সোমবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস

এনামুল হক শামীম

ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস

আজ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩তম শুভ জন্মদিন। বাঙালি জাতির মুক্তির মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে জন্ম নেওয়া উপমহাদেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। আমার যৌবনের প্রথম প্রেম, প্রেরণার উচ্ছ্বাস, গৌরবের সংগঠনের শুভ জন্মদিনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি ’৭৫-এ ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে নিহত সব শহীদদের। শ্রদ্ধা জানাই ছাত্রলীগের সব প্রয়াত নেতা-কর্মীকে। শুভেচ্ছা জানাই ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমানের সব নেতা-কর্মীদের। সময়ের প্রয়োজনে জন্ম নেওয়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সময়ের সাহসী সন্তানদের নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে চলেছে। জন্মলগ্ন থেকেই ভাষার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান, সর্বোপরি স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সাত দশকের সবচেয়ে সফল সাহসী সারথী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘শিক্ষা শান্তি প্রগতি’ মানবীয় স্লোগান দিয়ে গঠন করেন ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি। প্রজ্ঞাবান জাতির পিতা জানতেন, অক্ষয় মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে হলে ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আর ঐক্যবদ্ধ ছাত্র সমাজই পারে মানবীয় দেশ গড়ে তুলতে। তারুণ্যের উচ্ছল প্রাণ বন্যায় ভরপুর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা ও কর্মীরা দেশের ইতিহাসকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, লড়াই করেছেন প্রতিটি অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে। ঠিক এ কারণেই বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালি জাতির ইতিহাস, বাংলাদেশের ইতিহাস।’

বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাঙালির ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, ’৫৪-এর সাধারণ নির্বাচনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ পরিশ্রমে যুক্তফ্রন্টের বিজয় নিশ্চিত, ’৫৮-এর আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা, ’৬৬-এর ৬ দফা নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া, ৬ দফাকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পাক শাসকের পদত্যাগে বাধ্য করা এবং বন্দীদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করা, ’৭০-এর নির্বাচনে ছাত্রলীগের অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখসমরে ছাত্রলীগের অংশগ্রহণ, স্বাধীনতাপরবর্তী সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্রে উত্তরণসহ প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগের অসামান্য অবদান দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনের নেতা-কর্মীরা পরে জাতীয় রাজনীতিতেও নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এখনো দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান জাতীয় রাজনীতির অনেক শীর্ষনেতার রাজনীতিতে হাতেখড়িও হয়েছে ছাত্রলীগ থেকে। তবে সংগঠনটির চলার পথ অনেক ক্ষেত্রে কুসুমাস্তীর্ণও ছিল না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই সংগঠনটি বড় ধরনের ভাঙনের কবলে পড়ে। তবে থেমে যায়নি বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া সংগঠন। বরং যারাই ছাত্রলীগ থেকে সরে গিয়েছেন তারাই ক্রমান্বয়ে হারিয়ে গেছেন কালের অতল গহ্বরে। শিক্ষা শান্তি ও প্রগতির পতাকাবাহী এ সংগঠনটি একটি ইতিহাস। বাংলাদেশের ইতিহাস অসমাপ্ত থেকে যাবে যদি ছাত্রলীগের ইতিহাসকে বাদ দেওয়া হয়। প্রগতিশীল রাজনীতি, উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে এসেছে ছাত্রলীগ। ৭১ পরবর্তী সামরিক শাসনের অবসানের জন্যেও আন্দোলন করেছে ছাত্রলীগ। ইতিহাসের ধাপ পেরিয়ে পরে জাতীয় রাজনীতিতেও নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে এবং এখনো দিয়ে যাচ্ছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার অগ্রসেনার ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বিদ্যার সঙ্গে বিনয়, শিক্ষার সঙ্গে দীক্ষা, কর্মের সঙ্গে নিষ্ঠা এবং জীবনের সঙ্গে দেশপ্রেম এর সংমিশ্রণ আর কর্তব্যপরায়ণের সঙ্গে ছাত্রলীগ অতিক্রম করেছে দীর্ঘ ৭৩ বছর।

এশিয়া মহাদেশের অন্যতম গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের দীর্ঘপথ চলায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতা-কর্মী নিজের জীবনকে অকাতরে উৎসর্গ করেছেন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রলীগের সমাবেশে বলেছিলেন, ‘দানবের সঙ্গে লড়াইয়ে যে কোনো পরিণতিকে মাথা পেতে বরণের জন্য আমরা প্রস্তুত। তেইশ বছর রক্ত দিয়ে এসেছি। প্রয়োজনবোধে বুকের রক্তে গঙ্গা বহাইয়া দেব। তবু সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও বাংলার বীর শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করব না।’ বঙ্গবন্ধুর কথাতেই তাঁর একান্ত অনুগত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সতেরো হাজার নেতা-কর্মী মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের বুকের তাজা রক্তে এঁকেছেন লাল-সবুজের পতাকা, এঁকেছেন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এক সার্বভৌম বাংলাদেশের মানচিত্র। সেসব বীর যোদ্ধারাই আমাদের অনুপ্রেরণা, আমাদের শক্তি, আমাদের সাহস। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি সংগঠন হিসেবে দুর্জয়ী কাফেলায় পরিণত হয়েছে। এ জন্য হারাতে হয়েছে অসংখ্য নেতা-কর্মী। সংগঠনের অসংখ্য শহীদ, অগণিত নেতা-কর্মীর জেল-জুলুম-কারাবরণ, নির্যাতন-নিপীড়ন ভোগ, আর নেতা-কর্মীদের এক নদী রক্তের বিনিময়ে রচিত হয়েছে এক সফল রক্তাক্ত ইতিহাস ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। স্বাধীনতা পরবর্তীতে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পরে প্রথমে খুনি মোশতাক সরকার এবং পরে জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার শাসনামলেও জেল-জুলুম-হুলিয়ার শিকার হয়ে অগণিত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে কারাবরণ, দেশত্যাগ, অমানবিক নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে।

বাংলা ও বাঙালির প্রায় সাত দশকের বেশি সংগ্রাম, গৌরব ও সাহসের সারথী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বাংলাদেশের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের গর্বিত অংশীদার এই ছাত্র সংগঠনটি। জাতির ইতিহাসের প্রায় প্রতিটি অধ্যায়েই রয়েছে ছাত্রলীগের প্রত্যক্ষ ভূমিকা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এ দেশের মানুষকে লাল সবুজের একটি পতাকা, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’- জাতীয় সংগীত ও স্বাধীন ভূখন্ডের বাংলাদেশ উপহার দিয়েছে। মেধাবী ও আধুনিকমনা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেশে আবারও প্রজ্বলিত হবে ছাত্রলীগের গৌরব কথা, ছাত্রলীগের ঐতিহ্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের কথা। ছাত্রলীগ মানেই গভীর দেশপ্রেম, আদর্শবোধ ও ত্যাগের মহিমায় পড়াশোনার পাশাপাশি জাতি গঠনে অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখে যাওয়া একটি সাহসী ছাত্র সংগঠন। যা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নেই। ছাত্রলীগের যে ত্যাগ, অর্জন তা অন্য কারোর নেই। ছাত্রলীগের ইতিহাস ছাত্রলীগই। ছাত্র সমাজের নেতৃত্বদানকারী এ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ছিল গৌরবদীপ্ত ও মহিমান্বিত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর ১৯৮১ সালে ১৭ মে দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা মায়ের মমতায় ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করেন, আরও গতিশীলতা দিয়েছেন, করেছেন শক্তিশালী। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব ছাত্রদের হাতেই তুলে দিয়েছেন। অবিবাহিত নিয়মিত ছাত্ররাই এবং বয়সসীমা ২৯ বছরের নিচে যাদের তারাই নেতৃত্বে আসবেন।

ছাত্রলীগ শুধু বিরোধী দলেই নয়, মূল দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরও প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এবং মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছে। বিগত বছরে করোনার সময়ে ছাত্রলীগ করোনায় আক্রান্ত মানুষের মরদেহ দাফন, অসুস্থ মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করা, চিকিৎসা সেবা প্রদান, ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, করোনার মধ্যে কৃষকের ধান কেটে গোলায় তুলে দেওয়ার মতো মানবিক কাজগুলো ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা করেছেন। বিগত সময়ে ছাত্র সমাজের ন্যায্য দাবি আদায়ে জোরাল ভূমিকা রেখেছে। হলের সমস্যা নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে। যখনই অশুভ শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে তখনই রাজপথে সক্রিয় ছাত্রলীগ।

এই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৮ সালের বন্যায় বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলেছিল, বাংলাদেশে এক কোটি মানুষ মারা যাবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিবিসির প্রতিবেদন মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিল। সে সময়ে আমি ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলাম। জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন, সারা দেশে ছাত্রলীগের অফিস, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের হলগুলো রুটি-স্যালাইন বানানোর কারখানায় রূপান্তর হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রুটি-স্যালাইন বানিয়ে বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করেছিল লাখ লাখ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী। অতীতের ধারাবাহিকতায় সেই স্বাক্ষর ছাত্রলীগ ধরে রেখেছে অনেকবার।

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া যখন ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে ছাত্র রাজনীতিকে কলঙ্কিত করেছিলেন, তখন আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রদের হাতে বই-খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালের মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ১২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক বিশাল ছাত্র সমাবেশ আমার হাতে (সে সময় আমি ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম) বই-খাতা তুলে দিয়ে বলেছিলেন, বই-খাতা-কলম হচ্ছে ছাত্রদের প্রকৃত হাতিয়ার। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘শুধু ভালো কর্মী হলেই চলবে না, ভালো ছাত্রও হতে হবে।’ নির্দেশ দিয়েছিলেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করতে হবে। মেধাবীরাই ছাত্রলীগ করবে। ছাত্রলীগ করতে হলে নির্ধারিত বয়স সীমার মধ্যে থাকতে হবে। শুধু বয়সই নয়, নিয়মিত শিক্ষার্থী ও অবিবাহিত হতে হবে। অছাত্র ও বিবাহিতদের ছাত্রলীগে স্থান পায় না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন ইতিহাসের সেরা সাহসী সন্তানেরাই ছাত্রলীগ করে। তিনি বলেছিলেন, সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই। আর ছাত্রলীগ হচ্ছে সোনার মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠান। ছাত্রলীগ না করলে আমি আজকের অবস্থানে আসতে পারতাম না। আমাকে কেউ চিনত না-জানত না। আমার রাজনীতির জন্ম হয়েছে ছাত্রলীগ থেকে। ছাত্রলীগ আমার শৈশবের ভালোবাসা, কৈশরের উচ্ছ্বাস এবং প্রথম যৌবনের প্রেম। ছাত্রলীগ আমার অহংকার, আমার গৌরব, গর্ব এবং অলংকার। আমার রাজনীতির ঐতিহ্য, ছাত্রলীগ আমার অস্তিত্বে মিশে আছে। আজকে অতীতের কথা মনে পড়লেই মন আনন্দের শিহরণ জাগে, স্কুল জীবনে এ সংগঠনের প্রেমে পড়েছিলাম। ‘আমরা সবাই মুজিব হব, মুজিব হত্যার বদলা নিব, এক মুজিবের রক্ত থেকে লক্ষ মুজিব জন্ম নিবে’- স্লোগান দিয়ে স্কুল ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেছিলাম। এরপর কলেজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক ও সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি, পরবর্তী সময়ে জাকসু নির্বাচিত ভিপি হয়েছিলাম। সেই ধারাবাহিকতায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলাম। ১৯৮৯ সালে যখন জাকসু ভিপি ছিলাম, তখন এখনকার মতো এত টেলিভিশন, এত পত্রিকা ছিল না। বিবিসির সাংবাদিক মার্ক টালি আমাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘Sheikh Hasina is more popular Then Ershad or Khalada zia in University campuses; কারণ, সেসময় ডাকসু, জাকসু, বাকসু, ইকসুসহ সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ বিজয়ী ছিল। ছাত্রলীগ মেধাবী ছাত্রদের সংগঠন। সমাজের সব স্তরেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীর বিচরণ রয়েছে। সাবেক ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের নিজস্ব মেধা ও কর্মের মাধ্যমে আজকে সমাজের বিভিন্ন স্তরে সুপ্রতিষ্ঠিত। আজকে ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দৃঢ়তা, সততা নিষ্ঠা এবং সাহসিকতার সঙ্গে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রশংসা করছেন বিশ্ব নেতারা। সবাই জানতে চাইছেন, বিশ্ব যখন করোনায় কাহিল, তখন বাংলাদেশের মানুষের জীবন ও জীবিকা কীভাবে সচল রেখেছেন। কীভাবে দেশের অর্থনীতির গতি ও উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন? দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মিরাকলটা কী? কী চমক আছে জননেত্রীর নেতৃত্বে? শেখ হাসিনা ভালো থাকলেই বাংলাদেশ ভালো থাকবে। ভালো থাকবে ১৬ কোটি মানুষ-এই বিশ্বাস সমগ্র দেশবাসীর। ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী হিসেবে বর্তমান নেতাদের আহ্বান জানাই, ছাত্রলীগের কাজের দ্বারা যেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়। ছাত্রলীগকে সবাই ভালোবাসবে। সবাই পছন্দ করবে। ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলবে ছাত্রলীগ। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, মাদকবিরোধী কার্যক্রমে বেশি সক্রিয় হবে ছাত্রলীগ। বিপদে আপদে ছাত্রদের পাশে দাঁড়াবে ছাত্রলীগ, যেমনটি করোনাকালে দেখেছি, তেমনটিই দেখতে চাই। ছাত্রলীগের প্রতি মানুষের ভালোবাসা-শ্রদ্ধা ও আস্থা থাকবে। সে কাজটির দায়িত্বভার বর্তমান ছাত্রলীগকেই নিতে হবে। কারও কর্মকান্ডে যেন ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ না হয়, সে দিক খেয়াল রাখতে হবে। কারণ ইতিহাস, ঐতিহ্য, গৌরব, অহংকার, স্বর্ণালি অতীতের ধারক বাহক হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগ। আজকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সফল ও স্বার্থক হোক-এই কামনা করছি-জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু।

লেখক : পানিসম্পদ উপমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

সর্বশেষ খবর