মনে পড়ে শৈশবে বাড়িতে ফুলের বাগান ছিল। দেখেছি বাবা ফুলের বাগানে ও সেখানে প্রস্ফুটিত নানা রঙের ফুলের মাঝে মগ্ন থাকতে খুব পছন্দ করতেন। ফুলের পানে তাকিয়ে থাকতে, ফুলের সুবাস নিতে কে না পছন্দ করে। আমরা ভাইয়েরা ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে লেখাপড়ার কাজ সেরে স্কুলে যেতাম। স্কুল থেকে ফিরে খেলাধুলা করতাম। তবে সপ্তাহে এক দুই দিন বাড়ির ফুলবাগানের পরিচর্যায় মেতে থাকতাম। ভালো লাগত। ছুটির দিনে বিশেষ করে শীত মৌসুমে সকাল ১০টা-সাড়ে ১০টার মধ্যে পড়াশোনার নিয়মিত পর্বটি শেষ করে ফুলবাগানে ছুটতাম। ফুলের গাছগুলোর কাছে দাঁড়াতাম। বাড়ির ফুলবাগানটিতে কাজ করা ছিল আমাদের কাছে খুবই আনন্দের। আমাদের বাড়ির এ ফুলবাগানে ছিল বড় গাঁদা, সাদা, গোলাপি ও টকটকে লাল গোলাপের সমাহার।
আমি যখন স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে, তখনকার কথাও বেশ মনে পড়ে। তারুণ্যের এ সময়ে একবার বাড়িতে গিয়ে দেখি নতুন ধরনের কিছু ফুল গাছের চারা বাগানে শোভা পাচ্ছে। জানলাম এগুলো রঙ্গন ফুলের চারা। আব্বা ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ ফুলের চারা এনে বাগানে লাগিয়েছেন। আমরা ভাইয়েরা বিশেষ করে আমরা বড় দুই ভাই পড়াশোনার প্রয়োজনে ঢাকায় থাকতাম। তাই বাসার গৃহসহায়কদের নিয়ে বাবাই এ বাগান পরিচর্যার কাজ করতেন। আমাদের মোহনগঞ্জের ছোট্ট গ্রামীণ শহরের বাড়িটি পুষ্পশোভিত একটি সুন্দর বাড়ি। নাম ‘ছায়ানীড়’।
আমি আজ আমাদের বাড়ি বা কারও বাড়ির বাগান পরিচর্যার কথা বলার জন্য বা অনুভূতি প্রকাশের জন্য এ লেখাটি লিখছি না। এটি হর্টিকালচার ডিপার্টমেন্টের কাজ। আজ এক ভিন্ন ফুল গাছের কথা বলব। সে ফুল গাছটি দেখে আমার হৃদয়ে ছুটে বেড়ানো অনুভূতির কথা বলব। ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ছিল শনিবার। সেদিন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট মুজিববর্ষ উদ্যাপন কমিটি বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স¥ৃতি নিয়ে গড়ে ওঠা ‘বঙ্গবন্ধু কারা স¥ৃতি জাদুঘর’ পরিদর্শনে যায়। আমি সে কমিটির একজন সদস্য হিসেবে মাননীয় প্রধান বিচারপতির সফরসঙ্গী ছিলাম।
নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরাতন এ কারাগার এখন আর বন্দীদের থাকার জায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হয় না। এ কারাগারে থাকা সব কয়েদিকে তাদের নতুন আবাসস্থল কেরানীগঞ্জে অবস্থিত কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। নাজিমউদ্দিন রোডের এ কারাগারে এখনো সম্ভবত কারা কর্তৃপক্ষের কিছু দফতর রয়েছে। পরিদর্শনকালে তা বুঝেছি। বেলা সোয়া ১১টার দিকে নাজিমউদ্দিন রোডের কারাফটকের ভিতরে প্রবেশ করি। মাননীয় প্রধান বিচারপতি ও তাঁর সফরসঙ্গীদের কারা মহাপরিদর্শকসহ কারা কর্তৃপক্ষীয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ও স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব অভ্যর্থনা জানান। আমরা কোথাও না বসে সরাসরি চলে যাই ‘বঙ্গবন্ধু কারা স¥ৃতি জাদুঘর’ এলাকায়।
