বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

মন্ত্রীদের অতিকথনে জনমনে বিভ্রান্তি

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন

মন্ত্রীদের অতিকথনে জনমনে বিভ্রান্তি

বৈশ্বিক মহামারী কভিড-১৯ বাংলাদেশে হানা দেওয়ার প্রাক্কালে ও পরে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী-নেতাদের বক্তব্য ও বিবৃতি জনমনে কৌতূহল ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। দেশের বিভিন্ন মহল ও জনগণ তাদের বক্তব্য-বিবৃতিগুলোকে ‘অতিকথন’ এবং ‘ফাঁকা বুলি’ বলে আখ্যায়িত করেছে। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। তারপর অতিদ্রুত সারা বিশ্বে তা ছড়িয়ে পড়ে। চীন করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সমগ্র চীনে সংক্রমণ রোধ এবং কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে তারা সমর্থ দেখিয়েছে। এরই মধ্যে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে ভাইরাস তা-ব শুরু করে। সেসব দেশে ভাইরাস প্রতিরোধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সারা বিশ্বে বিভিন্ন দেশে লকডাউন, জরুরি আইন ঘোষণাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কভিড-১৯-কে মহামারী হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ চীনের বহুমাত্রিক যোগাযোগ ও অদূরবর্তী দেশ হওয়া সত্ত্বেও কোনো অদৃশ্য কারণে ২০২০ সালের ৮ মার্চ পর্যন্ত করোনাভাইরাস সম্পর্কে নীরব ও উদাসীন থেকেছে।

২০২০ সালের ৩ মার্চের মধ্যে করোনাভাইরাসের থাবায় চীনসহ ৭৫টি দেশে ৯১ হাজার আক্রান্ত ও ৩ সহস্রাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। সেদিন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘যেহেতু দেশে একজনও করোনা রোগী পাওয়া যায়নি কাজেই কোনো অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে না।’ করোনাভাইরাসের হুমকি থাকা সত্ত্বেও বিমানের ঢাকা-কুনমিংসহ আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করা হয়নি। এ সময়ে প্রায় ৬ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশে এসেছেন বলে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তাদের কোনো কার্যকর পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়নি। এ পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের গাফিলতি, ব্যর্থতা ও দায়িত্বহীনতার জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তা সত্ত্বেও দেশের জনগণকে আশ্বস্ত করে ৮ মার্চ, ২০২০ তারিখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘করোনাভাইরাস মারাত্মক নয়, এ রোগ ছোঁয়াচে মাত্র।’ একই দিনে আরেক মন্ত্রী বলেন, ‘উন্নত দেশের চেয়ে বাংলাদেশে করোনা প্রস্তুতি ভালো।’ তার আগের দিন অর্থাৎ ৭ মার্চ জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) থেকে জানানো হয়, ‘বাংলাদেশ যে কোনো সময় করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে।’ ৮ মার্চ আইইডিসিআর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের ঘোষণা দেয়। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে যায়। এভাবেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম দিক থেকেই দুই মন্ত্রীর বক্তব্য ও বাস্তবতার মধ্যে তফাত দৃশ্যমান হয় এবং জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি শুরু হয়।

২০২০ সালের ১১ মার্চ একজন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী, তখন কোনো ভাইরাস নিয়েই চিন্তা নেই।’ ১২ মার্চ আরেক মন্ত্রী মিডিয়ায় বলেন, ‘করোনা মারাত্মক রোগ নয়, এটা সর্দি-জ্বরের মতো।’ একই দিনে আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বে দেশ করোনামুক্ত রয়েছে।’ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, তিনি পরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ১৩ মার্চ প্রভাবশালী একজন মন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক। করোনা যত বড় শক্তিশালী হোক, আমরা তার চেয়েও শক্তিশালী।’ ১৬ মার্চ একজন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে ঢাকা বিমানবন্দরের মতো ব্যবস্থা উন্নত দেশগুলোতেও নেই।’ অথচ দেশের মিডিয়া ও পত্রপত্রিকার মাধ্যমে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা দূরের কথা জ্বর মাপার যন্ত্রও যে ছিল না তা দেশের জনগণ অবহিত আছে। মার্চের শেষ দুই সপ্তাহে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি যাত্রী বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। এর মধ্যে পরীক্ষা করা হয়েছে মাত্র ৪৬৯ জনকে। অথচ এ সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমান-বন্দরগুলোয় অবতরণকারী সব যাত্রীকে করোনা পরীক্ষা ও ক্ষেত্রবিশেষ কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মন্ত্রীদের এ ধরনের অসার ও অবাস্তব বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তি ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।

২০২০ সালের ১৮ মার্চ প্রভাবশালী এক মন্ত্রী বলেছেন, ‘করোনা মোকাবিলায় প্রয়োজনে চীনের মতো হাসপাতাল বানানো হবে।’ কিন্তু দুঃখের বিষয়, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি হওয়ার পর রোগীরা হাসপাতালের সর্বনিম্ন সুবিধাও পায়নি। নমুনা পরীক্ষা করাতে হাসপাতালের সামনে রাতে লাইন দিয়ে দাঁড়াতে হয়েছে। ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট কেলেঙ্কারি দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ করেছে। চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্যক্তিগত সুরক্ষা কিট পাননি। করোনা পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত কিট পর্যন্ত সরকার সরবরাহ করতে পারেনি। মন্ত্রীর কথামতো চীনের আদলে হাসপাতাল বানানোর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। মন্ত্রীর এ ধরনের ফাঁকা আওয়াজ জনগণকে হতাশ করেছে এবং তার ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অন্যদিকে একই দিনে (১৮ মার্চ) স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে দাবি করেছেন, ‘করোনা নিয়ন্ত্রণে আমেরিকা-ইতালির চেয়েও বেশি সফল বাংলাদেশ।’ ১৯ মার্চ সরকারের আরেক মন্ত্রী মিডিয়ার মাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘আমরা করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি।’ এ বক্তব্য রাখার পর আগস্টের শেষ সপ্তাহ অর্থাৎ পাঁচ মাসের বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অপ্রতিরোধ্যভাবে অব্যাহত আছে। দেশে শনাক্তের ১৭০ দিনের দিন অর্থাৎ ২৪ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী ২ হাজার ৪৮৫ জন আক্রান্ত ও ৪২ জন করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন; যা নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ২০.৪০ শতাংশ। এ অবস্থায় দুই মন্ত্রীর ‘করোনা নিয়ন্ত্রণের’ দাবি কতটা অসার ও হাস্যাস্পদ তা বর্তমানে জনগণের কাছে পরিষ্কার।

২০২০ সালের ২০ মার্চ প্রভাবশালী একজন মন্ত্রী বলেছেন, ‘করোনার চেয়েও আওয়ামী লীগের শক্তি অনেক বেশি।’ বিগত ছয় মাসের করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের শক্তির পরিচয় জনগণ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। জনশ্রুতি আছে, ভোটের আগের রাতে ভোট করার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের থাকলেও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে তারা কী পরিমাণ দুর্বল ও অসহায় তা আজ প্রমাণিত। তার চিত্র বিগত ছয় মাসে জনগণের কাছে প্রকাশিত হয়ে গেছে। মন্ত্রীদের বাগযুদ্ধকে আমলে না নিয়ে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ দিন দিন বাড়তে থাকে। এমনি পরিস্থিতিতে ২২ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী করোনা পরীক্ষা কেন্দ্র বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। পরীক্ষা কেন্দ্র বাড়ার সঙ্গে কভিড-১৯ রোগীর শনাক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ সময় কিছুদিন মন্ত্রীদের কথাবার্তা বন্ধ ছিল। দীর্ঘদিনের নীরবতা ভঙ্গ করে ৩ মে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলে হাসপাতালে জায়গা দেওয়া যাবে না।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, সরকার করোনা পরিস্থিতি প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তাঁর এবং অন্য মন্ত্রীদের আগের বক্তব্যগুলো নাকচ হয়ে যায়। সরকার ইতোমধ্যে তৈরি পোশাক কারখানা ও দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ৫ মে, ২০২০ জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শ কমিটির বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘গার্মেন্ট ও দোকানপাট খোলায় সংক্রমণ বাড়তে পারে।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ বক্তব্য থেকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে যে কোনো সমন্বয় নেই, তা পরিষ্কার হয়ে যায়। ২৩ মে, ২০২০ প্রভাবশালী একজন মন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে দাবি করেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দুর্যোগ মোকাবিলায় এবারও সফল হয়েছেন।’ যদি তাই হয়, তাহলে আগস্টের শেষ সপ্তাহেও কেন দেশ করোনা সংক্রমণের চূড়ায়- জনমণে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।

২০ জুন, ২০২০ প্রভাবশালী একজন মন্ত্রী তাঁর বাসভবন থেকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের বক্তব্য অদূরদর্শী ও দায়িত্বহীন।’ তাঁর এ বক্তব্য থেকে সরকারের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের চিত্রই ফুটে উঠেছে। ২২ জুন তিনি অন্য এক ভিডিওবার্তায় করোনাভাইরাস পরীক্ষা ও রিপোর্ট পেতে হয়রানির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বলেছেন, ‘নমুনা সংগ্রহ ও দ্রুত রিপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা নিন।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকতে অন্য মন্ত্রীর এ ধরনের নির্দেশ দেওয়ায় জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজির ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট কেলেঙ্কারি সবারই জানা। রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদের সঙ্গে করোনা পরীক্ষার অনুমতির চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। এ নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে তখন ১৪ জুলাই, ২০২০ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অজস্র চুক্তি হয়, মন্ত্রীরা এসব পড়েন না।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ ধরনের মন্তব্যে জনমনে কৌতূহল ও একই সঙ্গে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। মন্ত্রীর উপস্থিতিতে চুক্তি হবে, সে চুক্তিতে কী আছে তা মন্ত্রী পড়েননি- এমন দায়িত্বহীন মন্তব্য কোনো মন্ত্রীর কাছ থেকে কেউ আশা করে না। প্রতারক সাহেদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ ধরনের কথা বলতে পারেন। বর্তমানে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৯১টি কেন্দ্র কাজ করছে। রিজেন্ট হাসপাতালের সাহেদের সঙ্গে যে ধরনের আনুষ্ঠানিক চুক্তি মন্ত্রণালয়ের হয়েছে, সে ধরনের অনুষ্ঠান আর কারও সঙ্গে হয়েছে কি? হয়নি। এসব অনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিভিন্ন মহল থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অপসারণের জোর দাবি উঠেছিল। কিন্তু তিনি স্বপদে এখনো বহাল আছেন এবং ২২ জুলাই, ২০২০ তিনি দাবি করেন, ‘আমি মনে করি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভালো নম্বর পেয়েছে।’ স্বাস্থ্য সেক্টরে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ব্যর্থতা ও কেলেঙ্কারি সর্বত্র সমালোচিত। সে সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন দাবি বিভিন্ন মহলে হাসি-তামাশার সৃষ্টি করেছে। জনগণকে বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে এ দাবি অসার বলে প্রমাণিত হয়েছে।

সর্বশেষ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষে এক দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের চিকিৎসক, নার্স ও টেকনোলজিস্টরা নিরলস কাজ করে গেছেন। এর ফলে করোনা আজ আমাদের দেশ থেকে বিদায় নেওয়ার পথে।’ বাস্তবতা বিবেচনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য বিভ্রান্তিমূলক, দায়িত্বহীন ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি যেদিন করোনাভাইরাস বিদায়ের কথা বলেছেন, সেদিন ১২ হাজার ৮৯১ জনকে পরীক্ষা করে ২ হাজার ৬৪৪ জন রোগী শনাক্ত করা হয়েছিল; যা পরীক্ষার তুলনায় আক্রান্তের হার ছিল ২০.৫১ শতাংশ। সেদিন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩৪। তার তিন দিন পর অর্থাৎ ১৮ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী ১৪ হাজার ৬৩০ জনকে পরীক্ষা করে ৩ হাজার ২০০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যার হার ২১.৮০ শতাংশ। এদিনে মৃত্যুর সংখ্যা ৪৬। যে দেশে শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি, সে দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কত দায়িত্বহীন হলে দেশ থেকে ‘করোনা বিদায় নেওয়ার পথে’ বলতে পারেন, তা গবেষণা করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ বক্তব্যে সবচেয়ে ঝুঁকির দিকটি হলো জনগণের কাছে একটি ভুল ও আত্মঘাতী বার্তা পৌঁছে দেওয়া। জনগণের মধ্যে এমনিতেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা কম। ‘করোনা বিদায় নেওয়ার পথে’ হলে জনগণ এখন আর সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগিদ অনুভব করবে না। যার ফলে সারা দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি হয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

লেখক : সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সদস্য, জাতীয় স্থায়ী কমিটি- বিএনপি এবং সাবেক অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান

ভূ-তত্ত্ব বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

সর্বশেষ খবর