শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বড়পীর হজরত জিলানি (রহ.)-এর জীবন ও শিক্ষা

মুফতি মিজানুর রহমান - সিনিয়র পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, ঢাকা।

যুগে যুগে আল্লাহর প্রিয় বান্দারা আল্লাহর ইবাদত, ভালোবাসা, পাপমুক্ত জীবন, তওবা-ইসতিগফার, স্বল্পতুষ্টি ও সহজ-সরল জীবনযাপনের মাধ্যমে মানবসমাজে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। এমনই একজন হলেন হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)। যার নাম প্রত্যেক মুসলমানের কাছে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। মুসলমানদের ধর্মীয় জীবনে তাঁর প্রভাব অপরিসীম। তিনি ছিলেন অন্যতম প্রধান একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ইসলামের অন্যতম প্রচারক হিসেবে সুবিদিত। আধ্যাত্মিকতার উচ্চমার্গের জন্য তিনি বড়পীর হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। ইরাকের অন্তর্গত ‘জিলান’ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করায় জিলানি, সম্মানিত হিসেবে আবু মুহাম্মদ মুহিউদ্দিন প্রভৃতি উপাধি ও নামেও তাঁকে সম্বোধন করা হয়। তাঁর জীবনী ও কীর্তিগাঁথা মুসলমানদের হৃদয়ে চিরদিন জীবন্ত হয়ে থাকবে।

পৃথিবীতে আল্লাহর প্রেরিত নবী-পয়গম্বর এসেছেন ১ লাখ বা ২ লাখ ২৪ হাজার। অন্যদিকে কামেল পীর, অলি, দরবেশ, ফকির যে কত এসেছেন তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু সব পীর, ফকির, দরবেশ, অলির সেরা ছিলেন হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের প্রায় ৫০০ বছর পর জন্মগ্রহণ করেন। তখন ইসলাম এক নাজুক অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছিল। আল কোরআন ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ ভুলে মানুষ বিপথে পা বাড়িয়েছিল, ঠিক এমনি সময় বড়পীর ইসলামের পথে মানুষকে ডাক দিয়েছিলেন। হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর বাবার নাম সৈয়দ আবু সালেহ এবং মায়ের নাম বিবি ফাতেমা। হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) ৪৭০ হিজরিতে ইরাকের জিলান শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাগদাদের মহান পীর হজরত আবু সাইদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন মাখরু মির (রহ.) কাছে মারেফাতের জ্ঞানে পূর্ণতা লাভ করেন এবং খেলাফতপ্রাপ্ত হন। আধ্যাত্মিকতা, সততার রয়েছে অনেক ঘটনা, তবে এর মধ্যে প্রসিদ্ধ ঘটনাটি হলো, ইরাকের বাগদাদ ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞানের শহর। পড়াশোনার জন্য আবদুল কাদের জিলানি একদিন বাগদাদ শহরের উদ্দেশে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যাত্রা করেন। কথিত ছিল তারা যে পথ দিয়ে যাবেন ওই পথে ডাকাতের উৎপাত বেশি ছিল। জিলানি যখন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাগদাদ যাত্রা করেন তখন সত্যি সত্যি তাদের দল পথিমধ্যে ডাকাতের কবলে পড়ে। তখন ডাকাত সর্দার জিলানিকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার সঙ্গে কী আছে? তিনি এতটুকুও না ঘাবড়ে অকপটে বললেন, আমার কাছে ৪০টি স্বর্ণমুদ্রা আছে। আর শার্টের বোতামগুলো দেখিয়ে বললেন, এই সেই স্বর্ণমুদ্রা। তখন ডাকাত সর্দার আশ্চর্যান্বিত হয়ে পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, হে যুবক! তুমি তো মিথ্যা কথা বলে আমাদের কাছ থেকে স্বর্ণমুদ্রা লুকাতে পারতে? তখন আবদুল কাদের জিলানি বললেন, মিথ্যা কথা বলতে আমার মা আমাকে নিষেধ করেছেন। এ কথা শুনে ডাকাত সর্দার বললেন, মায়ের আদেশ তুমি এভাবে পালন কর। তখন ডাকাতগুলো অশ্রুসিক্ত নয়নে লুণ্ঠিত মাল ফেরত দিয়ে ডাকাতি করা ছেড়ে দিলেন। বালকের সততায় মুগ্ধ হয়ে তারা ফিরে এলেন ইসলামের আলোকিত ভুবনে।

সর্বশেষ খবর