এ জাদুঘর এলাকাটিতে প্রবেশের পর থেকেই আমার মনের মাঝে কেমন যেন এক ভিন্নরকম অনুভূতি কাজ করতে থাকে। চত্বরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের নজরে আসে একটি ‘কামিনী’ ফুলের গাছ। প্রথমে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্য যেখানে স্থাপিত রয়েছে সেখানে মাননীয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স¥ৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করি। তারপর কামিনী ফুলের গাছটির পাশে এসে আমরা সবাই স্থির হয়ে দাঁড়াই। তাকিয়ে থাকি গাছটির পানে। পাশেই রক্ষিত ছোট্ট সাইনবোর্ডটিতে লেখা আছে ‘এই গাছটি বঙ্গবন্ধু স্বহস্তে রোপণ করেছিলেন।’ এখানে দাঁড়িয়েই একজন মাওলানা সাহেবের নেতৃত্বে আমরা বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করি।
এরপর ‘স¥ৃতি জাদুঘর’ পরিদর্শন করি। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহার করা চৌকি, বিভিন্ন তৈজসপত্র রাখা আছে। একটি ছোট্ট কাপড়ের আরামকেদারাও চোখে পড়ে। কাচঘেরা বাক্সে এ স্মৃতিমাখা জিনিসগুলো সংরক্ষিত রয়েছে। আরামকেদারাটি দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে ৫ ফুট উচ্চতার কোনো মানুষ হয়তো বা এ ছোট আরারকেদারাটি ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো এত দীর্ঘদেহী মানুষের জন্য এ আরামকেদারাটি মোটেই উপযুক্ত ছিল না। কীভাবে তিনি এটিতে বসেছেন! বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত এ কক্ষটি আমরা যখন দেখছিলাম তখন জেল কর্তৃপক্ষের লোকেরা আমাদের কক্ষের ভিতরে স্থাপিত শৌচাগারটিও দেখান। সেটি আজকালকার হাই কমোড বা লো কমোডওয়ালা কোনো শৌচাগার নয়। এটি খুব ছোট একটি সার্ভিস ল্যাট্রিন। এ ঘরটির চওড়া বোধ হয় ৭ থেকে সাড়ে ৭ ফুট হবে। লম্বায় মোটামুটি ১২ অথবা ১৩ ফুট হবে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। জানতে পারিনি যে এ কক্ষটিতে বঙ্গবন্ধু একাই থাকতেন নাকি তাঁর সঙ্গে আরও কেউ থাকতেন। ঘরটি থেকে বেরিয়ে বাঁ দিকে একটি গোসলখানা, সেখানে একটি চৌবাচ্চা রয়েছে গোসল করার জন্য। তারপর একটি রান্নাঘর। কারাগারের কর্মকর্তারা আমাদের জানান, এ রান্নাঘরে কখনো কখনো বঙ্গবন্ধু নিজেও রান্না করেছেন। ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ে এসব বিবরণী উঠে এসেছে। আমরা জেল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাই এ কক্ষে বঙ্গবন্ধু কখন ছিলেন। উত্তরে তারা জানান, সম্ভবত ১৯৫৪ সালের পর থেকে এ কক্ষটিতে বঙ্গবন্ধুকে রাখা হতো। ১৯৪৮ সাল ও তার পরবর্তীতে ’৪৯-৫০ সালের দিকে বঙ্গবন্ধুকে যখন গ্রেফতার করা হয় তখন এ কক্ষটিতে তাঁর থাকার কোনো সুযোগ ছিল না।
পরিদর্শনের এ পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুকে কারাগারের যে কক্ষটিতে রাখা হয়েছিল সে কক্ষটিতে আমাদের নিয়ে যেতে বললাম। আমরা যে সে কক্ষটি দেখতে চাইব জেল কর্তৃপক্ষ সম্ভবত তা ভাবতে পারেননি। পুরনো একটি জরাজীর্ণ ভবন সেটি। ভবনের ওই নির্দিষ্ট কক্ষটি পরিদর্শন করি। সম্ভবত দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থে কোনো দিক থেকেই এ কক্ষটি ৬ ফুটের বেশি হবে না। কক্ষটির মাঝে একটি ছোট্ট শৌচাগারও রয়েছে। এ কারাপ্রকোষ্ঠগুলো না দেখলে কারও প্রত্যক্ষ ধারণা হবে না যে, বাঙালিদের নেতা শেখ মুজিব নামের মানুষটি কী অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করে আমাদের জন্য তথা সমগ্র বাঙালি জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর কারাবরণ কোনোটিই তাঁর কোনো ব্যক্তিগত কারণে ছিল না। ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকা, পাকিস্তান সরকারের বৈষম্য নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করা বা ছয় দফা দিয়ে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন দাবি করা- পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দৃষ্টিতে এসবই ছিল শেখ মুজিবের অপরাধ।
১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সরকার তাঁকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত করে। অভিযোগটি ছিল তিনি নাকি আগরতলা দিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিলেন। শেখ মুজিবকে পাকিস্তানিরা বিচ্ছিন্নতাবাদের অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত করে। কিন্তু অন্যদিকে আপামর বাঙালির কাছে বার্তা পৌঁছে যায় যে, বাংলার এবং বাঙালির স্বার্থ রক্ষার জন্য যদি কোনো নেতা এমন আত্মত্যাগ করে থাকেন তবে তিনি হলেন শেখ মুজিব এবং শেখ মুজিব। মানসিকভাবে পাকিস্তানের দুই অংশের মানুষের মধ্যে এ রকম একটি বিপরীত অবস্থা বিরাজ করছিল। বাঙালির স্বার্থ রক্ষার জন্য তিনি বছরের পর বছর তাঁর জীবনের একটি শ্রেষ্ঠতম সময় নির্জন কারাগারে বিসর্জন দিয়েছেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিব কারাগার থেকে মুক্ত হন। বাংলার মানুষ তাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সেদিন থেকে ৮ জানুয়ারি, ১৯৭২ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন। পাকিস্তানের সেই কারাগারের অভ্যন্তরের পরিবেশ কেমন ছিল তা আমাদের জানা নেই।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আমরা যখন নাজিমউদ্দিন রোডে ‘বঙ্গবন্ধু কারা স¥ৃতি জাদুঘর’ পরিদর্শন করছিলাম তখন বিশেষ করে কামিনী গাছটি আমার কিছু চিন্তার খোরাক জোগায়। আমি নিবিষ্টভাবে এ গাছটির দিকে তাকিয়ে থাকি। শুধু মনে পড়ছিল দেশের লাখো কামিনী গাছের মধ্যে এ গাছটি অনন্য। জাতির পিতার হাতের পরম স্পর্শ ও মমতায় লালিত হয়ে বেড়ে উঠেছে এ কামিনী গাছটি। বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে এ গাছটি রোপণ করেছেন। পরিচর্যা করেছেন নিয়মিত। চারা অবস্থায় এর গোড়ায় পানি দিয়েছেন। অনেক দিন নিড়ানি দিয়ে গাছের গোড়া নিড়িয়ে দিয়েছেন। গাছটি যাতে সতেজ হয়ে ওঠে সে জন্য জেলখানার অভ্যন্তর থেকে জোগাড় করে চারাটির গোড়ায় জৈবিক সারও দিয়েছেন। অপেক্ষায় থেকেছেন কবে এ গাছটি ফুলে ফুলে সুবাসিত হবে।
এত দিন পরে সেই কামিনীর চারা আজ একটি বড় গাছে পরিণত হয়েছে। এ চারাটির বয়স বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির বয়সের চেয়ে বেশি। ভাবতে অবাক লাগে কি পরম মমতায় বঙ্গবন্ধু এ গাছটিকে লালনপালন করেছিলেন! বাঙালি জাতির জন্যও তিনি একই রকম মমতা দিয়ে এবং দৃঢ় সংকল্প নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে বাঙালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ জন্যই তিনি বাংলার অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিব। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৯৪৮ সাল থেকেই শেখ মুজিব স্বপ্ন দেখতেন একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। প্রতিবাদ সোচ্চার হন রাষ্ট্রভাষার দাবিতে। এক অর্থে সেই প্রতিবাদের মাঝেই ছিল বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির বীজ বপন।
’৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তাঁর অবদানকে যদি আমরা ওই স্মৃতিমাখা কামিনী ফুলের চারার সঙ্গে তুলনা করি তাহলে বলতে পারি, ’৫৪, ’৫৬, ’৬২ সালের আন্দোলনগুলো বাংলাদেশ নামক কাক্সিক্ষত চারা গাছটির গোড়ায় জল সিঞ্চনতুল্য। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ছয় দফা প্রণয়ন বাংলাদেশ নির্মাণের আন্দোলনের যৌবনকাল। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন যৌবন পেরিয়ে প্রৌঢ়ত্বে পা রাখে। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। বঙ্গবন্ধুর মমতায় বেড়ে ওঠা কারাগারের ওই কামিনী গাছের চারাটি যেভাবে কালের বিবর্তনে গাছে রূপান্তরিত হয়েছে ’৭১ সালে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিও উপনিবেশ ও প্রাদেশিকতার পরিচয় পেছনে ফেলে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদায় বিশে¡ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
১০ জানুয়ারি, ১৯৭২ সাল, নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে এলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুরু করেন সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু রাষ্ট্রটির গোড়ায় আবারও জল সিঞ্চন। মমতার নিড়ানি দিয়ে যখন দেশটিকে একটি মর্যাদাশীল স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত করলেন, ঠিক তখনই তাঁকে সপরিবার হত্যা করার মধ্য দিয়ে এই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির অগ্রযাত্রা অবরুদ্ধ করার চেষ্টা হয়। আমরা প্রবেশ করি আলো থেকে অন্ধকারে। অলৌকিকভাবে বেঁচে যান জাতির জনকের দুই কন্যা। তাঁরই জ্যেষ্ঠ কন্যার হাতে বর্তমানে এই বাংলাদেশের শাসনভার। পিতৃ আদর্শ অনুসরণ করে তিনি দেশের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন অবিরাম।
দেশ আছে, দেশে সরকার আছে, সরকারপ্রধান আছেন, রাষ্ট্রপ্রধান আছেন। একইভাবে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগারের এ কামিনী চারাটি বেড়ে উঠে আজ একটি বড় বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। বসন্ত এলে পল্লবে পল্লবে পল্লবিত হয়ে শোভিত হয় সফেদ পুষ্পে। আর চারদিকে এর সৌরভ ছড়িয়ে যায়। এ সৌরভে মিশে রয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গাছটির দিকে তাকালেই খুঁজে পাওয়া যায় তাঁর পবিত্র ভাবনা ও পুষ্পপ্রীতি। গাছটির পাশ দিয়ে গেলে যে কোনো বাঙালির মনে হবে এ গাছটি কি পরম মমতায় আমাদের পিতার হাতে লাগানো একটি গাছ। পল্লবিত পুষ্পশোভিত গাছটি এখনো ঠিক ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। এর শাখা-প্রশাখায় বয়ে যায় মৃদু সমীরণ। বুলবুলি, দোয়েল গাছটির শাখায় বসে আপন মনে গান গায়। যেভাবে বাংলার কোমলমতি সন্তানরা প্রতিদিন তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চারণ করে, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’।
নাজিমউদ্দিন রোডের কামিনী ফুলের গাছটি দেখে আমার শুধুই মনে হচ্ছিল শেখ মুজিব নামের যে মালী এ গাছটি রোপণ করে গেছেন তিনি আমাদের জন্য রেখে গেছেন বাংলাদেশ নামের একটি সুন্দর বাগান। যে বাগানটি আজ বাহারি গাছে শোভিত হয়ে পুষ্প ধারণের মধ্য দিয়ে সারা বিশে¡ সৌরভ ছড়িয়ে যাচ্ছে। ভগ্নহৃদয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে আমার গাইতে ইচ্ছে হচ্ছিল ... ‘একই সে বাগানে এসেছে নতুন কুঁড়ি ... শুধু সেই সেদিনের মালী নেই।’
লেখক : বিচারপতি
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
আপিল বিভাগ।