টাঙ্গাইলের এক সংসদ সদস্য নিজের দলের হাইকমান্ড, সরকার ও দেশবাসীর কাছে হিরো সাজতে গিয়ে প্রকারান্তরে জিরোতে পরিণত হয়েছেন। করোনা দুর্যোগে দেশজুড়ে যখন ধান কাটা শ্রমিকের অনটন চলছে, তখন নিজেকে জনদরদি প্রমাণ করতে কৃষকের কাঁচা ধান কেটে দিয়েছেন কেতাদুরস্ত নারী-পুরুষ সঙ্গীদের নিয়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাননীয় সংসদ সদস্যের ধান কাটার ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ছবিতে দেখা যায়, কাঁচা ধান দলবল নিয়ে কাটছেন মান্যবর এমপি। সেই তামাশার ছবি তোলার সময় অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছেন কৃষক। করোনাকালে কৃষকের ধান কেটে দেওয়ার স্বেচ্ছাশ্রমের কর্মসূচি নেন হাওর এলাকাসহ বিভিন্ন প্রান্তের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। ছাত্রলীগকে বলা হয় স্বাধীনতার ভ্যানগার্ড। বলা হয়, ছাত্রলীগের ইতিহাস মানেই বাংলাদেশের ইতিহাস। গর্ব করার মতো ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও বহু বছর ধরেই ছাত্রলীগ নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা বিতর্ক। করোনাকালে সেই ছাত্রলীগ কৃষকের পাশে দাঁড়িয়ে নন্দিত হয়। যেসব সংবাদমাধ্যমে ছাত্রলীগের সমালোচনাসহ এত দিন তীর ছোড়া হয়েছে, তারাও প্রশংসা করেছে নিজেদের ঐতিহ্যের সঙ্গে ছাত্রলীগের একাত্ম হওয়ার ঘটনাকে। মনে করা হচ্ছে, ছাত্রলীগের ধান কাটা কর্মসূচি প্রশংসিত হওয়ায় কিছু এমপি ও নেতানেত্রী রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে দলবল নিয়ে বিভিন্ন ধান খেতে গিয়ে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। স্থানীয় পত্রপত্রিকা ও কিছু অনলাইন এ ছবিগুলো প্রকাশও করছে। এভাবে নামিদামি ব্যক্তিদের কা-কীর্তি কৃষকের মাঝেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। এমনকি আওয়ামী লীগের ভিতরেও সমালোচনা হচ্ছে। অনেকে বলছেন, এভাবে বিতর্ক সৃষ্টির কোনো মানে নেই। ছাত্রলীগ কোনো ভণিতা ছাড়াই কৃষকের পাশে গিয়ে ধান কেটেছে যা প্রধানমন্ত্রী নিজেও প্রশংসা করেছেন। ছাত্রলীগ সম্পর্কে এত দিন যারা নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতেন তারাও তাদের দেখছেন সাচ্চা বীর হিসেবে। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের যেসব হাইব্রিড নেতা-এমপি ফটোসেশনের জন্য কৃষকের কাঁচা ধান কেটে সর্বনাশ করছেন তাদের ভ- ও প্রতারক বলে ভাবতেও শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার অধিবাসীরা। দুর্নামের ভাগী হতে না চাইলে গণমানুষের পাশে নেতাদের দাঁড়াতে হবে আন্তরিকতা নিয়ে, তাদের লোক হিসেবে। লোক হাসানো সং হিসেবে নয়।