শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

নবী করিম (সা.)-এর চেহারা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম

রসুলে করিম (সা.)-এর শারীরিক সৌন্দর্যের বর্ণনা বিভিন্ন সহি হাদিসে যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে তা একত্রিত করে ‘দার আল-কিতাব ওয়া সুন্নাহ’য় প্রকাশিত ‘দীন ইসলামের সঠিক পথ’ গ্রন্থে যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে, তা সংক্ষিপ্ত আকারে বাংলাদেশি পাঠকের জ্ঞাতার্থে নিম্ন তুলে ধরা হলো : বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (সা.)-এর চেহারা ছিল গোলাকার চাঁদের মতো সবচেয়ে সুন্দর, উজ্জ্বল গোলাপি আভা যেন ভোরের নতুন উদিত সূর্য। তাঁর চেহারার দিকে তাকালে মনে হতো সূর্য যেন তাঁর চেহারায় জ্বলজ্বল করছে। ঘামলে চেহারা আরও উজ্জ্বল ও সুন্দর দেখাত। রসুল (সা.) যখন রাগ হতেন তখন তাঁর চেহারা লাল হয়ে যেত, মনে হতো তাঁর কপালে ডালিম ফলের দানাগুলো নিংড়ে মেখে দেওয়া হয়েছে। লম্বা ঘন পল্লববিশিষ্ট কাজল মাখা সাদা কালো বড় বড় চোখ এবং ভ্রু ছিল চিকন ধনুকের মতো পৃথক। ললাট ছিল প্রশস্ত, উন্নত নাসিকা গোঁফ ছিল ছোট ছোট। সুন্দর ঠোঁট ও মুখ এবং মাঝারি ঘন দাড়ি বিশিষ্ট আকর্ষণীয় সৌন্দর্যপূর্ণ লাবণ্যময়ী এক অপূর্ব মুখমন্ডল চমকে ওঠার মতো। একবার দেখলে মনে হতো যে, আমি তাঁর আগে ও পরে তাঁর মতো এত সুন্দর অন্য কাউকে দেখিনি।

রসুল (সা.)-এর দেহের উচ্চতা ছিল মাঝারি ধরনের। নাদুসনুদুস সুন্দর গঠন, চওড়া পেশিবিশিষ্ট উজ্জ্বল গোলাপি রঙের মসৃণ, মোলায়েম চামড়া দ্বারা তাঁর সমস্ত শরীর আবৃত্ত ছিল। লোমশূন্য সুন্দর দেহে বুক থেকে নাভি পর্যন্ত আবার হালকা একটি চুলের রেখা টানা ছিল। গায়ের ঘাম মুক্তার মতো ঝরত এবং এর গন্ধ ছিল মিশকে আম্বরের চেয়ে বেশি খুশবুদার। উভয় কাঁধের মাঝখানে কবুতরের ডিমের মতো একটু উঁচু ধরনের মোহরে নবুয়ত ছিল। পেট ও বুক ছিল সমান। তাঁর গ্রীবা ছিল রূপা নির্মিত পাত্রের মতো পরিচ্ছন্ন। তাঁর চিত্তাকর্ষক সুন্দর এ দৈহিক গঠনের কোনো তুলনা হয় না যার তুলনা কেবলই তিনি।

রসুল (সা.)-এর হাত ও পা ছিল মাংসল, বড় আঙ্গুলবিশিষ্ট ও পায়ের গোড়ালি ছিল সরু ধরনের। পথ চলার সময় মনে হতো যেন উঁচু থেকে নিচের দিকে দ্রুত নেমে যাচ্ছেন। বড় মাথায় চমকানো কালো চুল কোঁকড়ানোও ছিল না আবার খাড়াও ছিল না। মাথার চুল কানের লতি পর্যন্ত ছিল। ঘাড় ছিল লম্বা। তাঁর হাতের তালু ছিল প্রশস্ত ও রেশম থেকেও নরম এবং সুগন্ধির চেয়ে অধিক সুবাসিত। তাঁর মুখের সামনের দুটো দাঁত একটু পৃথক ছিল, কথা বলার সময় উভয় দাঁতের মধ্য থেকে আলোকরশ্মি বিচ্ছুরিত হতো।

রসুল (সা.)-এর চেহারাসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গের সৌন্দর্যের উপরোক্ত বর্ণনা আমরা এখন মনের আয়নায় দেখার চেষ্টা করতে পারি। একইভাবে যদি আমরা কেউ স্বপ্নে তাঁকে দেখি তাহলে সত্যি সত্যিই এ মহামানবকে দেখার সৌভাগ্য হয়ে যাবে। আবু সাইদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন, ‘ স্বপ্নে আমাকে দেখল সে সত্যিই আমাকে দেখল কারণ শয়তান আমার রূপ ধারণ করতে পারে না।’ বুখারি, মুসলিম। রসুল (সা.) যেমন সুন্দর তেমন আকৃতি ধারণ করার ক্ষমতা শয়তানের নেই। এত সুন্দর আকৃতি ও চরিত্রের অধিকারী ছিলেন বিধায় মহান রব্বুল আলামিনের সবচেয়ে প্রিয় বান্দা হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। এ কারণেই সাহাবায়ে কিরাম তাঁদের জীবনের চেয়েও রসুল (সা.)-কে ভালোবাসতেন। আমরা ঠিক এরূপ ভালোবাসতে পারলে প্রকৃত ইমানদার হতে পারব। আমাদের ভালোবাসার অর্থ হচ্ছে জীবনের সব ক্ষেত্রে রসুল (সা.)-এর সুন্নতের পুরোপুরি আমল করে যাওয়া। আল্লাহ আমাদের সে তৌফিক দান করুন।

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক, রাজউক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর