বুধবার, ২৩ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

রক্তদান আন্দোলন

রক্তদান আন্দোলনের জনক ডা. কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার। রক্তদান আন্দোলনের এই প্রবাদপুরুষ ১৮৬৮ সালের ১৪ জুন অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। উনবিংশ শতাব্দীতে রক্ত সঞ্চালনের ফলে মানুষের জীবন রক্ষার পাশাপাশি বহু মানুষ মারা যাওয়ায় পোপ রক্ত সঞ্চালন এবং এ ব্যাপারে সকল প্রকার গবেষণার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ফলে বহুদিন রক্ত সঞ্চালন বন্ধ থাকে। কিন্তু ডা. ল্যান্ডস্টেইনার গবেষণা থেকে বিরত থাকেননি। তিনি এ মৃত্যুর কারণ আবিষ্কারে গবেষণা চালিয়ে যান। ভিয়েনা শহরে ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজিক্যাল অ্যানাটমিতে গবেষণারত এই বিজ্ঞানী তাঁর সহকর্মীদের শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ করে বিভিন্ন পরীক্ষার পর আবিষ্কার করলেন যে মানুষের শরীরে রক্তের তিনটি শ্রেণি বা গ্রুপ আছে। যাদের তিনি ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘ও’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। পরে তাঁর সহকর্মীদের সাহায্যে আরও একটি গ্রুপের আবিষ্কার করেন যা ‘এবি’ হিসেবে চিহ্নিত।    

ডা. ল্যান্ডস্টেইনার প্রমাণ করেন একই গ্রুপ রক্তসঞ্চালনে রক্ত গ্রহিতার মৃত্যু হয় না। ১৯০১ সালের তাঁর এ যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য তাঁকে ১৯৩০ সালে নোবেল পুরস্কার প্রদান করে সম্মান জানানো হয়। বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অত্যাশ্চর্য উন্নতির ফলে মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তো অভাবনীয় অগ্রগতি হয়েছে। ওপেন হার্ট সার্জারি, কিডনি পরিবর্তন, লিভার পরিবর্তন, নবজাতক শিশু প্রভৃতি এখন সাধারণ ঘটনা। যে কোনো কারণে শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে প্রয়োজনীয় রক্ত যদি লোকটির শরীরে সঞ্চালন করা না হয় তবে মানুষটির মৃত্যু হতে পারে। এ রক্ত কেবল মানবদেহ থেকেই সংগ্রহ করা হয়। এর কোনো কৃত্রিম বিকল্প নেই। বাংলাদেশের প্রায় সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন ব্লাড ব্যাংক স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু স্বেচ্ছায় রক্তদানের ব্যাপারে গণসচেতনতা সেভাবে গড়ে ওঠেনি। শিক্ষিত, অশিক্ষিত সাধারণ মানুষতো বটেই, এমনকি স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত লোকেরাও রক্তদান করতে ভয় পান। শিক্ষার অভাব, কুসংস্কার, অনিচ্ছা, অপ্রতুল প্রচার ব্যবস্থা সর্বোপরি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার অভাবই এর মূল কারণ।

যার ফলে পেশাদারি রক্ত বিক্রি বেআইনি হলেও প্রয়োজনে এদের ওপর নির্ভর করতে হয়। এবং এই রক্ত সঞ্চালনে বিভিন্ন মারাত্মক রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এটা অনস্বীকার্য যে ত্রুটিপূর্ণ ব্লাড ব্যাকিংয়ের ফলে এবং কর্তৃপক্ষের আন্তরিক উদ্যোগ না থাকার অভাবে রক্তের চাহিদার তুলনায় জোগান অনেক কম।

রক্তদান একটি সমাজিক কর্মসূচি যা এক গণআন্দোলনে পরিণত হয়েছে। দেশের যুবক-যুবতীরা যদি জীবনে অন্তত একবার রক্তদান করেন তবে প্রয়োজনীয় রক্ত গ্রহণে কোনো ঘাটতি থাকবে না। কোনো রোগীই রক্তের অভাবে মারা যাবে না। রোগীর চাই ব্যাধিমুক্ত নিরাপদ রক্ত যা তাকে দেবে নতুন জীবন। এ সমাজ সবার জন্য, আমরা সবাই সবার সামাজিক কল্যাণে দায়বদ্ধ। সংকল্প করি ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় হোক রক্তের বন্ধনে, রক্তদানের মাধ্যমে।

আফতাব চৌধুরী

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর