মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী

কোনো দেশেরই এক দিনে স্বাধীনতা আসে না। আমরা পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীন হয়েছি, পাকিস্তানকে পরাজিত করে মুক্ত হয়েছি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে আমাদের মুক্তি আসেনি, স্বাধীনতাও আসেনি। স্বাধীনতা বিরাট জিনিস। পৃথিবীর কোন দেশ পরিপূর্ণ স্বাধীন তা গবেষণা করে দেখতে হবে। তবে ভালো থাকি, বুক ভরে শ্বাস নিতে পারি, কথা বলতে পারি, মানবিক গুণে সমৃদ্ধ হই, মানুষের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ থেকে বিরত থাকি এমন একটা বসবাসযোগ্য সমাজ হলেই আমরা খুশি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাও পুরোপুরি অর্জন করতে পারিনি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমাদের সংকীর্ণতা কাটেনি। কত মীমাংসিত ঘটনাকে টেনেটুনে প্রশ্নবিদ্ধ করছি। জাতির পিতাকে নিয়ে এখনো কতজন নাখোশ, পিতাকে পিতা বলেই স্বীকার করে না, করতে চায়ও না। হায়! পিতৃপরিচয়হীন অধম সন্তান! আমরা কী যে করছি তাই-ই জানি না। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পরিচয় বিশুদ্ধ পিতৃপরিচয়। সেটাই যদি কারও না থাকে তাহলে গর্ব করার থাকে কী? কিছুই না। আমরা তাও বুঝি না, বুঝতে চাইও না। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় শুধু বঙ্গবন্ধু নন, অনেকেরই ভূমিকা আছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা একেবারে সূর্যের মতো জ্বলজ্বলে উজ্জ্বল। এ নিয়ে বিতর্ক মানে নিজের অস্তিত্বের প্রতি সন্দেহ প্রকাশ। ঠিক জানি না কবে আমরা এ সত্য উপলব্ধি করতে পারব। স্বাধীনতা অর্জনের মুক্তিযুদ্ধটা একটা পর্ব। আমাদের যুদ্ধ শত্রুর হাত থেকে মুক্তির যুদ্ধ। শুধু পাকিস্তানি হানাদারদের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি আমরা, দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি-অব্যবস্থা-কালো আইনকানুনের হাত থেকে মুক্তি পাইনি। সে মুক্তি কত দূর জানি না। স্বাধীনতার কল্যাণে দেশের কিছু মানুষ ফুলেফেঁপে উঠেছে, উঠছে। কিন্তু পাকিস্তানি বৈষম্য থেকে এখনকার বৈষম্যের চেহারা আরও প্রকট। যখন পাকিস্তান ছিল তখন পাকিস্তানের সম্পত্তির শতকরা ৯০ ভাগের মালিক ছিল ২২ পরিবার, আজ বাংলাদেশের ৮০-৯০ ভাগ সম্পদের মালিক হয়ে বসে আছে ২২ হাজার বা তারও কিছু বেশি পরিবার। যেজন্য স্বাধীনতা যেজন্য মুক্তিযুদ্ধ তার কানাকড়িও আমরা অর্জন করতে পারিনি। কিছু রাস্তাঘাট-দালানকোঠা অবশ্যই হয়েছে। কিন্তু এতে মানুষের মনুষ্যত্ব বৃদ্ধি পায়নি, বৃদ্ধি পায়নি আপামর জনসাধারণের স্বচ্ছন্দ। গ্রামের যত্রতত্র টিনের ঘরের জায়গায় ইটের ঘর উঠেছে, যেমনটা আইয়ুব আমলে ছনের ঘরের জায়গায় বিডি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বাড়িতে টিনের ঘর উঠেছিল। যে ঘরের ওপর সূর্যের আলো পড়লে চিকচিক করে জ্বলে উঠত। দূর থেকে বোঝা যেত ওইটা কোনো বিডি মেম্বারের অথবা চেয়ারম্যানের বাড়ি। এখনো চেয়ারম্যান আছে, কিন্তু তাদের সে ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি নেই। একসময় যে ছোট্ট চায়ের অথবা পানের দোকান কিংবা অন্যের খেত-খামারে শ্রম দিত তার মধ্যে কেউ কেউ বিদেশে গিয়ে ভাগ্য ফিরিয়েছে। কেউ কেউ আবার বিদেশে লোক পাঠানোর নামে শত শত হাজার হাজার মানুষের টাকা খেয়ে কপাল ফাটিয়েছে। আগে গ্রামে-গঞ্জে শিক্ষকদের সম্মান ছিল, যারা বড়সড় চাকরি-বাকরি করত তাদের সম্মান ছিল। এখন ওসবের কোনো বালাই নেই। একটা অন্য ধরনের সমাজব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর বাবা স্পিকার আবদুল হামিদ চৌধুরীর গাড়ি ছিল। এখন আবু সাঈদ চৌধুরীর বাড়ির পাশের তোতাদেরও ঝকঝকে তকতকে গাড়ি আছে। এটা দোষের নয়, কিন্তু উপলব্ধির অভাবে, যোগ্যতার অভাবে একটা উলটপালট অবস্থা। তাই যখন আমাদের সম্পদ কম ছিল তখন যে স্বস্তি ছিল এখন তার বিন্দুবিসর্গও নেই। সবার মধ্যে কেমন যেন অপ্রাপ্তির হতাশা। অথচ কমবেশি সবার কাছে অর্থবিত্ত আছে। প্রতিদিন দালানকোঠা হচ্ছে, কিন্তু মুখে হাসি নেই। মনে হয় বিবর্তনের সময় এমনটাই হয়। সবকিছু থাকার পরও সর্বত্র কেমন যেন হতাশা, নাই নাই নাই। সমাজে এমন একটা ‘নাই নাই নাই’ ভাব। ব্যবসায়ীদের মধ্যে যেমন ব্যবসা করতে নেমেই দু-এক দিনে কোটি টাকার মালিক হয়ে যাওয়ার আশা, কোটি না হাজার কোটির। রাজনীতিতে আরও দুরবস্থা। রাজনীতিতে প্রকৃত রাজনীতিকের কোনো স্থান নেই। ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে এসে জেঁকে বসেছেন। টাকা-পয়সা ছিটিয়ে সংসদ সদস্য হয়ে কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল বিদেশে সাজা খাটছেন- এ কি আশা করা যায়? যায় না। বাংলাদেশটা ইদানীং দুই ধারায় ভাগ হয়ে গেছে। এক. আওয়ামী লীগ দুই. বিএনপি। আওয়ামী লীগ গর্ব করে স্বাধীনতার পক্ষের দল। কিন্তু গত ১৫-২০ বছরে এমন স্বাধীনতাবিরোধী নেই যারা ডালপালা হিসেবে আওয়ামী লীগে জায়গা না পেয়েছে। কি বিচিত্র ব্যাপার! বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রধান হোতারা তাঁর কন্যার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছেন। জাসদের যে গণবাহিনী বঙ্গবন্ধু সরকারের পতন ঘটাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর বাড়ি ঘেরাও করেছিল সেই অভিযানের অন্যতম নেতা হাসানুল হক ইনু বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভায় দাপটে মন্ত্রিত্ব করেছেন। কী করে যেন যারাই বঙ্গবন্ধুর বিরোধী ছিল, স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশের বারোটা বাজিয়েছে ইদানীং তারা বড় দাপটে আছে। স্বাধীনতার সূর্যসন্তানরা বড় মূল্যহীন। তাদের ছাইচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে কথাগুলো কোনোমতেই পাশ কাটিয়ে যেতে পারছি না, তাই বললাম।

দেশের স্বাধীনতার যেমন সুবর্ণজয়ন্তী তেমনি দেশের পিতার জন্মশতবর্ষপূর্তি- এ এক মহা আনন্দের ও গৌরবের ক্ষণ। এমন তালমিল সব সময় সব দেশের ক্ষেত্রে হয় না। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীতে অবশ্যই আশা করি মীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আর কাদা ছোড়াছুড়ি হবে না। জিয়াউর রহমান বীরউত্তম মোটেই জাতির পিতা নন, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি একজন বীরউত্তম। এ বীরউত্তম খেতাব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সরকার। ভুল করে নয়, দয়া করে নয়, যথার্থই খেতাব পাওয়ার যোগ্য ছিলেন তাই দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা থাকলে জিয়াউর রহমানকে বীরউত্তম খেতাব দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন করাই পাপ। সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে ঐতিহাসিক প্রবাসী মুজিবনগর সরকার বীরউত্তম জিয়াউর রহমানের নামে যে ‘জেড’ ব্রিগেড করেছিল তা যথার্থ ছিল। স্বাধীনতাযুদ্ধের শুরুতে জিয়াউর রহমান কোনো হত্যা বা গণহত্যা করেননি। গণহত্যা বা হত্যা যেটাই হোক হয়ে থাকলে তা করতে হতো বেঙ্গল রেজিমেন্টকে। কিন্তু জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্ট কোনো গণহত্যা করেনি, কোনো হত্যা করেনি। এমনকি তারা একটি পাখিও মারেনি এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বেঙ্গল রেজিমেন্টের মধ্যে অষ্টম বেঙ্গলের সবচাইতে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। সেনা-বিমান-নৌ-বিডিআর-পুলিশ কেউ কোনোখানে সবাই একসঙ্গে যোগদান করেনি। অষ্টম বেঙ্গল আর দ্বিতীয় বেঙ্গল এ দুটি পুরোপুরিভাবে অখ- অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেছিল। তাই জিয়াউর রহমানকে রাজনৈতিকভাবে ছোট করার জন্য যুদ্ধের শুরুতে মানুষ মেরেছে, গণহত্যা করেছে এসব বলা মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করা মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করা। রাজনৈতিক ত্রুটি-বিচ্যুতি যাই-ই থাকুক জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিষ্কলঙ্ক, নিষ্কলুষ এতে কোনো সন্দেহ নেই।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, সেই সঙ্গে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হচ্ছে। কোনটার কী করা হচ্ছে খুব একটা বোঝার উপায় নেই। জাতির পিতার জন্মশতবর্ষে একের পর এক বিদেশি অতিথি আসছেন এটা খুব আনন্দের কথা, গর্বের কথা। কিন্তু দেশের মানুষের যতটা সম্পৃক্ততা আশা করা হয়েছিল ততটা সম্পৃক্ততা দেখছি না। স্বতঃস্ফূর্ততা কেমন যেন নেই বললেই চলে। কিছু দিন আগে টাঙ্গাইলের নেতা ফজলুর রহমান খান ফারুক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে একুশে পদক পেয়েছেন। কী করে পেয়েছেন তার বিন্দুবিসর্গও জানি না। ফজলুর রহমান খান ফারুক একজন সমাজকর্মী হিসেবে, জননেতা হিসেবে, একজন আওয়ামী লীগার হিসেবে আওয়ামী লীগের অথবা আওয়ামী লীগ সরকারের যে কোনো পদক পেতেই পারেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নয়। বিশেষ করে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তো নয়ই। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত তিনি কোনো অস্ত্র ছুঁয়ে দেখেননি। শুনেছি, সাটিয়াচরা যুদ্ধে তিনি অংশ নিয়েছিলেন এজন্য পেয়েছেন। তিনি সাটিয়াচরা ডিফেন্সে ২ এপ্রিল ’৭১ সন্ধ্যাবেলায় একবার গিয়েছিলেন। ফরিদপুরের এক হাওয়ালদার তাকে সেখান থেকে চলে যেতে অনুরোধ করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘আপনার ট্রেনিং নেই, এখানে থেকে কী করবেন?’ খুব সম্ভবত জামুর্কি-পাকুল্যার ছানা মিয়াও তার সঙ্গে ছিলেন। তারা চলে গিয়েছিলেন। আর সেই হাওয়ালদার কয়েক ঘণ্টা পরই হানাদারদের মেশিনগানের গুলিতে প্রাণ হারান, শহীদ হন। তিনি পেলেন না, একুশে পদক পেলেন ফজলুর রহমান খান ফারুক! জামুর্কি-পাকুল্যার জুমারত আলী দেওয়ান সাটিয়াচরা যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন তাকে দেওয়া হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের নেতা হিসেবে যদি দেওয়া হয়, সংগঠক হিসেবে যদি দেওয়া হয় তাহলে সবার আগে আসে জননেতা আবদুল মান্নানের নাম, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে বদিউজ্জামান খান এমপি ও লতিফ সিদ্দিকীর নাম, যদি সিভিল প্রশাসনের নেতৃত্বের জন্য দেওয়া হয় তাহলে শামসুর রহমান খান শাজাহানের নাম আসে অনেক আগে। কারণ তিনি ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল জোনাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন। তুরা রওশনআরা প্রশিক্ষণ শিবিরে ফজলুর রহমান খান ফারুক রাজনৈতিক বক্তৃতা করতেন। সে তো এমএনএ হুমায়ুন খালিদও করতেন। সেখানে হাতেম আলী তালুকদার ছিলেন। কিন্তু তাদের কাউকে না দিয়ে কেন ফজলুর রহমান খান ফারুক মুক্তিযুদ্ধের ওপর একুশে পদক পেলেন, মাহাত্ম্য বুঝলাম না। আওয়ামী লীগের কাউকে পদক দিতে হবে তাহলে মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাককেও তো দেওয়া যেত। তিনি তো প্রত্যক্ষ মুক্তিযোদ্ধা। ১১ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত টাঙ্গাইল থানায় পতাকা তুলেছিলেন। সতীনের ছেলে হিসেবে আমাকে মুছে ফেলার জন্য এসব করে লাভের চাইতে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে, সত্যের অপলাপ হচ্ছে। ফজলুর রহমান খান ফারুক কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হাতে অস্ত্র জমা দেননি, অস্ত্র দিয়েছিলাম আমি। গত ৮ মার্চ জনাব ফজলুর রহমান খান ফারুকের পদক প্রাপ্তিতে এক সংবর্ধনা ছিল। কেন যেন এখন কোনো সভা-সমাবেশে সাধারণ মানুষ খুব একটা দেখি না, সে সভায়ও দেখা যায়নি। তবে প্রতিটি উপজেলা থেকে ব্যাপক নেতা-কর্মী ফজলুর রহমান খান ফারুককে সংবর্ধনা জানিয়েছেন। সেখানে মাননীয় মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকও ছিলেন। অথচ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ১৭ মার্চ সেই একই মাঠে পালন করা হয়েছে। সেখানে নেতা ফজলুর রহমানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ১০ ভাগের ১ ভাগও নেতা-কর্মী ছিলেন না। ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে আওয়ামী লীগ ও সরকার কী করবে তা তারাই জানে। সেদিনও তেমন জনসম্পৃক্ততা হবে বলে মনে হয় না। বিদেশি মেহমানরা অবশ্যই আসবেন, আসছেন। কিন্তু দেশের মানুষের মধ্যে সাড়া জাগানোয় সরকার ও আওয়ামী লীগ অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হচ্ছে। যদিও ইদানীং সবাই বাস্তবতার বাইরে। অনেকেই সত্য শুনতে চায় না, সত্য দেখতেও চায় না। এই না দেখার ভান ভবিষ্যতে বুমেরাং হতে পারে। সেজন্য বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সরকার এবং আওয়ামী লীগকে আরেকটু চোখ-কান খুলে অগ্রসর হওয়ার সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অসম্ভব টানাটানি। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদেরই বর্তমানে অসহায় করে তোলা হয়েছে। আগে তো কোনো কথাই ছিল না। চেঁচামেচি করে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার ব্যবস্থা করে আওয়ামী লীগ ছেড়েছিলাম। বোন আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসেন, কিন্তু কেন যেন মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দাবি করায় বড় বেশি গালাগাল করেছিলেন। মাত্র ২০০০ টাকা ভাতা চাওয়ায় যেসব গালি শুনেছি আজ তো আমার বোনই সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ২০,০০০ হাজার টাকা ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। এখন কী বলতে পারি? সাধারণত ভাইয়েরা বোনদের শক্ত কথা বলতে পারে না, বলেও না। আমি তো আমার ছোট তিন বোনের পিতার মতো ভাই ছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে মায়ের মতো বোন ভাবি। তাই কীই-বা বলতে পারি? তবু এটা বলব, ১০-১২ বছর যাবৎ যারা ভাতা পান সেসব মুক্তিযোদ্ধাকেও যাচাই-বাছাইয়ের জন্য জামুকা থেকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে, এটা আইনত শুদ্ধ নয়। এটা মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদেরও অপমান অসম্মান। আমি অনুরোধ করব, আবেদন করব শুধু নতুন তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য যাচাই-বাছাই করুন, কাউকে বাদ দেওয়ার জন্য নয়। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যারা তালিকাভুক্ত আছে তাদের দলের পরিচয় বের করার চেষ্টা করা উচিত নয়। যখন মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে তখন স্বাধীনতার পক্ষে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো দল ছিল না। আমরা সবাই বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। মুক্তিযোদ্ধারা কেউ বঙ্গবন্ধু ছাড়া অন্য কারও নয়। বঙ্গবন্ধুই বাংলাদেশ আর বাংলাদেশই বঙ্গবন্ধু, এটা আমার অন্তরাত্মার অনুভূতি।

 

লেখক : রাজনীতিক।

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর