বৃহস্পতিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

দাতব্যশিল্প : কভিড সাহায্য প্রতারণা

মধ্যমণিদের মধ্যে রয়েছেন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী, চিহ্নিত সন্ত্রাসী আর অবসরপ্রাপ্ত পাকিস্তানি আর্মি জেনারেল

প্রতিদিন ডেস্ক

দাতব্যশিল্প : কভিড সাহায্য প্রতারণা

বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে (চীন ছাড়া) ‘ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের কল্যাণে কাজ করছে’ ভঙ্গি নিয়ে মানবতাবাদীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের পর আত্মসাৎ করার কাহিনি ফাঁস করে দেয় এশিয়ার প্রথম ডিসইনফো ল্যাব নামক ডিজিটাল গবেষণা সংস্থা। এ প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য হচ্ছে ভুয়া সংবাদ আর প্রচারণার ব্যাপারগুলো জনসমক্ষে তুলে ধরা। এ পর্যায়ে তারা সম্প্রতি ইসলামের নাম ব্যবহার করে যারা প্রতারণায় লিপ্ত তাদের কুকীর্তি প্রকাশ করে এবং অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে সম্বল করে বাংলাদেশের একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও পাকিস্তানের অবসরপ্রাপ্ত এক লে. জেনারেল কী কী অনাচার করেছেন তার বর্ণনা দেয়। ‘দাতব্যশিল্প : কভিড সাহায্য প্রতারণা’ শীর্ষক সেই প্রতিবেদন ব্যাপক আলোড়ন তোলে। বাংলাদেশ প্রতিদিন ১৪ আগস্ট থেকে পর্যায়ক্রমে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করছে। আজ ষষ্ঠ কিস্তি উপস্থাপন করা হলো :

জামায়াত কতটা পিছিয়ে থাকবে : আগেই উল্লেখ করা হয়েছে তাদের কিছু সদস্য নিজ নিজ বোর্ডে দায়িত্ব পালন করছিল অধিকন্তু মুসলিম এইডের পাকিস্তান শাখার সঙ্গেও সম্পর্কিত। মুসলিম এইডের বিভিন্ন শাখা জামায়াতে ইসলামীর দাতব্য শাখা যেমন আল খিদমতের সঙ্গেও কাজ করে।

আল খিদমত ফাউন্ডেশন পাকিস্তানের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং জামায়াতে ইসলামীর দাতব্য শাখা হিসেবে অধিক পরিচিত। জামায়াতে ইসলামী ইউএসএর দাতব্য শাখা ‘আইএনএ’র জন্য আল খিদমত ফাউন্ডেশন স্বেচ্ছাসেবী ও ত্রাণসামগ্রী পাঠায়। অধিকন্তু এটা গাজালি ট্রাস্টের মতো অন্য দাতব্য সংস্থা, যা জামায়াতে ইসলামীর বলে বিশ্বাস করা হয়।

মুসলিম এইড ইউএসএ-ইউকে-পাকিস্তান এ ফ্রন্টগুলোর মধ্যে যে সহযোগী সম্পর্ক রয়েছে বিভিন্ন শাখাজুড়ে একই ব্যক্তিবর্গের দ্বারা ঘটিত পর্ষদ থেকেই তা স্পষ্ট। প্রকৃতপক্ষে এ ফ্রন্টগুলো ঘূর্ণায়মান দরজার মতো। যেখানে প্রধান কর্তাব্যক্তিরা এক জায়গা থেকে অন্যত্র গিয়ে থাকে। কমপক্ষে চার কর্তাব্যক্তি মুসলিম এইড ইউএসএ, ইউকে ও পাকিস্তানের পর্ষদে সাধারণভাবে উপস্থিত।

১. মানাজির আহসান মুসলিম এইড ইউএসএ পরিচালক হিসেবে ছিলেন ২০১৫-২০১৬ সালে। ২০১৭ সালে তিনি মুসলিম এইড পাকিস্তানের ট্রাস্টি পর্ষদের সদস্য হন। তারও আগে তিনি মুসলিম এইড ইউকের চেয়ারম্যান ছিলেন ২০১৪ সালে। মানাজির আহসান খোদ ১৯৮৯ সালে সালমান রুশদির বই বিতর্কসংশ্লিষ্ট যুক্তরাজ্য শাখার প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন।

মুসলিম এইড পাকিস্তান ১৪ সেপ্টেম্বর ২০০৫ সালে নিবন্ধিত হয় (কোম্পানি নম্বর ২৪৩৪০)। পাকিস্তানে এর শাখা নতুন হলেও মুসলিম এইড ইউএসএ ও মুসলিম এইড ইউকে আগে থেকে পাকিস্তানি শাখার সঙ্গে কাজ করে আসছিল এবং সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সক্রিয় ছিল।

পাকিস্তানের মুসলিম এইড শাখার সঙ্গে অন্যান্য দেশে পরিচালিত শাখার সম্পর্ক অদ্ভুত। অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো জ্যেষ্ঠ অফিসারদের ভাগাভাগি করে নেওয়ার পরও পাকিস্তানের ক্ষেত্র ছাড়া বিভিন্ন শাখা স্বাধীনভাবে তাদের অস্তিত্বের জানান দেয়।

কার জন্য দাতব্য? : মুসলিম এইডের ২০০৯ সালে প্রকাশিত অফিশিয়াল নিউজলেটারে বলা হয়, তারা অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল খালিদ লতিফ মুগলকে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়। এই জেনারেল পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন ৩৬ বছর। তিনি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর বিশ্লেষণ শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন যার দখলে রয়েছে বিভিন্ন সামরিক পদবি।

জেনারেল লতিফ মুগলসহ গঠিত মুসলিম এইড পাকিস্তানের ট্রাস্টি পরিষদে (২০১৭ সাল পর্যন্ত) ছিলেন ড. হাসান শোয়াইব মুরাদ, ড. তানভিরুল হাসান জুবাইরি, লে. জে. (অব.) খালিদ লতিফ মুগল, জাহিদ পারভেজ, ফারুক সালমান মুরাদ, সৈয়দ মোহাম্মদ তানজিম ওয়াস্তি ও মুহাম্মদ মানাজির আহসান। কুবে পাবলিশিংয়ের ব্যবস্থাপনায় আহসান ইসলামিক ফাউন্ডেশন ইউকের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন। তালেবান ও আল-কায়েদা সংযোগের অভিযোগে ওই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দুজন ট্রাস্টি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করছেন।

২. ফারুক সালমান মুরাদ (ইউকে ও পাক) একজন ব্রিটিশ অভিবাসী এবং মুসলিম এইড পাকিস্তানের একজন ট্রাস্টি। তিনি মুসলিম এইড ইন্টারন্যাশনালের একজন পরিচালক। এটা মুসলিম এইড ইউকের একটি অঙ্গ যা বর্তমানে নিষ্ক্রিয়। পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী সভাপতি খুররম মুরাদ হলেন এই ফারুক সালমান মুরাদের বাবা। এ থেকে বোঝা যায় এখানেও জামায়াত উত্তরাধিকার চলমান।

মুসলিম এইড ছাড়াও ফারুক মুরাদ কুবে পাবলিশিংয়ের সঙ্গে যুক্ত যার চেয়ারম্যান হলেন মানাজির আহসান। বস্তুত প্রতিষ্ঠাকালীন ২০০৬ সালে ফারুক মুরাদ কুবে পাবলিশিং লিমিটেডের পরিচালক ছিলেন।

৩. সৈয়দ মোহাম্মদ তানজিম ওয়াস্তি (ইউকে, পাক) বর্তমানে মুসলিম এইড পাকিস্তানের অন্যতম ট্রাস্টি পর্ষদ সদস্য। আগে ২০০৯ সালে তিনি মুসলিম এইড ইউকের সম্পাদক ছিলেন এবং আরও পরে মুসলিম এইড ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক ছিলেন ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত। এ সংস্থা বর্তমানে নিষ্ক্রিয়। এ প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ওয়াস্তি যুক্তরাজ্যের আরও তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। যার একটি এরই মধ্যে নিষ্ক্রিয় হয়েছে।

৪. স্যার ইকবাল সেকরাইন (ইউএসএ-ইউকে) ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে মুসলিম এইড ইউকের সচিব ছিলেন। যা মুসলিম এইড ইউএসএ চ্যাপ্টারে উল্লিখিত হয়েছে। তিনি ২০১২ সালে মুসলিম এইড ইউকের নির্বাহী পর্ষদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি হচ্ছেন অন্যতম ব্রিটিশ ইসলামপন্থি যার সালমান রুশদির বিরুদ্ধে দেওয়া ফতোয়ার পেছনে মদদ ছিল। তার সহকর্মী সালমান রুশদির প্রকাশিত পুস্তককেন্দ্রিক দাঙ্গার প্রধান সমন্বয়কারী ছিল।

সর্বশেষ খবর