ভুলত্রুটি জীবনের অংশ। মানুষ এর মাধ্যমে সঠিকটা জানতে পারে। নিজেকে সংশোধন করতে পারে। কোনটা ভালো কোনটা মন্দ তা অনুধাবন করতে পারে। মূলত সঠিক-ভুলের মিশেলে মানুষের জীবন গড়ে ওঠে। যে কারও দ্বারা ভুল হতে পারে। পৃথিবীর কেউ ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। তাই কারও ভুলে তার প্রতি ক্রোধ দেখানো ভীষণ নিন্দনীয়। এমনটি করা অনুচিত। এর বিপরীতে মানুষকে ক্ষমা করা উত্তম। এর মাধ্যমে মানুষের মান-মর্যাদা বাড়ে। এজন্যই কাউকে ক্ষমা করে একজন সাধারণ মানুষও হয়ে উঠতে পারে অসাধারণ। আল্লাহর কাছে নমনীয় বান্দা। এ ধরনের গুণাগুণ যাদের রয়েছে তারা আল্লাহর বিশেষ নিয়ামতপ্রাপ্ত। তাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট। কারণ আল্লাহ অত্যন্ত দয়ালু ও ক্ষমাশীল। তিনি সবাইকে ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। যে অন্যকে ক্ষমা করে তাকেও ভালোবাসেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে, মানুষকে ক্ষমা করে আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৩৪।
জীবন চলার পথে মানুষ অন্যের রূঢ় বা কটু কথাবার্তায় কষ্ট পায়। কারও অশোভনীয় আচার-আচরণে দুঃখিত হয়। যার ফলে দেখা যায় একজনের সঙ্গে অন্যজনের মতবিরোধ। অনেক সময় এ মতানৈক্য কেন্দ্র করে পরস্পরের মধ্যে আবার সংঘাত তৈরি হয়। এমনকি সংঘর্ষের মতো মারাত্মক ঘটনাও ঘটে। অথচ এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ মানুষকে আদেশ দিয়েছেন, ‘যদি তোমরা ভালো কিছু প্রকাশ কর কিংবা গোপন কর অথবা মন্দ ক্ষমা করে দাও তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, ক্ষমতাবান।’
সুরা নিসা, আয়াত ১৪৯।
ক্ষমাকারীকে আল্লাহ বিশেষভাবে পুরস্কার দেবেন। তার মানমর্যাদা অন্যদের থেকে বাড়িয়ে দেবেন। এমনকি যারা পরস্পরের মধ্যে বিরোধ নিষ্পন্নকারী তাদেরও আল্লাহ পুরস্কার দেবেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর মন্দের প্রতিফল মন্দ। এরপর যে ক্ষমা করে দেয় এবং আপস নিষ্পত্তি করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ জালিমদের পছন্দ করেন না।’ সুরা শুরা, আয়াত ৪০।
আমাদের অনেকে মনে করেন ক্ষমা করলে মর্যাদা কমে যায়। নিজেকে ছোট করতে হয়। যার কারণে মানসম্মান কমতে থাকে। অথচ ক্ষমা করলে কারও মর্যাদা কমে না। বরং ক্ষমাশীল ব্যক্তির মর্যাদা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সদকা করলে সম্পদের ঘাটতি হয় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনীত হলে তিনি তার মর্যাদা আরও বাড়িয়ে দেন।’ মুসলিম।
লেখক : মুহাদ্দিস, খাদিমুল ইসলাম মাদরাসা, কামরাঙ্গীর চর ঢাকা।