রবিবার, ৩০ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভরসা করুন একমাত্র আল্লাহর ওপর

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

ভরসা করুন একমাত্র আল্লাহর ওপর

আল কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘মানুষ ভেবে দেখুক, একটা সময় তার অস্তিত্বের কথা কেউ কল্পনাও করেনি। আমি তাকে সামান্য এক ফোঁটা শুক্র থেকে সৃষ্টি করেছি। তাকে শোনার ও দেখার শক্তি দিয়েছি। এসব এজন্যই করেছি যেন তাকে পরীক্ষা করতে পারি।’ সূরা দাহর, আয়াত ১-২। কিছুই ছিলাম না থেকে এখন আমি অনেক কিছু হয়েছি। এই অনেক কিছুর পরও আবার কিছুই না- এর মতো জীবনযাপন করতে পারলেই আল্লাহর পরীক্ষায় আমরা উত্তীর্ণ হতে পারব। যখন মায়ের পেটে ছিলাম, তখন আমার কেউ ছিল না। শুধু আল্লাহ ছিলেন। আমি আর আমার আল্লাহ। আল্লাহ খাইয়েছেন। আল্লাহই আমার দেখভাল করেছেন। যখন মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হলাম, তখন যদিও বাবা-মা আমাকে লালন-পালন করেছেন, কিন্তু আমার শরীর-মন, দেহযন্ত্র সবকিছু আল্লাহর নির্দেশেই বেড়ে উঠেছে। একটা সময় বাবা-মার কোল থেকে পৃথিবীর মাটিতে নেমেছি। আস্তে আস্তে অনেক বড় হয়েছি। এখন আমি নিজেই নিজের জন্য যথেষ্ট। হাঁটতে পারি। দৌড়াতে পারি। নিজের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা নিজেই করতে পারি। বাইরে থেকে এমনটাই মনে হয়। আমার জন্য বুঝি আমিই যথেষ্ট। আসলেই কি তাই? না। আসলে তা নয়। মানুষ যত শক্তিশালীই হোক, যত উপকরণই তাকে ঘিরে থাকুক না কেন, সে নিজে কখনই নিজের জন্য যথেষ্ট নয়। এ বড় নির্মম বাস্তবতা। মানুষ যে নিজেই নিজের জন্য যথেষ্ট নয় এ সত্য সে ভুলে যায়। ততক্ষণ সে ভুলে থাকে যতক্ষণ কোনো বিপদ তাকে স্পর্শ না করে। যতক্ষণ অসুস্থতা তার ওপর চড়াও না হয়। অভাব তার ঘরে হামলে না পড়ে। এমনিভাবে মানুষ যখন ছোটখাটো বিপদে পড়ে তখন হাড়ে হাড়ে টের পায় তার শক্তি, তার ক্ষমতা কিছুই নয়, সব মিছে। যারা মুমিন তারা সজাগ হয়। সচেতন হয়। আল্লাহর কাছে ফিরে আসে। কান্নাকাটি করে। ইউনুস নবীর মতো বলে ওঠে, ‘আপনি ছাড়া আমার আর কেউ নেই, নিশ্চয় আমি জালিম ছিলাম।’ বিপদ থেকে উদ্ধার হওয়ামাত্রই মানুষ আল্লাহকে ভুলে যায়। আল কোরআনের একাধিক আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘মানুষ অল্পতেই ঘাবড়ে যায়। যখন সে বিপদে পড়ে তখন মনেপ্রাণে আমাকে ডাকতে থাকে। যখন আমি তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করি, তখন সে এমনভাবে চলাফেরা করে, যেন কখনো সে বিপদেই পড়েনি আর আমাকে ডাকেওনি।’ সূরা আর রুম, আয়াত ৪৯। এ ধরনের আচরণ যারা করে তারাই অকৃতজ্ঞ। বলাবাহুল্য, আমাদের আচরণ ঠিক এ রকমই। বিপদে না পড়া পর্যন্ত মনেই হয় না, আল্লাহ ছাড়া এক পা-ও সামনে এগোনোর শক্তি আমার নেই। আল্লাহ তাওফিক না দিলে পরের নিঃশ্বাসটুকুও নিতে পারব না। একজন মুমিনের জীবনধারা তো এমন হওয়া উচিত নয়। সুস্থতা কিংবা অঢেল জীবনোপকরণ পেলে সে আল্লাহকে ভুলে যাবে, আর বিপদে পড়লে কান্নাকাটি করে বুক ভাসাবে- এটা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। মুমিন সব সময় জানবে আল্লাহ চেয়েছেন বলেই আমি সুস্থ আছি, বিপদমুক্ত আছি, ভালো আছি। যে মুহূর্তে প্রভুর রহমতের চাদর আমার থেকে সরে যাবে সঙ্গে সঙ্গে আমার পুরো জীবন এলোমেলো হয়ে যাবে। তাই সব সময় নিজের ওপর নয়, প্রভুর রহমতের ওপর ভরসা করে চলতে হবে। মনেপ্রাণে সে এ কথাই বিশ্বাস করবে, ‘আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি কত চমৎকার বন্ধু! কত চমৎকার সাহায্যকারী!’ যারা আল্লাহর ওপর ভরসা করে না, ভরসা করে নিজের ওপর, মানুষের ওপর; তাদের আল্লাহ জিজ্ঞাসা করছেন, ‘বল তো, দয়াময় আল্লাহ ছাড়া আর কে তোমাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারবে? এ সত্য যারা বুঝতে পারে না তারা অলীক কল্পনায় ডুবে আছে।’ সূরা মুলক, আয়াত ২০।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর