বুধবার, ১৭ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

কাগজশিল্পের সংকট

আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকুন

গত দুই দশকে বাংলাদেশের কাগজশিল্পের বিকাশ অহংকার করার মতো। বাংলাদেশের কাগজ দুনিয়ার অনেক উন্নত দেশেও রপ্তানি হচ্ছে। কাগজ রপ্তানিকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রশংসিত হচ্ছে। অথচ কাগজশিল্পের প্রতি পৃষ্ঠপোষকতার বদলে কর্তৃপক্ষীয় ভুল ও অনুদার নীতি বিকাশমান এ শিল্পের জন্য সংকট তৈরি করছে। চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিদেশ থেকে কাগজ আমদানি এ শিল্পের অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে কয়েক বছর ধরে। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আঘাত হানছে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে দেশি মিলগুলো থেকে সংগ্রহের বদলে বিনাশুল্কে কাগজ আমদানির উদ্যোগ। কাগজশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশন-বিপিএমএর তথ্যানুযায়ী দেশে এখন ছোট-বড় মিলে ১০৬টি কাগজ উৎপাদনকারী শিল্প রয়েছে। যেগুলোর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১৬ লাখ টন; যা স্থানীয় চাহিদার তুলনায় ২ দশমিক ৫০ গুণ বেশি। এক দশক আগেও যেখানে আমদানির মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করা হতো, সেখানে বর্তমানে সব ধরনের কাগজ ও কাগজজাতীয় পণ্য উৎপাদনে দেশ সক্ষমতা অর্জন করেছে। দেশের কাগজ মিলগুলো দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে তাদের পণ্য বিদেশে রপ্তানি করছে। দেশে এককভাবে কাগজের সবচেয়ে বড় ক্রেতা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। প্রতি বছর দরপত্রের মাধ্যমে এনসিটিবি ৮০ হাজার টন কাগজ ও ৪০ কোটি মুদ্রিত বই কিনে থাকে। বিপিএমএ সদস্যরা ২০ বছর ধরে এনসিটিবির চাহিদা অনুযায়ী মানসম্পন্ন কাগজ সঠিক মূল্যে যথাসময়ে সরবরাহ করে আসছে। কিন্তু এ বছর দেশি কাগজের বদলে বিনাশুল্কে বিদেশ থেকে কাগজ আমদানির পাঁয়তারা কাগজশিল্পের অস্তিত্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানকেও করছে প্রশ্নবিদ্ধ। এমনিতেই বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধার অপব্যবহারে এ শিল্পে নাভিশ্বাস সৃষ্টি করছে। পাঠ্যবই ছাপাতে বিদেশ থেকে আমদানি হলে তা কাগজশিল্পের কফিনে পেরেক মারার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে বিবেচিত হবে; যা কোনো অবস্থাতেই কাম্য হওয়া উচিত নয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর