শিরোনাম
রবিবার, ১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

চিকিৎসকদের মর্যাদা দিন

অধ্যাপক ডা. মো. সোহরাব আলী

স্বাধীনতার পর সরকারি চাকরিতে আমাদের চিকিৎসকদের পদবি ছিল ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন’। এমবিবিএস ডিগ্রিধারী সবার জন্য একই বেতন স্কেল ছিল আর কোনো প্রমোশনও ছিল না। একই পদবি নিয়ে চাকরিতে ঢুকতে ও বেরোতে হতো। অনেক বাপ-বেটা এভাবে অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন  হিসেবে একই পদবি নিয়ে একসঙ্গে চাকরি করতেন। বিএসএমএমইউর ভিসি আমার ছাত্র অধ্যাপক কনককান্তি বড়ুয়ার বাবা দীর্ঘ কয়েক বছর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন আর ছেলে ডাক্তার কনক ছিলেন ঢাকা মেডিকেলের কর্মকর্তা। এ অস্বাভাবিক আর করুণ চাকরি জীবন ডাক্তারদের ললাট থেকে খসানোর জন্য আমি কিন্তু পণ করেছিলাম- ক্যাডার সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করবই। কেননা পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে ষাটের দশক থেকেই এমএসপি (মেডিকেল সার্ভিসেস অব পাকিস্তান) চালু ছিল। যাতে ধাপে ধাপে বিভিন্ন বেতন স্কেল ছিল আর প্রমোশনের ধারাবাহিক নিয়ম ছিল। ১৯৭৭-৭৮ দুই বছর আমি ছিলাম বিএমএর নির্বাচিত সর্বকনিষ্ঠ সভাপতি। বয়স ছিল ৩৩ বছর। প্রকৌশলী-কৃষিবিদদের নিয়ে টেকনোক্র্যাট আন্দোলন করেছি। আমি ছিলাম অ্যাকশন কমিটির চেয়ারম্যান। কৃষিবিদদের নেতা ছিলেন মির্জা জলিল আর প্রকৌশলীদের নেতা ছিলেন আমার স্ত্রীর বান্ধবীর স্বামী কাশেম সাহেব। এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আমরা কয়েক বছরেই ক্যাডার সার্ভিস চালু করতে সক্ষম হই যা বিসিএস (২৩টি ক্যাডারসহ) নামে সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগ পদ্ধতির জন্ম দেয়। এর ফলে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সুপারিশের মাধ্যমে সরকার কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া শুরু করে। আফসোস! বিসিএস (হেলথ) চালু হওয়ার পরও কিন্তু আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কোনো চিকিৎসক কর্মকর্তা দেখতে পাই না। আমরা এখনো শাসিত হচ্ছি প্রশাসনিক ক্যাডারের একক কমান্ডে। কারণ আমরা তো ডাক্তার, আমরা আবার অফিসার বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হতে চাই কেন? তবে আমি ডাক্তার হয়েও পদমর্যাদাসম্পন্ন একজন অফিসার বনে গিয়েছিলাম যখন আমি ১৯৯৯-এর সেপ্টেম্বর থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে পিএসসির সদস্য ছিলাম। করোনার অভিজ্ঞতার পর হয়তো চিকিৎসকদের মর্যাদার কিছুটা উন্নতি হতে পারে। যার ফলে হয়তো বিবেকবান মানুষ তথা যারা রাষ্ট্র চালান তাদের উপলব্ধি হবে যে মন্ত্রণালয়গুলো নিজ নিজ পেশার কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত হলে রাষ্ট্রের প্রতি সবার অংশীদারির সুযোগ সৃষ্টি হবে।

 লেখক : বিএমএর সাবেক সভাপতি ও পিএসসির সদস্য।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর