শুক্রবার, ৬ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

হে বান্দা! প্রভুর প্রেমে কেন সাড়া দাও না

মাওলানা রফিক আহমদ ওসমানী

হে বান্দা! প্রভুর প্রেমে কেন সাড়া দাও না

পৃথিবী নামের মানবগ্রহে মানুষ ছাড়াও জানা-অজানা আরও অনেক সৃষ্টিরাজি রয়েছে। পৃথিবীর বাইরে রয়েছে আরও অগণিত সৃষ্টিকুল। গ্রহ-নক্ষত্র, গ্যালাক্সি-মিল্কিওয়েসহ কত যে সৃষ্টিরহস্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রহস্যঘেরা মহাশূন্যে তার খুব কমই আবিষ্কার করতে পেরেছি আমরা। এতই কম আবিষ্কার করতে পেরেছি যে মহাসমুদদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে যদি একটি সুচের আগা পানিতে ডুবিয়ে দিই, সুচ তোলার পর যতটুকু পানি সুচের মাথায় দেখা যাবে তার চেয়েও অনেক কম পরিমাণ সৃষ্টিরহস্য আমাদের জ্ঞানের ঝুড়িতে জমা পড়েছে। তাহলে বুঝুন কত বিশাল সৃষ্টিরহস্য এখনো আবিষ্কারের অপেক্ষায়! কত বিপুল সাম্রাজ্য গড়েছেন আল্লাহ! এত বিশাল সাম্রাজ্যে আমি আপনি একটি বিন্দুর চেয়েও ছোট। বলা যায় উল্লেখযোগ্য কিছুই না। এ বিশাল সৃষ্টিরাজির সবকিছু আল্লাহ নিজ শক্তিতে পরিচালনা করছেন। তিনি সবকিছু দেখেন, শোনেন এবং সঠিকভাবে তদারকি করেন। এ সম্পর্কে আল কোরআনে তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘আলালাহুল খালকু ওয়াল আমর। তাবারাকাল্লাহু রব্বুল আলামিন। জেনে রাখ! সৃষ্টি ও পরিচালনা শুধু তিনিই করেন। তিনি বড়ই বরকতময় আল্লাহ। সব সৃষ্টিরাজির লালনপালনও তিনিই করেন।’ সুরা আরাফ, আয়াত ৫৪। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘একমাত্র আল্লাহতায়ালাই সবকিছুর স্রষ্টা। সৃষ্টিরাজির পরিচালনাও তিনি করেন। তার হাতেই রয়েছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর চাবিকাঠি।’ সুরা জুমার, আয়াত ৬২-৬৩। এ সৃষ্টিনৈপুণ্য দেখেই মানুষ তাঁর প্রতি ইমান আনবে। তাঁকে বিশ্বাস করবে। তাঁর দেখানো পথে চলে অনাবিল জান্নাতের দিকে এগিয়ে যাবে। কিন্তু যারা চোখ থাকতে অন্ধ, বিবেক থাকতেও বদ্ধ, তারা খোদার এ সৃষ্টিকৌশল সম্পর্কে ভাবে না, তাঁর প্রতি বিশ্বাসও রাখে না। তাদের খুব দরদি ভাষায় নসিহতের সুরে আল্লাহ বলেছেন, ‘হে আমার পথভোলা বান্দা! চোখ খুলে দেখ ঘাসের ওপর একটি শিশিরবিন্দু থেকে শুরু করে মহাশূন্যের অগণিত গ্যালক্সি-মিল্কিওয়ে যা দেখছ এ সবই আমার সৃষ্টি। তোমরা যারা আমাকে ভুলে আছ, আমাকে ছেড়ে যাদের অনুসরণ কর তারা কী সৃষ্টি করেছে আমাকে দেখাও। আসলে তারা একটি শিশিরবিন্দুও সৃষ্টি করেনি। তার পরও যারা আমার আদরমাখা ভালোবাসার ডাকে সাড়া দাওনি, তোমরা আসলেই ভুল পথে হাঁটছ।’ সুরা লুকমান, আয়াত ১১। এ বিশ্বচরাচর আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। তিনিই সবকিছু পরিচালনা করছেন। এমনকি আমাকে আপনাকেও তিনি প্রেমের চাদরে জড়িয়ে রেখেছেন। শুধু আমাদের চিন্তাশক্তিকে ছেড়ে দিয়েছেন আমাদের দায়িত্বে। যাতে তাঁর এ প্রেম জড়ানো চাদরের স্পর্শে তাঁকে খুঁজে নিতে পারি। তাঁর অফুরন্ত নিয়ামতের সাগরে ডুবে থেকে তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দা হতে পারি। আল্লাহ বলেন, ‘ওয়াহাদায়না হুননাজদাইন। আমি মানুষকে দুটি পথ দেখিয়েছি।’ সুরা বালাদ, আয়াত ১০। আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ইন্না হাদায়না হুসসাবিলা ইম্মা শাকিরাও ওয়া ইম্মা কাফুরা। আমি মানুষকে দুটি পথই বলে দিয়েছি। এখন চাইলে সে কৃতজ্ঞতার পথে হাঁটতে পারে অথবা অকৃতজ্ঞার গর্তে তলিয়ে যেতে পারে।’ সুরা দাহর, আয়াত ৩।

আমরা যদি কৃতজ্ঞ হই, ভালো পথে চলি, শুকরিয়ার জীন্দেগি যাপন করি তবে আল্লাহ আমাদের ওপর রহমতের ঝরনাধারা বর্ষণ করবেন। আমাদের ওপর আরও বেশি রহমতের চাদর টেনে দেবেন। আর যদি আমরা অকৃতজ্ঞ হই। ভালোর পথ ছেড়ে কালো, সুন্দর ছেড়ে অসুন্দরের দিকে এগিয়ে যাই তবে আমাদের ওপর ছড়িয়ে দেবেন অশান্তি-আজাবের লেলিহান চাদরটি। প্রভুর ভাষায়, ‘লাইন শাকারতুম, লা আজিদান্নাকুম, ওয়ালা ইন কাফারতুম ইন্না আজাবি লাশাদিদ। হে আমার প্রেমময় বান্দারা শোনো! তোমরা যদি শুকরিয়ার জিন্দেগি যাপন কর তবে আমি নিয়ামত বাড়িয়ে দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে জেনে রেখ! আমার শাস্তি বড় ভয়ংকর।’ সুরা ইবরাহিম, আয়াত ৭।

লেখক : খতিব, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর