শিরোনাম
রবিবার, ১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
ইতিহাস

মৌলিক গণতন্ত্র

ষাটের দশকে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খান স্বৈরাচারি পদ্ধতির শাসনতন্ত্র প্রবর্তন করেন। ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ নামের কিম্ভূতকিমাকার শাসন চাপিয়ে দেন। ১৯৬০ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে মৌলিক গণতন্ত্রী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর এক মাস পর ১৪ ফেব্রুয়ারি হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে জেনারেল আইয়ুব পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ও সংবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা লাভ করেন। ১৯৬২ সালের ১ মার্চ সংবিধান ঘোষণা করা হয়। এ সংবিধানে পাকিস্তানের দুই অংশের ৮০ হাজার মৌলিক গণতন্ত্রীর ভোটে প্রেসিডেন্ট এবং পার্লামেন্ট সদস্যদের নির্বাচনের ব্যবস্থা রাখা হয়। সরকার বা রাষ্ট্র প্রধান নির্বাচনে সাধারণ মানুষকে প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। জেনারেল আইয়ুব খান নতুন শাসনতন্ত্র অনুসারে ১৯৬৫ সালের ২ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আয়োজন করেন। ৮০ হাজার মৌলিক গণতন্ত্রীর ভোটে তিনি নিজেকে ‘নির্বাচিত’ ঘোষণা করেন। সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খান ‘নির্বাচিত শাসক’ হিসেবে আবির্ভূত হন। নির্বাচিত শাসক হিসেবে শপথ নিয়েও স্বস্তি পেলেন না স্বৈরশাসক আইয়ুব খান। মৌলিক গণতন্ত্রের নামে ৮০ হাজার লোককে পক্ষে এনে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ফন্দি এঁটেছিলেন তিনি। তার এ জারিজুরি মেনে নেয়নি বাংলাদেশের মানুষ। শুধু বাংলাদেশ নয়, পাকিস্তানের পশ্চিমাংশেও আইয়ুব -বিরোধী মনোভাব দানা বেঁধে উঠতে থাকে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে যুদ্ধোন্মাদনার সৃষ্টি করা হয়। ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পরিকল্পিতভাবে যুদ্ধ বাধিয়ে দেওয়া হয় ভারতের সঙ্গে। ভারতবিরোধী জুজু দেখিয়ে জনমত পক্ষে আনার এ চেষ্টা অবশ্য সফল হয়নি। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঙালির আত্মোপলব্ধিতে নতুন মাত্রা সংযোজন করে। এ যুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বা আজকের বাংলাদেশ ছিল একেবারে অরক্ষিত। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর মূলশক্তি নিয়োজিত ছিল পশ্চিম অংশে। নিজেকে ফিল্ড মার্শাল বানানোর খায়েশ পূরণ করতে আইয়ুব খান যে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন তা তার জন্য সুখকর হয়নি।

জাফর খান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর