শিরোনাম
বুধবার, ১৯ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

রমজান শেষে আত্মসমালোচনার মোরাকাবা

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

রমজান শেষে আত্মসমালোচনার মোরাকাবা

রমজানের চাঁদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই চারদিকে এক অন্যরকম শুদ্ধতা ছড়িয়ে পড়েছিল। ঘরে-বাইরে, হাটে-বাজারে সবখানে তাকওয়ার বীজ বুনে দিয়ে গেছে রোজা। তাই তো সর্বত্র তাকওয়ার শীতল বাতাস বইতে শুরু করেছিল। মসজিদগুলো মুসল্লিতে ভরে উঠেছিল। ধুলো জমা কোরআনে লেগেছিল তিলাওয়াতের সুর। মৃত আত্মা জেগে উঠেছিল। জীর্ণ ইমান সবল হয়েছিল। এভাবেই একটি মাস তাকওয়ার চর্চা করে আমরা শাওয়ালের ১ তারিখে ঈদ উদ্যাপন করেছি। পাঠক! এ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় আপনি অনেক কিছু হয়েছেন। টাকা-পয়সা ক্ষমতায় আপনার কোনো তুলনা নেই। কিন্তু মৃত্যুর পর আপনার টাকা-ক্ষমতা কিছুই কাজে আসবে না। যদি নাজাত নামের সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারেন তাহলেই অনন্ত জীবনে অনাবিল সুখের ঠিকানা লাভ করতে পারবেন। হে আমার ভাই! দুনিয়ায় যেমন সার্টিফিকেট-অভিজ্ঞতার সনদ দিয়ে ভালো চাকরি পেতে হয়, তেমনি আখিরাতেও সুখের ঠিকানা জান্নাত পেতে হলে নাজাত নামের সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে। এক জীবন কেঁদে কেটে খোদার প্রিয় হয়ে নাজাতের সার্টিফিকেট অর্জন করতে হয়। একবার যদি নাজাতপ্রাপ্তদের তালিকায় আপনার নাম উঠে যায়, ব্যস! আপনি সফল। শুধু সফল নন, কোরআনের ভাষায়, ফাউজুন আজিম - চমৎকার সফল। আমরা যারা ইহকাল ও পরকালীন সফলতার সাধনায় ডুবে ছিলাম। গভীরভাবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম সফলতার। তাদের রমজানের এক মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ শেষে আত্মপর্যালোচনা করা উচিত, আমি কতটুকু মুত্তাকি তথা আল্লাহসচেতন হতে পেরেছি। রমজানের আগের জীবন আর রমজান-পরবর্তী জীবনের আচার ব্যবহার, চালচলন কথাবার্তায় আমার বিশেষ কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না। আল্লাহর হক ও বান্দার হকের ব্যাপারে আগে যদি উদাসীন থাকি, রমজানের প্রশিক্ষণ শেষে যত্নবান হতে পেরেছি কতটুকু? আগে যদি এসব বিষয়ে যত্নশীল থাকি তাহলে এ রমজানে আন্তরিকতা কতটুকু বেড়েছে। আল্লাহর পূর্ববর্তী অলিরা মাহে রমজানের শেষ দশক থেকেই এ ধরনের আত্মপর্যালোচনায় নিমগ্ন হতেন। নিজের পক্ষ থেকে যথার্থ ইবাদত-বন্দেগি করার পরও চোখের জলে বুক ভাসিয়ে মাবুদের দরবারে বলতেন, হে পরওয়ারদিগার! তোমার বিশেষ মেহমান রমজানের যথার্থ সম্মান আমি করতে পারিনি।

আমাদের প্রতি মুহূর্তেই খতিয়ে দেখতে হবে আচার-আচরণ, কথাবার্তায় কোথাও মিথ্যার জীবাণু আছে কি না। আমাদের চরিত্রে কোথাও ঝগড়া-ফ্যাসাদ করার প্রবণতা লুকিয়ে আছে কি না। শুধু মুখে বললেই মিথ্যা হয় না, মিথ্যা দেখে চুপ থাকলেও মানুষ মিথ্যাবাদীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। মিথ্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করলেও মানুষ মিথ্যাবাদী হয়। সুতরাং আমাদের দেখতে হবে এক মাসের সিয়াম সাধনা আমাদের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা মিথ্যা নামক পাহাড়টাকে ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিতে পেরেছে কি না।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর