরি দিল্লির সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন মুক্তির জন্য। কলকাতায় আটককালে হুজুর সাইদাবাদীর সঙ্গে পাকিস্তানের গভীর সম্পর্কের অভিযোগ আনা হয়। বেনজির ভুট্টোর সঙ্গে পীর মুজিবুর রহমান চিশতির একটা সম্পর্ক ছিল। তেমনি নওয়াজ শরিফের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সাইদাবাদীর। একবার পাকিস্তানে ভোটের আগে নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফ ঢাকায় আসেন হুজুরের দোয়া নিতে। শাহবাজ শরিফকে পাঠিয়েছিলেন নওয়াজ শরিফ। বিমানবন্দরে নেমে শাহবাজ শরিফ সোজা চলে যান সাইদাবাদ দরবারে। দীর্ঘ মোনাজাতে অংশ নেন। এরপর ফিরে যান পাকিস্তানে। এক দিনের জন্যই তিনি ঢাকা এসেছিলেন। নওয়াজ প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার বাড়িতেও তশরিফ রেখেছিলেন সাইদাবাদী হুজুর। সে সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ভবনে হুজুর সাইদাবাদীকে রাষ্ট্রীয় বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়। রাখাও হয় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে। সাইদাবাদী নওয়াজের আমলে রাষ্ট্রীয় অতিথির মর্যাদা পেতেন পাকিস্তানে। এ কারণে পাকিস্তানের মিডিয়ারও কৌতূহল ছিল সাইদাবাদীকে ঘিরে।

পাদটীকা : মুজিবুর রহমান চিশতির শেষ পরিণতি সবাই জানেন তো? প্রতিপক্ষ নিষ্ঠুরভাবে কুপিয়ে হত্যা করে তাকে।

                লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

 

সর্বশেষ খবর