মানুষ উঠে দাঁড়াতে জানে, উঠে দাঁড়ায়ও। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, দুর্ভিক্ষ, খরা, সর্বগ্রাসী দাঙ্গা, রক্তক্ষয়ী মহাযুদ্ধ, মহামারী ইত্যাদিতে বারবার মানুষ ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। কিন্তু বারবার মানুষ নিজের প্রাণশক্তিতে শুভবুদ্ধির প্রেরণায় সব ক্ষয়ক্ষতি, গ্লানি-দুঃখ-কষ্ট ঝেড়ে ফেলে আবার উঠে দাঁড়িয়েছে। নতুন প্রভাতে নতুন সূর্যের দিকে তাকিয়ে আবার জীবনে এনেছে নবীন ছন্দ। যখন আমাদের দেশে বারবার শোনা যাচ্ছে অশুভকালের করাল পদধ্বনি, জ্বলছে হিংসার লেলিহান শিখা, ছোবল মারছে ঘৃণা আর বিদ্বেষের কালসাপ তখন কি আমরা হতাশ হয়ে পড়ব? বিশ্বাস হারাব মানুষের প্রতি? না, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। মানুষকে অবিশ্বাস করার কারণ নেই। কারণ এখনো এ দেশে দানবের চেয়ে মানবের সংখ্যা অধিক। তার উজ্জ্বল প্রকাশ দেখতে পাচ্ছি আমরা। অশুভশক্তি পরাজিত হবে আর হাতে হাত মিলিয়ে আমরা উঠে দাঁড়াব। সব ক্ষুদ্র বিভেদ ভুলে এক জাতি এক প্রাণ একতার মন্ত্রে আমরা জীবনপথে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেব। বর্তমানের সন্ত্রাসবাদ নির্মূল, হিংসার প্রশমন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অন্য সমস্যাগুলোর দিকে সমান মনোযোগ দিতে হবে। অনেক জ্বলন্ত সমস্যা আমাদের পোড়াচ্ছে, আমাদের সবার নজর এসব জ্বলন্ত সমস্যার দিকে। তার মধ্যে অত্যন্ত নীরবে আরও একটি বিপদ ধীরে ধীরে ঘনিয়ে আসছে, যে বিপদের পরিণতি হবে অতি ভয়ঙ্কর।
আমাদের বেঁচে থাকার প্রাথমিক প্রয়োজনের তালিকায় ‘খাদ্য’ রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। সৎকর্ম করুক আর অসৎ কর্ম, তা করার জন্য মানুষকে বেঁচে থাকতে হবে আর বেঁচে থাকতে হলে অবশ্যই খাদ্য চাই। আমাদের এই ১৭ কোটি মানুষের কৃষিপ্রধান দেশটির দুই বেলার অন্ন উঠে আসে কৃষি ক্ষেত্র থেকে। সুতরাং দেশটিকে সুজলা সুফলা রাখতে না পারলে সমূহ বিপদ! সে বিপদ ঘনিয়ে আসছে ধীরে ধীরে। এ দেশের কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনের ব্যাপারে কাগজে কলমে যত ফোলানো ফাঁপানো ডাটা দেখানো হোক না কেন কৃষি উৎপাদন কমছে। নির্ভরযোগ্য তথ্য বলছে ২০০৩-০৪ সালে যেখানে ধানের উৎপাদন ছিল খাদ্য চাহিদার পাশাপাশি সেখানে গেল ক’বছরে চাহিদার তুলনায় খাদ্য উৎপাদন বাড়েনি বরং কমেছে। অন্যদিকে, জনসংখ্যা অর্থাৎ খাদকের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। উৎপাদন কমার অন্যতম কারণ কৃষিজমি কমে যাওয়া।
আফতাব চৌধুরী।