রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনাসুরকে বধ করতে হবে

তপন কুমার ঘোষ

করোনাসুরকে বধ করতে হবে

বছর ঘুরে আবারও এসেছে শারদোৎসব- বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রাণের উৎসব।

প্রকৃতি জানান দিচ্ছে, পুজোর আর বেশি দেরি নেই। ঢাকে কাঠির বাড়ি পড়ল বলে। এবার ব্যতিক্রম হলো, দেবী দুর্গা আসছেন শরতে নয়, কার্তিকে মানে হেমন্তে। করোনা আবহে। মহালয়ার অনুষ্ঠান হয়েছে ১৭ সেপ্টেম্বর। ২২ অক্টোবর ষষ্ঠীপুজোর মাধ্যমে পুজোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। শেষ হবে ২৬ অক্টোবর, বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। এদিন সরকারি ছুটি। পঞ্জিকামতে, এবার দেবীর দোলায় আগমন। এর ফল শুভ নয়, মড়ক। গজে গমন। ফল শুভ, শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা।

করোনা মহামারী পাল্টে দিয়েছে আমাদের সব হিসাব-নিকাশ। মন চাচ্ছে পুজোর আনন্দে মেতে উঠতে। কিন্তু বাদ সেধেছে করোনা। এবার পুজো হবে জৌলুসবিহীন। এ বছর বড় বাজেটের পুজো হচ্ছে না। বাজেটে কাটছাঁট করা হয়েছে। করোনার কারণে পুজোর চাঁদাও উঠেছে কম। অন্যবারের চেয়ে এ বছর প্রতিমার বায়না কম হয়েছে বলে জানাচ্ছেন প্রতিমাশিল্পীরা। অনেক মন্ডপে প্রতিমার পরিবর্তে

ঘটপুজো হবে। ছোট সাইজের প্রতিমা বায়না করেছেন অনেকে। একচালা প্রতিমার অর্ডার বেশি। তাই মন ভালো নেই প্রতিমাশিল্পীদের। এবার শুধু মন্দিরপ্রাঙ্গণেই সীমাবদ্ধ থাকবে পুজো। সড়কে বা কোনো খোলা মাঠে অস্থায়ী ম-প নির্মাণ করে পুজো নিষেধ করা হয়েছে। দুশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে প্যান্ডেল নির্মাতাদের। এবার আলোকসজ্জা হবে না। ডেকোরেটর কর্মীদের মাথায় হাত। এমনিতেই লকডাউনের কারণে এদের দুরবস্থা চলছে। পুজোয় দুই পয়সা উপার্জনের আশায় তারা দিন গুনছিলেন। কিন্তু এখন শুধুই হতাশা।

গত বছরের তুলনায় এ বছর পুজোমন্ডপের সংখ্যা কিছু কম হবে বলে জানাচ্ছে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ। সরকারি হিসাবমতে,  এ বছর  সারা দেশে ৩০ হাজারের কিছু বেশি মন্ডপে পুজোর আয়োজন করা হচ্ছে। পূজা উদ্যাপন পরিষদের হিসাবে এ সংখ্যা ৩১ হাজারের মতো। সঠিক সংখ্যা বলা মুশকিল। প্রসঙ্গত, প্রবাসে এবার অনেক শহরেই পুজো হচ্ছে না। করোনার প্রকোপ এখনো তেমন একটা কমেনি। লকডাউনের শুরুতে মানুষের মনে যে ভীতি ছিল তা এখন অনেকটাই কেটে গেছে। এটাই বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে তা পরিত্যাগ করা ভালো। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে প্রতিমা দেখার আনন্দও এবার ভুলে থাকতে হবে। কিন্তু পুজোয় একবার অন্তত মন্ডপে গিয়ে দুর্গা মায়ের মুখ না দেখলে কি চলে! সংক্রমণের ভয় আছে। তাই পুজোপ্রাঙ্গণ যখন ফাঁকা থাকবে তখন একবার না হয় ঘুরে আসা যায়। বাচ্চাদের নিয়ে না বেরনোই উত্তম। বাচ্চাদের সামলানো মুশকিল। বয়স্ক মানুষের করোনার ঝুঁকি বেশি- এ কথা মাথায় রাখতে হবে। সংক্রমণ থেকে নিজে বাঁচতে অথবা অন্যকে বাঁচাতে মাস্ক পরা আর নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। ব্যবহার করতে হবে হ্যান্ড গ্লাভস। ব্যাগে থাকবে অতিরিক্ত মাস্ক। এ ছাড়া রাখতে হবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে আসবে অনেকটাই। নিজেকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব নিজকেই নিতে হবে। অন্যকে দোষারোপ করা যাবে না। কথায় বলে না- আপন বুঝ পাগলেও বোঝে।

বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ এবার পুজো উদ্যাপন-সংক্রান্ত ২৬ দফা গাইডলাইন দিয়েছে। দুর্গাপুজোর থিম হচ্ছে, অসুর তথা অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তির বিজয়। এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে করোনাসুর। এ অসুরকে বধ করতে হবে। আর এজন্যই নানা বিধিনিষেধ।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রবেশ ও প্রস্থানের আলাদা ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে। আলোকসজ্জা, আরতি প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা আয়োজন না করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের বাজি ফোটানো যাবে না। ভক্তিগীতি ছাড়া অন্য কোনো সংগীত বাজানো যাবে না। উচ্চৈঃস্বরে গান না বাজাতে  নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিমা বিসর্জনকালে কোনো শোভাযাত্রা হবে না। এটা সরকারি নির্দেশনা। করোনা সংক্রমণ রোধে এ বিধিনিষেধগুলো আমাদের অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে। পুজোয় সাবধানে থাকুন, ভালো থাকুন। প্রতিমা দর্শনে বের হওয়ার সময় মাস্ক পরতে ভুলবেন না যেন। নাক-মুখ ঢেকে মুখাবরণ পরে বাইরে বের হতে একটু খারাপ লাগে বইকি। কিন্তু উপায় নেই! সামাজিক দূরত্ব অর্থাৎ মানুষে মানুষে ন্যূনতম ৩ ফুট দৈহিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টিও ভুলে থাকলে চলবে না। সব ভুলে উৎসবে যেন আমরা মেতে না থাকি!

সামান্য ভুলের কারণে নিজেকে বিপদে ফেলা বা অন্যের বিপদ ডেকে আনা ঠিক হবে না। বিশ্ব যেন সহসাই করোনামুক্ত হয়- দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার কাছে এটাই আমাদের সবার কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা।

লেখক : পরিচালক, পরিচালনা পর্ষদ, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর